Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার সজাগ আছে: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:২৭

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার সজাগ আছে: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গ্রাফিক্স: সাম্প্রতিক দেশকাল

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের নবম গভর্নর ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) মহাপরিচালক, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্রের (সিরডাপ) গবেষণাপ্রধান এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তিনি অর্থনীতি, উন্নয়ন এবং তার কর্মময় জীবনের ওপর ১০০টির অধিক নিবন্ধ ও বই প্রকাশ করেছেন।

বর্তমানে তিনি অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বরত। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ দেশের অর্থ ও বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-এম ডি হোসাইন।

দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েই চলছে; কিন্তু দ্রব্যমূল্য কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে কী কী করা দরকার, সরকার সে বিষয়ে সজাগ আছে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম কমানোর জন্য পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের শুল্ক কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আবেদন করেছিল। এনবিআর পেঁয়াজ ও আলুর শুল্ক কমিয়েছে। এ দুটি পণ্যের দাম আগের চেয়ে কমেছে। নিত্যপণ্যের দাম কমাতে এর বাইরেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিয়মিত বৈঠক করছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছে। তবে অনেক সিদ্ধান্তই অন্য মন্ত্রণালয়, বিভাগের সঙ্গে জড়িত; ফলে কিছুটা সময় লাগছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার পরিস্থিতি এবং সরবরাহ তদারক ও পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে সরকার।

‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ কীভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম কমাবে?

টাস্কফোর্সের সদস্যরা নিয়মিত বিভিন্ন বাজার, আড়ত, গোডাউন, কোল্ড স্টোরেজ ও সাপ্লাই চেইনের অন্যান্য স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারক করবে। পণ্য উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্যে যেন দামের পার্থক্য ন্যূনতম থাকে, তা টাস্কফোর্স নিশ্চিত করবে ও সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে। টাস্কফোর্স প্রতিদিনের মনিটরিং শেষে একটি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠাবে। ভোক্তা অধিদপ্তর বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেবে। এর পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেবে।

দ্রব্যমূল্য কমছে না কেন?

দ্রব্যমূল্য কমাতে ব্যবসায়ীদের বড় ভূমিকা রয়েছে। এজন্য ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে নয়, দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে। বিগত দিনে ‘প্রবৃদ্ধি’ এবং মাথাপিছু আয়ের অনেক গল্প মানুষকে শোনানো হয়েছে; কিন্তু ঢাকা শহর থেকে বের হয়ে গ্রামাঞ্চলে গেলে সেই ‘প্রবৃদ্ধি’ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থের অপচয় হয়েছে। যেসব প্রকল্পের দরকার ছিল না তা নেওয়া হয়েছে। পাঁচ টাকার কাজ অবৈধ সুবিধা দিতে দশ টাকায় দেওয়া হয়েছে। 

রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকার কী ধরনের কাজ করছে?

রপ্তানি আয় বাড়তে সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য রপ্তানির তথ্য শিগগিরই সমন্বয় করা হবে। রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণের পর একটি প্রক্রিয়াও তৈরি করা হবে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইবিপি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রপ্তানি তথ্যের মধ্যে যথেষ্ট গরমিল ছিল। ইবিপি রপ্তানির তথ্য সমন্বয় করছে এবং একটি প্রক্রিয়াও তৈরি করছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের এএসওয়াইসিইউডিএর রপ্তানি তথ্যের মধ্যে যে ফারাক রয়েছে, চূড়ান্ত তথ্যে তা সমন্বয় করা হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করায় অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়ছে?

বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণার সময় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার রীতি বেশ পুরনো। এবারের অন্তর্বর্তী সরকার সেই বিধি ও রীতি বাতিল করেছে। এখান থেকে সরকার যে টাকা আনতে পারে, সে টাকা দিয়ে যে সরকারের খুব বেশি কিছু এগোয় তা নয়। বরং মূল্যবোধটার অবক্ষয় ঘটে। অর্থপাচারের বিরুদ্ধেও কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ব্যাংকের সংকট দূর করতে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?

ব্যাংকের সংকট দূর করতে ব্যাংকমালিক ও ব্যবস্থাপনাকে বর্তমান পরিস্থিতিতে যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে ঋণ প্রদান নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে অতীতের মতো কোনো বিচ্যুতি না হয়। এ ছাড়া ব্যাংকের মালিকদের সিএমএসএমইর মতো অন্তর্ভুক্তিমূলক ঋণ প্রদান নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছি। যাতে ঋণখেলাপির মতো ব্যক্তিরা ব্যাংক থেকে নির্বিঘ্নে ঋণ না পায়। ব্যাকিং কার্যক্রমে সুশাসনের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। ঋণ ও তারল্য পরিস্থিতির সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।

ব্যাংকিং খাত কীভাবে সংস্কার করা হবে?

ব্যাংকিং খাত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি পরিবর্তন করা হবে। দেশের আর্থিক খাতের সংস্কার ও বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে কারিগরি সহায়তা চেয়েছে সরকার। আমরা তাদের সঙ্গে দেশের আর্থিক খাতের সংস্কারে সহায়তার বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমরা তাদের জানিয়েছি, ইতোমধ্যে ব্যাংকিং ও রাজস্ব খাতের সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অর্থনীতিতে বিভিন্ন সংস্কার-পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সম্পদ আহরণ করা অপরিহার্য। আমরা আমাদের স্থানীয় সম্পদ যথাসম্ভব ব্যবহার করব, তবে নির্দিষ্ট খাতের জন্য আমাদের বিদেশি সহায়তার প্রয়োজন হবে। ব্যাংকিং খাতে আমরা যে সংস্কার করছি; তার জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকেও সহায়তা পাব।

আর্থিক খাতে স্বচ্ছতার জন্য কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?

আমরা কিছুদিনের জন্য এসেছি। এরমধ্যে একটা মেসেজ দিয়ে যেতে চাই যে, অন্যায় করে পার পাওয়া যাবে না। ব্যক্তিগত বা সরকারি অর্থ যেটাই হোক, অপচয় করা ঠিক নয়। অন্যায় করে পার পাওয়া যায়-এ সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকলে সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে না। আমরা অর্থের অপচয় করতে চাই না। অনেকে অনেক অর্থের অপচয় করেছেন। জবাবদিহিতার বাইরে থেকেছেন। আমরা এ অবস্থা থেকে বের হতে চাই। 

প্রতিটি কোম্পানির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জানতে চায়-তোমাদের দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ কেমন? আমরা তাদের আশ্বস্ত করতে চাই-বাংলাদেশের সম্ভাবনা প্রচুর। আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা এলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫