সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্বে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে তরুণরা: আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া

এম ডি হোসাইন
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:০৫

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ফাইল ছবি
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সূচনার পর তিনি সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম ডি হোসাইন।
প্রশ্ন: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারুণ্যের শক্তিকে কীভাবে কাজে লাগাবেন?
আসিফ মাহমুদ: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্বে আসার জন্য তরুণরা প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারুণ্যের শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে আমাদের সরকার এক কোটি ৮০ লাখ বেকারকে সহযোগিতা করবে। পার্ট টাইম ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে ট্রাফিক পুলিশের সহায়ক হিসেবে নিয়োগ দেবে সরকার। সরকারের সব কাজের জায়গায় তরুণদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। উদ্যোক্তা তৈরি হতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ঋণ দেবে। সরকার ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রদত্ত প্রশিক্ষণগুলো আধুনিকায়ন করে যুগোপযোগী করা হবে। এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ওপর ট্রেনিং প্রজেক্ট চালু করা হবে।
প্রশ্ন: তরুণদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকারের কী পরিকল্পনা আছে?
আসিফ মাহমুদ: আগামী দুই বছরে পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে যারা যুক্ত নেই, এমন ৯ লাখ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার একটি কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা সাংবিধানিক ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে এমন একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই, যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত হবে, সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে, কেউ তার লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ ও ভাষার কারণে নিগৃহীত ও বঞ্চিত হবেন না। এ ক্ষেত্রে অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করবে আজকের ছাত্র-তরুণ-যুবসমাজ। তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যেই কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে যারা ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর দেশের আইন-শৃঙ্খলা, ট্রাফিক সবকিছুর দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তাদের সরকারের সকল কার্যক্রমে যুক্ত করা আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। ট্রাফিক কার্যক্রমের দায়িত্ব নেওয়া শিক্ষার্থীদের আরও উন্নত প্রশিক্ষণের আয়োজন করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগানোর জন্য সহায়ক পুলিশ হিসেবে তাদের নিয়োগ কার্যক্রম চলমান।
প্রশ্ন: জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে অংশ নেওয়া তরুণদের নিয়ে কী ভাবছেন?
আসিফ মাহমুদ: এই তরুণদের নিয়ে সমগ্র পৃথিবী নতুন করে ভাবছে, অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের তরুণরা এই জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে একটি নতুন পথ দেখিয়েছে। তারুণ্যের ভেতরে যে উদ্যম, স্পৃহা ও ইচ্ছাশক্তি রয়েছে এসব গুণাবলিকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি, অবশ্যই বাংলাদেশ একটি ভালো জায়গায় যাবে।
প্রশ্ন: বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার পরিবেশ কেমন হবে?
আসিফ মাহমুদ: বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জ্ঞান এবং প্রজ্ঞাকে দেশ পুনর্গঠনের পলিসি লেভেলে কাজে লাগাতে হবে। দেশ পুনর্গঠনে সংস্কার কার্য চলমান থাকবে। আমরা এমন ভঙ্গুর সময়ে রাষ্ট্রের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি, যখন বিগত সরকার ১৬ বছর ধরে লুটপাটের রাজনীতি করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। দেশ পুনর্গঠনে আমরা আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি। জনগণের আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেকারত্বের সমস্যার সমাধানে আমরা কাজ করছি। যুব সমাজকে দক্ষ করতে এবং ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সুবিধা নিতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাহায্য কামনা করছি।
প্রশ্ন: তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা কীভাবে মোকাবিলা করছেন?
আসিফ মাহমুদ: শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণের মাধ্যমে শ্রমিক অসন্তোষ দূর করায় তৈরি পোশাক শিল্পে এখন কর্মপরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণের মাধ্যমে তাদের অসন্তোষ দূর করতে সক্ষম হয়েছি। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে এখন কর্মপরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে। এই আন্দোলনে ১০০ জনের অধিক শ্রমিক প্রাণ দিয়েছেন। এখনো অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসার দায়ভার সরকার বহন করেছে। ট্রানজেকশন পিরিয়ড খুব সহজ নয়। এ সময় বিভিন্ন ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতে শ্রমিকদের মধ্যে কিছু অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণের মাধ্যমে তাদের অসন্তোষ দূর করতে সক্ষম হয়েছি। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে এখন কর্মপরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের দায়িত্ব এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে মন্ত্রণালয় থেকে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রশ্ন: ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার ভূমিকা কী?
আসিফ মাহমুদ: ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে একজন খেলোয়াড় হিসেবে যতটা নিরাপত্তা দেওয়া দরকার তা দেওয়া হবে। তবে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বিষয়টি জনগণের সামনে স্পষ্ট করতে হবে। সাকিব আল হাসানের পরিচয় দুটি, এটি মনে রাখতে হবে। তিনি একজন ক্রিকেট খেলোয়াড়। সে হিসেবে তার যতটা নিরাপত্তা দেওয়া দরকার, সেটা দেওয়া হবে। অন্যদিকে তিনি একজন রাজনীতিবিদও। আওয়ামী লীগের হয়ে রাজনীতি করেছেন, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। রাষ্ট্রের জায়গা থেকে রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিককেই নিরাপত্তা দিতে বাধ্য এবং সেটা আমরা অবশ্যই করব। জনগণের যদি কোথাও ক্ষোভ থাকে, তাহলে সেটা আমাকে রিডিউস করতে (কমাতে) হবে আমার কথা দিয়ে। আমার মনে হয়, তার নিজের জায়গা পরিষ্কার করা প্রয়োজন, তার যে রাজনৈতিক অবস্থান, তা নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। অলরেডি মাশরাফি বিন মতর্‚জা কথা বলেছেন। জনগণের পক্ষ থেকে যদি নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে, সেটা কেউ কাউকে আসলে দিতে পারবে না। শেখ হাসিনাকেও নিরাপত্তা দেওয়া যায়নি, তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। সে জায়গায় রাজনৈতিক বিষয়টি পরিষ্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করি।
প্রশ্ন: সাকিব আল হাসানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা আছে কি না?
আসিফ মাহমুদ: সাকিব আল হাসানের দেশে ফিরতে এবং পরবর্তী সময়ে দেশ ত্যাগেও কোনো আইনি বাধা দেখছি না। সাকিবের দেশে আসা কিংবা বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে তো কোনো বাধা থাকারও কথা নয়। একজন ক্রিকেটার, তিনি খেলবেন এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। আসার ব্যাপারে তো আমি কোনো বাধা দেখি না। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাকিবের বিপক্ষে হত্যা মামলা হয়েছে, যে কারণে সাকিব তার নিরাপত্তা নিয়ে বরাবরই শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। কোনো আইনগত বিষয় থাকলে সেটা আইনের মতো করেই চলবে।