স্বাস্থ্য খাতে চীন বাংলাদেশকে অনেক সহযোগিতা করছে: নুরজাহান বেগম

এম ডি হোসাইন
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪১

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নুরজাহান বেগম। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময় ড. ইউনূসের প্রথম সারির সহযোগীদের একজন ছিলেন নুরজাহান বেগম। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংকের শুরু ও চ্যালেঞ্জের দিনগুলোতে নুরজাহান বেগম গ্রামীণ নারীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সংস্থার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন এবং ২০১১ সালে ড. ইউনূস অবসর নেওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত এমডি হন।
নুরজাহান বেগম ২০০৮ সালে গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের সুসান এম ডেভিস লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড সামিট মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস অ্যাওয়ার্ড এবং ২০০৯ সালে ভিশন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। এ ছাড়া ‘আউটস্ট্যান্ডিং কন্ট্রিবিউশন টু এডুকেশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৪’, ‘ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সামিট অ্যাওয়ার্ড-২০১৭’ লাভ করেন। তিনি ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত ‘ফরচুন মোস্ট পাওয়ারফুল উইমেন সামিট’-এ অংশগ্রহণ করেন এবং স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিস’-এর পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্বাস্থ্য খাতের সমসাময়িক ইস্যুসহ নানা বিষয়ে তিনি সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম ডি হোসাইন।
বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণসহ স্বাস্থ্য খাতে বড় বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে চীন। এতে স্বাস্থ্য খাতে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে?
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে চীন ১৩৮.২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা প্রদান করবে। কোভিড মহামারির সময় বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি টিকা চীন থেকেই আমদানি করেছে। ঢাকার ধামরাইতে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণে চীন সম্মতি দিয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল নির্মাণ নিয়েও আলোচনা চলছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফর সফল হয়েছে এবং অচিরেই বাংলাদেশের নাগরিকরা চিকিৎসার জন্য সহজে চীন ভ্রমণ করতে পারবে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত চীনের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বাজার হতে পারে। এতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অনেক পরিবর্তন আসবে।
৫ আগস্টের পর চীন বাংলাদেশকে স্বাস্থ্য খাতে কী ধরনের সহযোগিতা করেছে?
জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে চীন বাংলাদেশকে অনেক সহযোগিতা করেছে। জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা দিতে আমাদের যে সীমাবদ্ধতা তা চীনের রাষ্ট্রদূতকে জানালে তিনি খুব দ্রুত এর সমাধান করেন। চীন সরকার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করে এবং সেপ্টেম্বরে তাদের বাংলাদেশে পাঠায়। এটি সত্যি প্রশংসনীয়।
চীন কী উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে হাসপাতাল করছে?
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওই দেশের সরকার এ দেশের মানুষকে এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল উপহার হিসেবে দিচ্ছে। এই হাসপাতাল উত্তরবঙ্গে, রংপুরে করার কথা ভাবা হচ্ছে। হাসপাতালের নাম ‘চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল’ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গে জমি দেখা হচ্ছে। বেসরকারি বিনিয়োগও আসছে। খুব শিগগির চীন থেকে ২০০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে। তখন বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হবে।
দেশের স্বাস্থ্য খাত উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে ?
দেশে চিকিৎসকের ঘাটতি অত্যন্ত প্রকট। এই সংকট নিরসনে বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। এটি হলে স্বাস্থ্য সেবার মান আরও বাড়বে।
স্বাস্থ্য খাতে কী ধরনের সংকট রয়েছে?
স্বাস্থ্যব্যবস্থায় নানামুখী সংকট রয়েছে। মাতৃস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করলে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা খুবই শোচনীয়। দেশে মাতৃস্বাস্থ্যের যে কর্মকাণ্ড দরকার ছিল, তার ধারেকাছেও নেই। স্বাস্থ্যবিধি বিবেচনা করলে যে গুণগত মান রক্ষা করা প্রয়োজন, তা হাসপাতালগুলোতে নেই। যেখানে ৫০ জন মায়ের শয্যা রয়েছে, সেখানে ১০০ মাকে রাখা হয়েছে। এক শয্যায় তিনজন শিশুকে রাখা হয়েছে। সব জায়গায় করুণ চিত্র। চিকিৎসক সংকট প্রচণ্ড। সরকারি হাসপাতালে যত চিকিৎসক দরকার, তত নেই। বিভিন্ন কারণে তারা দেশের বাইরে অবস্থান করেন। পড়াশোনা, প্রাইভেট প্র্যাকটিসসহ নানা কারণে তারা চলে যান। এখনো বেশির ভাগ সন্তান প্রসব হচ্ছে বাড়িতে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, সরকারি হাসপাতালে প্রসব কম হয়। প্রসবকালীন জটিলতা ও বিপদ সম্পর্কে দাইমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া দরকার। মায়ের অবস্থা জটিল বুঝতে পারলে দাইমারা যেন প্রসবের চেষ্টা না করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
সম্প্রতি রেলওয়ের হাসপাতাল নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের কি উপকার হবে?
সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০টি হাসপাতাল যৌথভাবে পরিচালনার জন্য রেলপথ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সমঝোতা স্মারক সই হলেও হাসপাতালগুলো সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দিতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। বর্তমানে শুধু রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লেগেই থাকে। অন্যদিকে রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হাসপাতালগুলোতে রোগীর উপস্থিতি একেবারেই নগণ্য। এমতাবস্থায় রেলওয়ে হাসপাতালগুলো সর্ব সাধারণকে সেবাদানের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হলে অধিকসংখ্যক মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবে। দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত হবে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি। বিদ্যমান জনবল কাঠামোর অধীনে নিয়োগকৃত জনবলের প্রশাসনিক ও সংস্থাপনিক কার্যক্রম রেলওয়ের আওতায় আগের মতো বলবৎ থাকবে।