রাজনীতিবিদদের চেয়ে আমাদের জন্য সংস্কার করা সহজ: ফারুক-ই-আজম

এম ডি হোসাইন
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১৬

উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত ফারুক-ই-আজম ছিলেন একজন নৌ কমান্ডো। ফারুক-ই-আজম ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর একজন সাব-কমান্ডার ছিলেন, যেটি চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পরিচালিত সবচেয়ে বড় অভিযানগুলোর একটি। তিনি ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামে প্রথম অনুষ্ঠিত বিজয় মেলার অন্যতম সংগঠক এবং পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমসহ নানা বিষয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম ডি হোসাইন।
অন্তর্বর্তী সরকারের মূল পরিকল্পনা কী?
অন্তর্বর্তী সরকার সব জায়গায় সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। সব সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হলেই আমরা চলে যাব। সবাই মিলে এবার দেশটাকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে চাই। আমরা দেশটাকে নতুন করে বানাতে চাই, কোনোভাবেই আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। এ জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা কেউ রাজনীতি করতে আসেনি, আমরা রাজনীতিতে থাকবও না। যতদিন আছি পুরো সিস্টেমের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করে যাব। যাতে সরকারি কর্মকর্তা আর জনগণের মধ্যে পার্থক্য না থাকে।
সংস্কারের কাজে রাজনীতিবিদরা কি আপনাদের কোনো চাপ দিচ্ছে?
বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরা নানা সমাবেশে কিছু কথা বলছেন। কিন্তু যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন তখন তারাও সংস্কারের কথা বলছেন। সংস্কারকাজে সহযোগিতা করতে চাচ্ছেন। আর রাজনীতিবিদদের চেয়ে আমাদের জন্য সংস্কার করা সহজ। কারণ আমরা রাজনীতি করব না। মানুষের কল্যাণের জন্য সংস্কার করে চলে যাব। যাতে দেশে কোনো বৈষম্য না থাকে। কিন্তু রাজনীতিবিদরা ভবিষ্যতে বলতে পারবেন সংস্কার আমরা করিনি, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার করেছে। রাজনীতিবিদদের জন্য সংস্কার করা কঠিন বলে ৫৩ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরও যদি সংস্কার না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কি সংস্কার করা যাবে?
মানুষের সেবা করার সুযোগ বারবার আসে না। মানুষের সেবা করার উপর আর কিছু নেই। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষ আমরা সবাই এক। আমাদের মধ্যে কোনো ভিন্নতা নেই। যা অন্যায়, অবিচার ছিল বুকের রক্ত দিয়ে অতিক্রম করে এখানে এসেছি। তাই সংস্কার করার এমন সুযোগ বারবার আসবে না। দেশের মানুষ এখন সংস্কার ও ন্যায়ের পক্ষে কাজ করতে চায়।
এ সময়ে আপনারা জনগণের কাছে কী ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন?
তরুণ, যুবাসহ সব মানুষ এ সময়ে এগিয়ে আসছে। স্বেচ্ছায় অনেক মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। আমাদের রিসোর্সের অভাব নেই। অনেক রকমের প্রতিষ্ঠান আছে তারা কাজ করতে আগ্রহী। আমেরিকা, কানাডাসহ অনেক দেশের প্রবাসী স্বেচ্ছায় আমাদের সঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছে। শিক্ষিত প্রবাসীরা দেশের জন্য আমাকে অনেক লিখিত পরিকল্পনাও দিয়েছেন। আমাদের দেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। জাতির মধ্যে প্রচণ্ড ঐক্যের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি, ঐক্যবদ্ধভাবে সংস্কার থেকে শুরু করে নির্বাচন পর্যন্ত সবই আমরা সম্পন্ন করব। এটাই আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। এখানে কাউকেই বিচ্ছিন্ন না করে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হবে।
জালিয়াতি করে যারা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
জালিয়াতি করে যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া আমার দৃষ্টিতে জাতির সঙ্গে প্রতারণা। এটা ছোটখাটো অপরাধ নয়, অনেক বড় অপরাধ। আমরা একটা ইনডেমনিটিও (সাধারণ ক্ষমা) হয়তো দেব। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা যেন চলে যান। যদি চলে যান, তাহলে তারা হয়তো সাধারণ ক্ষমাও পেতে পারেন। আর যদি সেটা না হয়, এই প্রতারণার দায়ে আমরা তাদের অভিযুক্ত করব। আমরা চাই যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা, কোনোভাবে যাতে তাদের মর্যাদা নষ্ট না হয়। সেটা অক্ষুণ্ণ রেখেই বাকি কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কীভাবে শনাক্ত করছেন?
যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন অথচ তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাদের শনাক্ত এবং তালিকা থেকে বাদ দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এই কাজটি জাতিগতভাবে সবার সমন্বয়ে করতে হবে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা শনাক্ত করছি। মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রকাশ করতে সরকার এরই মধ্যে অনলাইনে ডাটাবেইস তৈরি করেছে। সাধারণ জনগণের জন্য আপত্তি ফরমের সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এলাকাবাসীর কাছে সবসময়ই পরিচিত। আমরা সেসব তথ্যও যাচাই করছি।
আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোনটি?
দারিদ্র্য বিমোচন আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ জন্য ব্র্যাকসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছি। দারিদ্র্য বিমোচনে যারা আমাদের সহযোগিতা করতে চাইবে। সবার সহযোগিতা নেব।
দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৬১টি উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে বের করে আনার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা করেছে। এ জন্য পাইলটিং প্রকল্প শুরু হয়েছে। কয়েকটি স্থানে পাইলটিং সফল হলে অন্যান্য জেলায় কাজ শুরু হবে। ৬১টি উপজেলায় ৫০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। আমরা দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষদের বের করে আনতে খাদ্য ও জীবিকা সহায়তা প্রদানের একটি কর্মসূচি নিচ্ছি।