Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

দুই দেশই ইতিবাচকতার দিকে যাত্রা শুরু করল: এম হুমায়ুন কবির

Icon

তাসীন মল্লিক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৬

দুই দেশই ইতিবাচকতার দিকে যাত্রা শুরু করল: এম হুমায়ুন কবির

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির।

গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন এবং ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানপোড়েন চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকের আলোচ্য বিষয়গুলোর এবং এর তাৎপর্য নিয়ে কথা বলেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাসীন মল্লিক।

কিছুটা অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ভারত কিছুটা দ্বিধান্বিত থাকলেও তারা বৈঠকের বিষয়ে রাজি হয়েছে, শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি হয়েছে। অনেকেই জানতে চাচ্ছেন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ভারত বৈঠকের জন্য কীভাবে রাজি হলো। এখানে দু-তিনটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। গত আট মাসে ভারতের উপলব্ধি হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের পেছনে জনসমর্থন রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এখন তাদের সঙ্গে কাজ করছে। কাজেই বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিটিকে ভারত যথাযথ মূল্যায়ন করছে। পুরোপুরি মূল্যায়ন করছে- এমন কথা আমি বলব না।

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার সক্রিয়ভাবে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করছে। প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান এবং শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। ফলে ভারতের মধ্যে উপলব্ধি হয়েছে, বাংলাদেশ পররাষ্ট্রনীতিতে মনোযোগ দিয়েছে। ভারতও এমন জায়গা থেকে আগ্রহ দেখিয়েছে যেন তারা বাদ পড়ে না যায়। জায়গা হারানোর বিষয়টি তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে, যে কারণে বৈঠকটি হয়েছে।

বৈঠকটি সম্পর্কে আপনার মত কী, বৈঠকটি কি ফলপ্রসূ হবে?

আমি ব্যক্তিগতভাবে এটিকে ইতিবাচক মনে করি। এখানে দুই পক্ষই একে অপরকে এই বৈঠকের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করল। কারণ তারা যখন কথা বলেছে, উভয়েই তাদের আগের অবস্থান বজায় রেখেছেন, নিজেদের কথাগুলো পুনর্ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু পার্থক্য হলো এটি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলোচনা। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যখন আলোচনা হয় তখন এই আদান-প্রদান থেকে খানিকটা ইতিবাচকতা পাওয়া যায়। উভয় পক্ষের মধ্যে এক ধরনের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। আমি আশা করি, এই শুরুটা আস্তে আস্তে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে যাবে।

দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে যেকোনো বৈঠক হলে, সেখানে স্বভাবতই ইতিবাচকতার বাতাবরণ তৈরি করে। সেই বাতাবরণের দিক থেকে এটি গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, দুই দেশই ইতিবাচকতার দিকে যাত্রা শুরু করল। এই যাত্রার পরবর্তী অংশ ভালো হবে বলে আমরা আশা করি। কারণ আমরা একে অপরের প্রতিবেশী, পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল। কাজেই সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে দুই দেশের জন্যই তা কল্যাণকর হবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে বৈঠকে গঙ্গার পানিচুক্তি নবায়ন এবং তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে উল্লেখযোগ্য আলোচনার কথা। সম্প্রতি চীন সফরেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসবের আলোকে বাংলাদেশ-ভারতের পানি বণ্টন ইস্যুতে নতুন কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন কি?

গঙ্গা চুক্তি ২০২৬ সালে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটি নবায়নের জন্য দুই দেশের মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন। এরই মধ্যে কারিগরি ক্ষেত্রে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, আমার ধারণা তারা এটিকে ইতিবাচকভাবে দেখবেন। 

তিস্তার বিষয়টি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ১১ বছর ধরে এটি ঝুলে আছে। প্রধান উপদেষ্টার মুখ থেকে এটি আবার নরেন্দ্র মোদির সামনে তুলে ধরা হয়েছে, যেটি এক ধরনের চাপ দেওয়া হয়েছে। ভারত কী জবাব দিয়েছে আমরা জানি না, তবে এটুকু বোঝা যায়- বিষয়টি যথেষ্ট জটিলতার মধ্যে আটকে আছে। আমরা আমাদের দাবি জানিয়ে যাব এবং আশা করব ভারত দ্রুত এ বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নেবে।

শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিও আলোচ্যসূচিতে ছিল, বৈঠকের পর এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হতে পারে কি?

এটির সঙ্গে অনেক বিষয় সংশ্লিষ্ট রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে আরো আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই অনুরোধের জবাব ভারত কীভাবে দেয়, তা জানার জন্য আমরা অপেক্ষা করব।

ভারতের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনে এই আহ্বানের প্রতিফলন ঘটতে পারে বলে মনে করেন কি?

প্রধান উপদেষ্টা নিজ মুখেই বলেছেন নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এটি সরকারের অঙ্গীকার হিসেবে আমরা শুনেছি। এখানে ভারত মন্তব্য করতে পারে, তবে সেটি গৌণ বিষয়। বর্তমানে যে সংস্কারের উদ্যোগ, এটি শেষ হওয়ার পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণই নির্ধারণ করবে তারা কীভাবে নির্বাচনটা চায়।

ভারতের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদিও তার বক্তব্যে ‘গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক’ বাংলাদেশ দেখতে চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

বাংলাদেশের রাজনীতি এবং রাজনীতির প্রক্রিয়ার ব্যাপারে প্রতিবেশী ও বন্ধু হিসেবে ভারত মন্তব্য করতে পারে। এ বিষয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করবে বাংলাদেশের জনগণ। বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার মিলে সিদ্ধান্ত নিবে নির্বাচন কীভাবে হবে।

অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিব, বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলকের’ সংজ্ঞা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের জনগণ। অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে দায়বদ্ধতাও যুক্ত রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতাও নিশ্চিত করতে হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫