নদীদূষণ ও অবৈধ দখল মুক্ত করার এখনই সময়: এম সাখাওয়াত হোসেন

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০২

উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি সাবেক নির্বাচন কমিশনার। তার জন্ম ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, বরিশালে। তিনি ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। প্রায় দুই বছর পাকিস্তানের বন্দিশিবিরে কাটিয়ে তিনি ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ৪৬ ব্রিগেডে স্টাফ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সেনা সদরে গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন ডিরেক্টরেটে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইউএস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে স্নাতক এবং পাকিস্তান ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) জ্যেষ্ঠ ফেলো হিসেবে যুক্ত আছেন। ১৯৯৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে অবসর নেন। এম সাখাওয়াত হোসেন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম ডি হোসাইন।
দীর্ঘদিন ধরে নদীদূষণ ও অবৈধ দখলের অভিযোগ আছে, এটা থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে?
নদীদূষণ ও অবৈধ দখলদারি থেকে মুক্ত করার এখনই উপযুক্ত সময়। অন্য সময় করতে হলে স্বার্থের সংঘাত শুরু হবে। বাংলাদেশ নদীবিধৌত দেশ। এ দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নদ-নদীর ওপর নির্ভরশীল। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, উন্নয়নের নামে নদ-নদী, খাল-বিল দখল করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদী দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে। নদীতীরবর্তী সব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলতে হবে।
নদীদূষণ ও অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা কী?
স্থানীয় প্রশাসনকে নদ-নদী, খাল-বিলের দূষণ ও অবৈধ দখলদারি থেকে বাঁচাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। উচ্ছেদ করার পর আবারও দখল হচ্ছে- এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে তৈরি নগরীর ড্রেনগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। উন্নয়নের নামে খালগুলো ভরাট করে ড্রেন বানানো হয়েছে। উত্তরবঙ্গের নদীগুলো দখল হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গা নদীসহ অন্য বড় বড় নদী নাব্যতা হারিয়েছে। পরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।
রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে পরিকল্পনা কী?
এ সময়ে রাষ্ট্রের কিছু সংস্কার করতে না পারলে আর কখনোই করা যাবে না। আমরা ২০০৭ সালে একবার চেষ্টা করেছিলাম, কিছু কিছু করেছিলাম; তবে সেগুলো থাকেনি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে। এখন যদি না করতে পারি, সংবিধানের দোহাই দিই, অন্যান্য আইনের দোহাই দিই, তাহলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা রক্ত দিয়েছেন, তাদের প্রতি অন্যায় হবে। বলছি না যে আমরা চার-পাঁচ বছর থাকব। এক বছরের মধ্যে সংস্কার করা সম্ভব।
তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আপনার মতামত কী?
তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনে উৎসাহিত করা উচিত। তাদের নিরুৎসাহিত করা ঠিক নয়। আমরা মনে করি, নতুন রক্ত প্রয়োজন। তাদের নিরুৎসাহিত করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ, তাদের উৎসাহিত করুন। তারা আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তাদের যদি উৎসাহিত না করেন, তাহলে আমরা এই জিনিসই (আওয়ামী লীগের পতন) দেখব। আজ না হয় ১০ কিংবা ১৫ বছর পরে আবারও দেখব।
রাষ্ট্র সংস্কারে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ কী?
সামনে আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এটা শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসবে দেশের বাইরে থেকে। আমাদের নতুন প্রতিবেশী তৈরি হচ্ছে। সেটা স্বাভাবিক নয়, ভিন্নধর্মী প্রতিবেশী। আরাকান এখন নতুন বাস্তবতা। আমরা এত দিন বিবেচনা করতে পারিনি। এখন বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।