Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

রমজান মাসে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রি হবে: ফরিদা আখতার

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২২

রমজান মাসে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রি হবে: ফরিদা আখতার

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। তিনি অধিকারকর্মী হিসেবে সুপরিচিত। বিশেষ করে ১৯৮০-এর দশক থেকেই নারী অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেন। উন্নয়ন বিতর্কের নীতিনির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ)-এর নির্বাহী পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটি গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। 

জৈবকৃষি, প্রাণবৈচিত্র্য নিয়ে একাধিক গবেষণা ও কাজের সঙ্গে যুক্ত তিনি। ফরিদা আখতার ‘নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা’ নামে নারীবিষয়ক একটি প্রকাশনা সংস্থার প্রধান। ফরিদা আখতারের জন্ম চট্টগ্রামে, ১৯৫৩ সালে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কৃষি, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে অনেক ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। দেশের সার্বিক খাদ্য ও কৃষিব্যবস্থা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের প্রতিবন্ধকতা, সম্ভাবনা এবং উত্তরণের নানা উপায় নিয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম ডি হোসাইন।

এবার রমজান মাসে সাশ্রয়ী মূল্যে রাজধানীতে কী কী খাদ্যপণ্য বিক্রি হবে?

এবার রমজান মাসজুড়ে সাশ্রয়ী মূল্যে রাজধানীতে দুধ, ডিম ও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই কর্মসূচির আওতায় তরল দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার প্রতি কেজি ২৫০ টাকা এবং ডিম প্রতি পিস সাড়ে ৯ টাকা দরে বিক্রি করা হবে। তবে গরু-খাসির মাংস ও মাছ বিক্রির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। রাজধানীর ২৫ এলাকায় এই কর্মসূচি চলবে। এ বছর মাংস ও মাছ সরবরাহের বিষয়ে কোনো খামারি রাজি না হওয়ায় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের গরু-খাসির মাংস প্রস্তুতের সক্ষমতা না থাকায় এখনো এই তিনটি পণ্য বিক্রির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। 

জাটকা মাছ না ধরার বিষয়ে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হবে?

বাংলাদেশের ইলিশ পৃথিবীর সেরা তা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। কিন্তু খুব কষ্ট লাগে যখন দেখতে পাই জাটকা ধরা হচ্ছে। অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন, বাজারজাতকরণ যেন না করা হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারেন্ট জাল দামে সস্তা, হালকা হওয়ায় পরিবহনে সুবিধার কারণে জেলেরা ব্যবহার করছে। এই জালে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ ধরা পড়ে। নেট সাইজের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কারেন্ট জাল ক্ষতিকর। নেট সাইজ নিয়ন্ত্রণে মৎস্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সাইজ নির্ধারণ করা হবে।

ইলিশ রপ্তানির পরিকল্পনা কি আছে?

ইলিশের দাম যেন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রপ্তানির চেয়ে চেষ্টা করতে হবে দেশের মানুষ যেন ইলিশ মাছটা পায় এবং সেটার দাম অহেতুক বাড়ানো কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। আগে দেশকে গুরুত্ব দিতে হবে, এরপর রপ্তানি হবে।

দেশের কৃষি এবং প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য উৎপাদনের তথ্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

দেশের পুরো পরিসংখ্যান বিষয়ে কাজ করে থাকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। গত সরকার দেশের সব প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে ফেলেছে। সেখানে এই বিবিএসও বাদ যায়নি। তথ্য নিয়ে আগের সরকার এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি করেছে। বিবিএস রাজনৈতিক কারণে অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়েছে। ওই সব তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে নেওয়া প্রয়োজন। বিবিএসের তথ্য গরমিলের বিষয়টি শুধু কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী খাতে রয়েছে তা নয়, এই প্রতিষ্ঠানের সব ক্ষেত্রেই তথ্য নিয়ে আস্থাহীনতা রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের তথ্য নির্ভরযোগ্য হয় কি না সেটি দেখা যেতে পারে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত সংস্কারের পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় তথ্য প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য আমরা চেষ্টা করছি মাঠ পর্যায়ের সঠিক তথ্য দিয়ে নীতিনির্ধারণ করতে। এখন সব তথ্যই যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হচ্ছে। ফলে আস্থাহীনতা যেমন কমে আসবে, তেমনি নীতি গ্রহণ আরো সহজ হবে।

সাধারণ মানুষের নিরাপদ খাবার খাওয়া কি অধরাই রয়ে যাবে?

দেশের সব ধরনের খাবারেই এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। কয়েক দশক ধরে শুধু খাদ্য ও কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোয় নজর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু মানসম্পন্ন উৎপাদনে ততটা নজর দেওয়া হয়নি। পরিমাণগত উৎপাদনে জোর দিতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করা হয়েছে কিংবা সেই খাবার আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত কি না সেগুলো সঠিকভাবে দেখা হয়নি। আবার জিনগত পরিবর্তন করে খাবারের বিশুদ্ধতা ধ্বংস করা হচ্ছে। পরিবেশের ওপর অত্যাচার করে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে।  

 কিছু ক্ষেত্রে বিষাক্ত খাবার উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে উৎপন্ন খাদ্য ও আমিষপণ্য, বিশেষ করে মাছ, পোলট্রি ও মাংস খাতে ফিড নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। এর নিরাপদ উৎপাদন নিশ্চিত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে কি না সেটিও দেখা প্রয়োজন। এসব পণ্য মানুষের কাছে সহজলভ্য করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে নদীকেন্দ্রিক জলাধার থাকলেও তা মাছ উৎপাদনে সফলভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। নদীতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া, কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, নদীদূষণের কারণে মাছের উৎপাদন কমছে। ফলে এখানে আন্ত মন্ত্রণালয়ের অনেক বিষয় রয়েছে, একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করব।

খাদ্যপণ্য ভেজালমুক্ত করার কি পরিকল্পনা আছে? 

ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে সব খাদ্যপণ্য ভেজালমুক্ত করতে হবে। কীটনাশক ও বালাইনাশকের ভারসাম্যহীন ব্যবহারের কারণে অর্থের অপচয় হচ্ছে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, পাশাপাশি কৃষকের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট করা হচ্ছে, পাশাপাশি ক্ষতিকর পোকা দমনে কীটনাশকের ব্যবহার করতে গিয়ে উপকারী পোকা ধ্বংস করা হচ্ছে। নদীনালা কিংবা প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা করেই খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। বর্তমানে বালাইনাশকের ব্যবহার মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কীটনাশকের মারাত্মক ক্ষতিকারক সূক্ষ্ম উপাদানগুলো দেহে প্রবেশ করছে, প্রাণঘাতী ব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত ও অনিরাপদভাবে কীটনাশক প্রয়োগের মাধমে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কৃষক। এ জন্য বালাইনাশক আইনের কার্যকর প্রয়োগ করা প্রয়োজন। 

সাম্প্রতিক দেশকালের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫