Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

ভাতা পাবেন শুধু প্রকৃত দরিদ্ররা: শারমিন এস মুরশিদ

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:৩৭

ভাতা পাবেন শুধু প্রকৃত দরিদ্ররা: শারমিন এস মুরশিদ

উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। তিনি নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন ধরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পাশাপাশি মুক্ত গণতন্ত্র ও দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার পক্ষে শারমিন মুরশিদ কথা বলে আসছেন। তিনি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘উত্তরসূরী’-এর মহাসচিব। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ‘মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’র সদস্য ছিলেন। শারমিন মুরশিদের বাবা খান সারওয়ার মুরশিদ শিক্ষাবিদ, কূটনীতিক ও বুদ্ধিজীবী ছিলেন। শারমিন মুরশিদের মা নূরজাহান মুরশিদ স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে শারমিন মুরশিদের সঙ্গে সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকালের পক্ষে কথা বলেছেন এম ডি হোসাইন।

জুলাইয়ের পর থেকে সামাজিক নিরাপত্তার বয়স্ক, বিধবাসহ বিভিন্ন ভাতা বন্ধ রয়েছে। এতে গরিব মানুষ বিপাকে পড়েছে। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন?

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় কোনো ভাতা বন্ধ করা হয়নি। ভাতাভোগীদের তালিকা যাচাই-বাছাই চলছে। কারণ তালিকা নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত হতদরিদ্রদের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় সচ্ছল কর্মী-সমর্থকদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন তারা ভাতাও তুলেছে। এখন শুধু প্রকৃত দরিদ্রদের তালিকা চূড়ান্ত করে তাদেরই ভাতা দেওয়া হবে। শিগগিরই তাদের ভাতা দেওয়া শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

ভাতাভোগীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করতে কেন এত দেরি হচ্ছে?

আমরা নির্ভুলভাবে একটি তালিকা প্রস্তুত করেছি, যাতে সঠিক মানুষ উপকৃত হয়। এ জন্য একটু দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন তালিকা তৈরি করার সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারের বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ জড়িত। যেমন- নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই সবার মধ্যে সমন্বয় করে তালিকা চূড়ান্ত করতে সময় লাগছে।

জনপ্রতিনিধিরা ভাতা কার্যক্রম সমন্বয় করেন। অথচ গত ৫ আগস্টের অনেকেই অনুপস্থিত। এই জটিলতা কীভাবে কাটবে?

প্রতিটি ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে কমিটি রয়েছে। কমিটিতে জনপ্রতিনিধিকে সভাপতি হিসেবে রাখা হয়। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর অনেক জনপ্রতিনিধি অনুপস্থিত রয়েছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে এ কমিটি না থাকলে বিকল্প কী হতে পারে, তা নীতিমালায় বলা আছে। সেখানে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সভাপতি করা আছে। এ জন্যই উপকারভোগীর তালিকা করতে দেরি হচ্ছে। অন্যদিকে কয়েকটি জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) ছিল না। ওই জেলাগুলোতেও ভাতাভোগীর তালিকা তৈরিতে বিলম্ব হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে শিগগির এসব জটিলতা কেটে যাবে। 

বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়ে পরিকল্পনা কী?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে আক্রান্ত হয়েছে। অনেকে তাদের কর্মজীবন হারিয়ে ফেলেছে। সেখানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি নৈতিক দায়িত্ব আছে। প্রতিটি হাসপাতাল থেকে নিবন্ধিত রোগী যারা আছে, তাদের তালিকা আমরা নেব। তার ভিত্তিতে আমরা তথ্যভান্ডার ও ডেমোগ্রাফিক ম্যাপ করব। সে অনুযায়ী, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অ্যাকশন প্ল্যান করব। তাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করব। এই শিক্ষার্থীরা সুস্থ না থাকলে, এরা পুনর্বাসিত না হলে এই দেশ সুস্থ থাকবে না। আমরা কেউ সুস্থ থাকব না। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় যত প্রকল্প আছে, প্রগ্রাম আছে। সেগুলো আমরা এই শিক্ষার্থীদের ওপরে ফোকাস করে সাজাতে যাচ্ছি। যাতে আমাদের কোথাও আটকাতে না হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত-নিহতদের জন্য কী করছেন?

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা ন্যায্যতা পাননি। তাদের দেশ গড়ার কাজে লাগানো হয়নি, যা ছিল অন্যায়। কিন্তু ২০২৪-এর আন্দোলনে আহত-নিহতদের বেলায় জাতির বীর সন্তানদের চিহ্নিত করে মর্যাদা দেওয়া হবে। একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাহক বর্তমান ২৪-এর যোদ্ধারা, তারা মুক্তিযুদ্ধের ধারা। একেবারে স্বচ্ছভাবে তালিকা করা হচ্ছে। যার কারণে কিছুটা সময় লাগছে। শহীদ আবু সাঈদ আমাদের একটা সিম্বল। কারণ তিনি সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। আমরা সবার কাছে পৌঁছাতে চাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের পুনর্বাসিত করা হবে। জুলাই-আগস্টে নিহত-আহত এবং যারা জয়ী হয়ে জীবন নিয়ে ফিরে এসেছেন, তাদের সবার পাশে আমরা আছি। আবু সাঈদ বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে সাহসের প্রতীক হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন। জুলাই-আগস্টকে ভুলে গেলেও শহীদ পরিবারগুলোর কথা কোনো দিন ভুলতে পারবে না কেউ। 

শিশুদের জন্য কী উদ্যোগ রয়েছে?

আমরা এমন একটি দেশ চাই যে দেশ হবে শিশুবান্ধব। এমন একটি সমাজ চাই যে সমাজ হবে শিশুর মুক্ত চিন্তার উৎকৃষ্টতম স্থান। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় শিশুদের জন্য থাকবে খেলাধুলার স্থান, বেড়ে ওঠার নির্মল পরিবেশ। আমরা চাই প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় থাকবে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ। আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক মুক্ত চিন্তার সমাজ চাই। আমাদের বর্তমান সভ্যতা আসলে বিজ্ঞানভিত্তিক সভ্যতা। যে সভ্যতায় উদ্ভাবিত সব প্রযুক্তি এই বৈজ্ঞানিক নিয়ম-কানুনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের এই শিশুরাই ছিল অগ্রভাগের সৈন্য। এই শিশুরাই এনে দিয়েছে নতুন এক বাংলাদেশ। তাদের একটি সুন্দর নিরাপদ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে, মানুষকে সম্মান দিতে হবে। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক, দেশ সংস্কারক ও উদ্যোক্তা হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫