Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

ইতিবাচক রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ তৈরি হয়েছে: নাসির উদ্দিন নাসির

Icon

মেরিনা মিতু

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৮

ইতিবাচক রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ তৈরি হয়েছে: নাসির উদ্দিন নাসির

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলীয় সাংগঠনিক কাঠামো, নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে দেশকাল নিউজের সঙ্গে কথা হয়েছে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশকাল নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মেরিনা মিতু।

পাঁচ আগস্টের পর বাংলাদেশে নতুন ধারার রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ হয়েছে বলা হয়। আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি এখন কোন পর্যায়ে আছে বলে আপনি মনে করেন?

দেখুন, আগস্ট বিপ্লবের আগে গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা যেভাবে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকে জিম্মি করে রেখেছিল, সেই বর্ণনা দিতে গেলে শেষ হবে না। বিশেষ করে, প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতাকর্মীদের যেভাবে দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে, তা ছিল ভয়াবহ। প্রশাসন থেকে সর্বক্ষেত্রে এই ফ্যাসিস্টের নিয়ন্ত্রণ ছিল। দেরি করে হলেও বাংলাদেশের তরুণরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ফ্যাসিস্টকে বিদায় করে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। ফ্যাসিস্টের বিদায়ের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণ মুক্তি পেয়েছে, একইসঙ্গে রাজনৈতিক যে সুস্থ স্বাভাবিক চর্চা তা ফেরত এসেছে বলে আমি মনে করি। এখনো আমরা পুরোপুরি স্থির না, তবে অন্তত ইতিবাচক রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটা নিশ্চিন্তে বলতে পারি। এক কথায়, বাংলাদেশের ছোট বড় সব রাজনৈতিক দল অবাধে তাদের রাজনৈতিক চর্চা করতে পারছে- এটা অনেক বড় একটি অর্জন বলে আমি মনে করি। 

এমন অবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তার সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে? 

যেহেতু ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় হয়েছে, আমরা অবাধে আমাদের রাজনৈতিক চর্চা করতে পারছি। সেদিক থেকে সাংগঠনিকভাবে আমরা দলকে অনেকটা গুছিয়ে নিতে পেরেছি। যদিও সেই কাজ এখনো চলমান। যেমন ধরেন, গত কয়েক মাসে আমরা ৯০০-এর বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করতে পেরেছি। এর মধ্যে অন্তত ৬৫০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একেবারেই নতুন, যেখানে আগে কখনোই আমাদের দলের সাংগঠনিক কাঠামো ছিল না। একেবারে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়েই আমরা এই কাঠামো তৈরি করছি। এটা এক ধরনের মাইলফলক বলা যায়। আগামী কয়েক মাসে অন্তত আড়াইহাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমরা এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখব।

তা ছাড়া এর মধ্যে ৯০০-এর মতো মাদ্রাসাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ যেন আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের এক কাতারে নিয়ে আসি। কোনো ভেদাভেদ না রাখি। জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়েও আমরা সাংগঠনিক কাঠামো নতুন করে করছি। যেগুলো বিগত ছয়-সাত বছরে একই অবস্থায় ছিল, সেগুলো পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন বন্দোবস্তের মধ্যে নারীর অধিকার, নিরাপত্তা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। নারীর সম-অধিকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নানা মত-দ্বিমত সামনে এসেছে। এ নিয়ে ছাত্রদলের মতাদর্শ কী এবং দলে নারী নেতৃত্ব নিয়ে তাদের কী চিন্তা? 

আমাদের চেয়ারপারসন একজন নারী। নারীদের অধিকার নিয়ে ওনার নানা পদক্ষেপ রয়েছে, সেখান থেকে আমরা সোজাসাপ্টা বলতে পারি, আমরা নারীর সম-অধিকারে বিশ্বাসী। 

এখন ধরুন, নারীদের পিছিয়ে রাখার এক টেন্ডেন্সি আমাদের এই সমাজব্যবস্থায় রয়েছে। ছাত্রদলের ২৬০ সদস্যের মধ্যে কেবল ২২-২৩ জন নারী, যা নিয়মের মধ্যেও পড়েনি। আমরা নিজেরাও নারী নেতৃত্ব জাগ্রত করতে পারিনি, এটাই সত্যি। তবে আমরা চেষ্টা করছি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও আমাদের সেই নির্দেশ দিয়েছেন। কর্মী নিয়োগ কিংবা নেতৃত্ব পর্যায়ে নারীদের কীভাবে আরো জাগ্র‍ত করা যায়, সেই টার্গেট নিয়েই আমরা আমাদের সব প্ল্যানিং করছি। কদিন আগেই পাবনার এডওয়ার্ড কলেজের দুই হাজার ২০০ কর্মীর মধ্যে নারী ছিল প্রায় ৪৫০ জন। আমরা ইতিবাচকভাবে সব স্তরে নারীদের অংশগ্রহণের জন্য জোর দিয়ে যাচ্ছি। মূল কথা হলো নারী অধিকার নিয়ে সবাই কথা বলে, কিন্তু বাস্তবায়নের জায়গাটায় সবাই পিছিয়ে যায়। আমাদের সেই জায়গাটাতে কাজ করতে হবে। আর এখন যেহেতু দেশে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চা করা যাচ্ছে, তাই বলা যায় এসব ইতিবাচক পরিবর্তনও আস্তে আস্তে সম্ভব হবে। 

চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ছাত্রদল নেতাদের নাম উঠে এসেছে। ছাত্রলীগের বিদায়ে যতটা স্বস্তি রয়েছে, ঠিক ততটাই আতঙ্কের কথা শোনা যাচ্ছে ছাত্রদলকে নিয়ে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে ছাত্রদল? 

এই ঘটনাগুলো যে ঘটেছে কিংবা ঘটছে, সেটা অস্বীকার করতে চাই না। নতুন ধারার রাজনীতিতে নিজেদের সমালোচনা করতে পারাটাই অন্যতম ইতিবাচক পরিবর্তন হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তবে আমি কিছুটা বর্ণনা করতে চাই। প্রথমত, গণমাধ্যমে আসা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নেতাকর্মীদের বিষয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি তদন্ত করেছে। অনেকের ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিয়েছি, বহিষ্কার করেছি। 

আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে, আসল ঘটনা তার ধারে-কাছেও না। এ ক্ষেত্রে আমি গণমাধ্যমকে দোষারোপ করব না। বরঞ্চ আমরা প্রমাণ পেয়েছি অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল ইনফরমেশন দিয়েছে গণমাধ্যমকে। ছাত্রদলের নামে নানা প্রোপাগাণ্ডা ছড়িয়েছে। মজার বিষয় হলো, আমাদের নিজদলীয় নেতাকর্মীরাই একে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমে নিউজ করিয়ে হাইপ ক্রিয়েট করেছে। সেই নিউজ আবার আমাদের কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। এর পেছনে উদ্দেশ্য হলো পদ পাওয়া। এটা সাংগঠনিকভাবে আমাদের একটি বড় ব্যর্থতা বলে আমি মনে করি। এখন একটা পরিবারে সব সন্তান তো একই রকম হয় না। বড় পরিবারে সবার দিকে নজর দিতেও হিমশিম খেতে হয়। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে, এসব বিষয়ে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানেরও এই ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা রয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কেন এখনো দেশে আসছেন না? কবে আসবেন তিনি? দলীয় চেয়ারপারসনও এই মুহূর্তে দেশে নেই। তাদের অনুপস্থিতি কি দলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে? 

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সারা দেশে নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে পাহাড় বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামেও অগণিত মামলা ছিল। তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না তার কারণ আমরা দলীয় কিংবা সরকার পক্ষ থেকে দেশে ফেরার মতো পরিস্থিতি বানাতে পারিনি এখনো এটাই সত্যি। তবে তিনি শিগগিরই ফিরবেন। 

এটুকু বলতে পারি যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কিংবা ম্যাডাম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলীয় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। আমরা নিয়মিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করি, তার পরামর্শেই সব কার্যক্রম পরিচালনা করি। 

এনসিপির সঙ্গে ছাত্রদলের প্রকাশ্য বিরোধ দেখা যায়। এনসিপি নিয়ে  আপনার ভাবনা কী? 

জুলাই বিপ্লবের অন্যতম অংশীদাররা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবে, দেশের সেবা করবে, সেটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বিষয়টি দলীয়ভাবেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছি আমরা। আমি তখন চায়না ছিলাম, ব্যক্তিগতভাবে নাহিদ, হাসনাতকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। কিন্তু এরই মধ্যে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা দল হিসেবে তাদের যে পরিচিতি হয়েছে, তা খুবই হতাশাজনক। তারা কতটা জনবান্ধব তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, জনগণ তাদের উদ্দেশ্য, মতাদর্শ নিয়ে সংশয়ে রয়েছে। নতুন দল হিসেবে তাদের শুরুটা যদি এভাবে হয় তাহলে তারা বেশিদূর এগোতে পারবে না। এমনকি তাদের ইন্টেরিম মিটিংয়ে আলোচনা হয় কে কতটা উচ্চবিলাসী। এখনই যদি তাদের এমন হাল হয়, তারা জনগণের কথা কীভাবে ভাববে। 

তা ছাড়া আমি একদম কোট করেই বলি যে, নাহিদ বলেছেন, একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে ক্ষমতায় বসাতে বিপ্লব করিনি। এটি দেশের গণতান্ত্রিকব্যবস্থার ঘোর বিরোধিতার শামিল। এটা তিনি কোনোভাবেই বলতে  পারেন না। কে বা কারা আসবে তা দেশের জনগণ ঠিক করবেন। তিনি সেই দায়িত্ব নেননি। 

এরপর আপনারা দেখবেন তাদের কারো দুর্নীতি, ভুলত্রুটি নিয়ে আলাপ এলে তারা অন্য রাজনৈতিক দলের দিকে আঙুল তুলে নিজেদের ভুলকে জাস্টিফাই করতে চায়। ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে কেউ না। আমাদের উচিত নিজেদের সমালোচনা এক্সেপ্ট করতে পারা। ভুলগুলোকে শুধরানো। নয়তো নতুন ধারার রাজনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে না। 

রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। বর্তমান পরিস্থিতিতে মোটামুটি সবাই ‘যথার্থ’ সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায়। ছাত্রদল নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে? তারা কি সংস্কার না করেই নির্বাচনে আগ্রহী? 

সংস্কার নিয়ে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। বরঞ্চ শুধু আমরা না, এখন পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দল সংস্কার নিয়ে একই মনোভাব জানিয়েছি। আমরা সবাই সংস্কারকে প্রাধান্য দিতে পারছি। তবে সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচন দেওয়ার মধ্য দিয়েই কেবল দেশ ও দেশের জন্যগণকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। তাই আমরা যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি এবং আমরা আশাবাদী ডিসেম্বরের মধ্যেই নিয়ে নির্বাচন দেওয়া হবে। কারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। গত ১৫ বছর দেশের মানুষ যেভাবে পিছিয়ে  রয়েছে, বাকস্বাধীনতার স্বাদ পায়নি, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণজোয়ার হবে। সেই গণজোয়ারের মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে নতুন ধারার রাজনীতির সূচনা ঘটবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫