Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে দেশের পরিণতি হবে ভয়াবহ: মির্জা ফখরুল

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:০৮

অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে দেশের পরিণতি হবে ভয়াবহ: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। এর পর থেকেই নানা বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও নানা বিষয়ে মন্তব্য করছে। রাজনৈতিক দলগুলো চাচ্ছে নির্বাচনী রোডম্যাপ। তবে অন্তর্বর্তী সরকার মৌলিক বিষয়ে সংস্কারের পর নির্বাচনের কথা বলছে। সম্প্রতি গঠন করা হয়েছে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম ও রাজনীতির ভবিষ্যৎ রূপরেখার বিষয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম ডি হোসাইন।

হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন কীভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়? 

হাসিনা সরকার দেশটাকে শেষ করে দিয়ে গেছে। কোথাও কিছু অবশিষ্ট রাখেনি। অর্থনীতি ফোকলা করে দিয়েছে। ঘুষ-দুর্নীতিতে সমাজটা শেষ করে দিয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সবাইকে, বিশেষ করে ছাত্রসমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে। এখন চিন্তা করতে হবে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে তৈরি করার। যেখানে সবার সমান অধিকার থাকবে, থাকবে না কোনো বৈষম্য। এটি হবে একটি নতুন বাংলাদেশ।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নানা মিথ্যা তথ্য প্রচার হচ্ছে, এ বিষয়ে বিএনপি কী ভাবছে? 

ভারতের পত্রপত্রিকায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখানো হচ্ছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটছে না। এ জন্য আমাদের আনন্দে থাকার কোনো অবকাশ নেই যে আমরা জিতে গেছি, সব হয়ে গেছে। আমাদের মাথার ওপরে সেই খড়্গ এখনো আছে। তারা খুব চেষ্টা করছে আবার অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার। এর জন্য সজাগ থাকতে হবে, কোনো রকমের হঠকারিতা, বিশৃঙ্খলা যেন কেউ করতে না পারে। সীমান্তের ওই পারে ফ্যাসিস্ট বসে আছে। ওখান থেকে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করা হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে একেকটা ঘটনা ঘটিয়ে তারা পৃথিবীকে দেখাতে চায় বাংলাদেশ মৌলবাদীদের দেশ হয়ে গেছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে নির্যাতন করা হচ্ছে। এগুলো পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে। এগুলো প্রতিরোধে আমরা সজাগ আছি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেষ, কিন্তু এখন আবার ছাত্ররা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে কেন?

ঢাকায় ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনায় আমি মর্মাহত। যখন ছাত্ররা এত বড় বিজয় অর্জন করল, ফ্যাসিস্টকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিল, পৃথিবীতে ইতিহাস সৃষ্টি করল, সেই সময়ে ছেলেরা কলেজে-কলেজে মারামারি করছে, এটা দেখে খুব কষ্ট পাই। সোহরাওয়ার্দী কলেজ-মোল্লা কলেজের ছাত্ররা মারামারি করে রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে- এটা তো কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা একটা চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র।

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ধ্বংস করেছে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিন মাস খুব বড় সময় না। তবুও আমি মনে করি, এই সময়ের মধ্যে তারা নির্বাচন কমিশন নতুন করে গঠন করেছে। সংবিধান সংস্কারসহ বেশ কিছু বিষয়ে কমিশন করা হয়েছে। তারা কাজগুলো শুরু করেছে। আমরা এই সংস্কারের সময়টুকু তাদের দিতে চাই। তবে এই সরকারের কাছে বড় চাওয়া অতি দ্রুত কিছু জরুরি সংস্কার কাজ করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুসারে একটি পার্লামেন্ট তৈরি হবে। সেই পার্লামেন্টের মাধ্যমে একটি সরকার হবে। তারাই আরো প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করবে।

এই সরকার ব্যর্থ হলে দেশের পরিণতি কী হতে পারে?

শেখ হাসিনার শাসনের ১৫ বছর পর বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থার উন্নতির জন্য এবং আরেকটি স্বৈরাচারী শাসনের উত্থান ঠেকানোর এমন একটি সুযোগ এসেছে, যা একটি প্রজšে§ একবারই আসে। অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে দেশের পরিণতি হবে ভয়াবহ। তবে ফ্যাসিবাদের পতন হলেও দেশ সংকটমুক্ত হয়নি। মানুষের মধ্যে এখনো নানা আশঙ্কা আছে। এই সরকার ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসার সুযোগ পেলে দেশে নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হবে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি বলেছেন, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এই আন্দোলনের ধরন কেমন হবে?

আমরা তো এখনো আন্দোলনের মধ্যে আছি। নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছি। আমরা সম্মেলন করছি, রাস্তায় আছি, সমাবেশ করছি। এটা আন্দোলনের অংশ। তবে আন্দোলন করছি মানেই সরকারের বিরোধিতা করছি না। বিরোধিতা করার সুযোগ এখন নেই। আমরা মনে করি, এখন তাদের সহযোগিতা করার সময়। এই সরকারকে আমরা ততক্ষণ সহযোগিতা করব, যতক্ষণ পর্যন্ত মনে করব তারা জনগণের পক্ষেই আছে। এ ছাড়া আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, এই সরকারের ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা যদি ফেল করে গোটা জাতি ফেল করবে। এই কারণে আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা আরো বাড়ানো দরকার। তাহলে দূরত্বটা দূর হবে। কাজ করতে তাদেরও সুবিধা হবে, আমাদেরও।

ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কেমন হবে এবং বিদেশনীতি কী হবে? 

ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ হবে বলে আশা করি। তবে ভারতকেও এগিয়ে আসতে হবে। ভারতের সঙ্গে যৌথ নদীর পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল বিষয় একটি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চাই এবং রাখব। আর ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী দেশ- এটাই বাস্তবতা। স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সেভাবেই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা হবে। তবে সেটা অবশ্যই দেশের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে নয়।

সরকার পতনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন, হামলা, গণপিটুনিসহ যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোর বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?

সরকার পরিবর্তনের পর কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে। যদিও এসব ঘটনা সাম্প্রদায়িক নয়, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। আওয়ামী লীগের ওপর মানুষের ঘৃণা, ক্ষোভ থেকে এসব ঘটনা ঘটেছে। তবে এগুলোকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে আওয়ামী লীগের দোসররা। বিএনপি অত্যাচার করছে অথবা বাংলাদেশ অত্যাচার করছে- এমন একটি ইস্যু বানাতে চেয়েছিল তারা।

প্রশাসনে বহাল ফ্যাসিবাদ সরকারসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুত অপসারণের কথা বলছেন আপনারা। এ বিষয়ে সরকারের ভূমিকা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

প্রশাসনের বিষয়ে সরকার খুব ধীর। এটা আরো দ্রুত করা দরকার। এটি না হলে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাধাগ্রস্ত হবে। এখন যে অনেকে সরকারকে ব্যর্থ বলতে শুরু করেছে, এটার পেছনে একমাত্র কারণ এটিই। এই মানুষগুলোই ব্যর্থতার সৃষ্টি করছে। ব্যর্থতার সুযোগ নিচ্ছে।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাদেরও ধন্যবাদ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫