Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা উচিত: নাসের শাহরিয়ার জাহেদী

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:১৫

ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা উচিত: নাসের শাহরিয়ার জাহেদী

মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। ফাইল ছবি

প্রয়াত শামস্-উল-হুদাকে দেখে ফুটবলে আসা। ২০১১ সালে যশোরে শামস্-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠিত করেন রেডিয়েন্ট ফার্মার চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি এই একাডেমিতে বিনা খরচে শেখানো হয় ফুটবল। এই প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক ফুটবলার দেশের ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ক্লাবে খেলছেন। ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা এ সংগঠক ঝিনাইদহে ক্রিকেট একাডেমিও প্রতিষ্ঠা করেন।

ফুটবলের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা আছে বলে দেশের ফুটবলের চিত্রটা বদলে দিতে চান। সেই জন্য ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে লড়তে চান তিনি। কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হলে ফুটবল উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখতে চান, তা নিয়ে কথা বলেছেন নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।

প্রশ্ন : ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও আড়ালে ছিলেন। কখন মনে হয়েছে বাফুফেতে কাজ করার সময় হয়েছে?

নাসের শাহরিয়ার জাহেদী: যখন ফেডারেশনের নির্বাচন সামনে এলো, আমাকে কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী বললেন, একটু সাংগঠনিকভাবে আসতে। আমি আগে কোনো ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। অনেকে বলার পর দেখলাম, ফেডারেশনে যারা আসতে চান, সবাই ফুটবলের অন্তঃপ্রাণ। আমার থেকে ফুটবলে অনেক বেশি অবদান তাদের। মনে হলো, তাদের সঙ্গে যুক্ত হলে হয়তো এ দেশের ফুটবলকে আরও এগিয়ে নিতে কিছু অবদান রাখা যাবে।

প্রশ্ন : রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেশ সুপরিচিত আপনি। ফুটবলে নিজেকে কীভাবে দেখতে চান?

নাসের শাহরিয়ার জাহেদী: রাজনীতি ও সমাজের কার্যনীতি একটা আরেকটা থেকে খুব একটা আলাদা নয়। সমাজকে পরিশুদ্ধ করতে গেলে ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আসবে। তবে আমাদের উচিত, ক্রীড়াঙ্গনকে যতদূর সম্ভব সক্রিয় রাজনৈতিক পরিচয় থেকে দূরে রাখা। আমরা যখন ক্রীড়াঙ্গনে আসব, তখন শুধু স্পোর্টস নিয়েই কথা বলব। আমাদের রাজনৈতিক পরিচয়টা যেন ক্রীড়াকে, সমাজকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে। যদি সম্মানিত কাউন্সিলররা আমাকে নির্বাচিত করেন, তাহলে নির্বাহী পরিষদে আরও যারা থাকবেন, তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। সবাই মিলেমিশে ফুটবলকে যতদূর পারি এগিয়ে নিয়ে যাব।

প্রশ্ন: অনেক করপোরেট ব্যক্তিত্ব আছেন, যারা ফুটবলের অন্তপ্রাণ। কিন্তু বাফুফেকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণার কারণে তারা আসতে চান না। এই বিষয়গুলো আপনার মাথায় কাজ করেছে কিনা?

নাসের শাহরিয়ার জাহেদী: বাফুফের নেতিবাচক বিষয় নিয়ে অনেকেই আমাকে বলেছেন। বিষয়টি হলো ক্রীড়াকে তো সম্প্রসারিত করতে হবে। ফুটবলে জাগরণ তৈরি করতে হবে। এখন সেখানে যদি কিছু নেতিবাচক কথা শোনা যায়, দূরে থেকে তো সেটির সমাধান হবে না। ভেতরে আসতে হবে। যদি ১০ জন এই মন নিয়ে আসে, এখানে আমরা কোনো সংকীর্ণতা রাখব না। সেই ১০ জন চেষ্টা করলে সংকীর্ণতা দূর হবে। আমি যদি দূর থেকে দেখি আর সমালোচনা করি, তাহলে তো সেটি ভালো হবে না। নিশ্চয়ই সবার চাওয়া, এই জায়গাকে পরিশুদ্ধ, সুন্দর একটা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত করা। এটা যখন চাইবেন, তখন আর নেতিবাচক আলোচনা থাকবে না।

প্রশ্ন: বাফুফেতে যেতে হলে ভোটে জিততে হবে। কাউন্সিলরদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

নাসের শাহরিয়ার জাহেদী: প্রার্থী হওয়ার আগে দু-চারজন ছাড়া কোনো কাউন্সিলরের সঙ্গে জানাশোনা ছিল না। তারাও আমাকে চিনতেন কিনা, আমার ধারণা নেই। কিন্তু প্রার্থী হওয়ার পর কেউ ফোন করছেন, কারও সঙ্গে আমার দেখা হচ্ছে। সবাই খুব উৎসাহিত এবং সবাই আমাক স্বাগত জানিয়েছেন। আমি মনে করি, নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, এই যে কাউন্সিলররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাকে গ্রহণ করছেন, এটি আমার বড় পাওয়া। জয়ী হই বা না হই, এই পরিচিতিটা ভবিষ্যতে একসঙ্গে কাজ করার সুন্দর ক্ষেত্র তৈরি করবে। আশা করি, কাউন্সিলররা আমাকে নির্বাচিত করবেন।

প্রশ্ন: সহ-সভাপতি নির্বাচিত হলে বাংলাদেশের ফুটবলের কোন বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে চান?

নাসের শাহরিয়ার জাহেদী: আমি দুটি জিনিসের প্রতি পরামর্শ রাখব; একটা হলো– ফুটবলের আজকে দৈন্যদশার মূল কারণ হলো জেলা, উপজেলা পর্যায়ে খেলার মাঠ নেই। মাঠ না হলে ফুটবলটা দাঁড়াবে কোথায়? প্রতিটি ডিএফএতে যেন একটা করে ফুটবল স্টেডিয়াম আলাদাভাবে তৈরি করতে পারি, সে দিকে নজর দিতে হবে। ফেডারেশন, সরকার, উদ্যোক্তা, করপোরেট সেক্টরগুলোকে মিলেমিশে চেষ্টা করতে হবে। আমার মনে হয়, এককভাবে সরকারও পারবে না। ফেডারেশনেরও সামর্থ্য সীমিত। তবে ফেডারেশন যেটি করতে পারে, সবাইকে একসুতায় গেঁথে আনা। আরেকটা আমার পরামর্শ থাকবে, আমরা যেন সব ক্রীড়াঙ্গন আমাদের দল-মত, ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে রাখতে পারি।

প্রশ্ন: ফুটবলের সেই জনপ্রিয়তা এখন আর নেই। হারানো গৌরব ফেরাতে কী ভূমিকা রাখতে চান?

নাসের শাহরিয়ার জাহেদী: ফুটবলের হারানো গৌরব ফেরাতে হলে তৃণমূলে এই খেলাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। খেলার সুযোগ করে দিতে হবে, প্রতিযোগিতা আনতে হবে, মানুষ সেখানে আকর্ষিত হবে। যশোর, ঝিনাইদহে আমি যে টুর্নামেন্টগুলো আগে আয়োজন করেছিলাম, প্রতিটি টুর্নামেন্টে স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ ছিল। খেলা হলে মানুষ দেখতে আসে। খেলা যদি না হয়, তাহলে মানুষকে পাবেন কী করে। সুতরাং বিভিন্ন ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে, স্পন্সরদের আনতে হবে, সব থেকে বড় কথা কিশোর, তরুণদের কাছে খেলার মাঠ উপহার দিতে হবে।

প্রশ্ন: ফুটবলে বড় সংকট স্পন্সর। এই সংকট কীভাবে দূর করতে চান?

নাসের শাহরিয়ার জাহেদী: করপোরেট সেক্টর থেকে যখন একটা স্পন্সর আসে, সেও চাইবে যে টুর্নামেন্টে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, সেটা যেন প্রাণবন্ত হয়। মানুষ খেলা দেখে, মিডিয়া প্রচার করে। যখন এটাকে প্রাণবন্ত করা যাবে, তখন একজন স্পন্সরকে এটা করতে দেখলে, আরেকজন এগিয়ে আসবে।

প্রশ্ন: আপনি নিজেও করপোরেট ব্যক্তিত্ব। কীভাবে কাজ করলে দেশের ফুটবল বাণিজ্যিকীকরণ হবে?

নাসের শাহরিয়ার জাহেদী: বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে পৃথিবীর বড় বড় ক্লাবগুলো চলছে। বাংলাদেশে যখন ফুটবলকে আরও উজ্জীবিত করতে পারবেন, তখনই আপনি দেখবেন করপোরেট সেক্টর এগিয়ে আসছে। তার ফল হিসেবে এটির একটা বাণিজ্যিক মূল্য তখন দাঁড়িয়ে যাবে। 

প্রশ্ন: কয়েকটি ছাড়া দেশের ক্লাবগুলো ব্যক্তির ডোনেশনের ওপর নির্ভরশীল। এতে ক্লাবগুলোকে পড়তে হয় আর্থিক সংকটে। 

নাসের শাহরিয়ার জাহেদী: একজন ব্যক্তি বা একটি প্রতিষ্ঠান যতই সম্পদশালী হোক, যতই ক্ষমতাশীল হোক, আপনাকে ভালো কিছু করতে গেলে সম্মিলিতভাবেই করতে হবে। এককভাবে কিছু করতে গেলে সীমাবদ্ধতা থাকে, যেটা আমরা এখন লক্ষ করছি। আপনি যদি এই সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণ করতে চান, সমষ্টিগতভাবে উত্তরণ করতে হবে। আরেকটা বিষয় হলো ক্লাবকে একটা করপোরেট কাঠামোয় নিয়ে আসতে হবে।

প্রশ্ন: আপনি নিজে নতুন কোনো ক্লাব চালু করবেন কিনা?

নাসের শাহরিয়ার জাহেদী: যশোর একাডেমিতে একটা বড় ভবন আমরা তৈরি করেছি। যেখানে ২৪০ জন ছাত্র থাকছে। একাডেমিতে যারা আমার কোচ পরিচালনায় আছেন, তারা আমাকে বলেছেন, একটা নতুন দল করলে ভালো হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যদি ঢাকায় কোনো ক্লাব আত্মপ্রকাশ করাতে চাই, সেজন্য সবার আগে প্রয়োজন একটা মাঠ। সেটার ব্যবস্থা আমরা খানিকটা করেছি। আশা করি, বছর দু-একের ভেতরে আমরা একটি ক্লাব গড়ে তুলব।

 [সাক্ষাৎকার সূত্র: সমকাল।]

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫