সংস্কৃতি অঙ্গনে পরিবর্তন আনাই আমার মূল পরিকল্পনা: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

এম ডি হোসাইন
প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ১২:০১

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন ‘টেলিভিশন’, ‘ডুব’-এর এই নির্মাতা। আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাণ করে খ্যাতি পেয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। পাশাপাশি প্রযোজক হিসেবেও তিনি পরিচিত মুখ। তার মালিকানাধীন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ছবিয়াল’ এর ব্যানারে তিনি বহু বিজ্ঞাপন, নাটক ও সিনেমা নির্মাণ করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শুরু থেকেই এই আন্দোলনের পক্ষে সরব ছিলেন ফারুকী। ফেসবুকে প্রতিদিনের নানা ঘটনা নিয়ে অকপটে নিজের মতামত ও উৎকণ্ঠা জানিয়ে গেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরও সমসাময়িক নানা বিষয়ে অন্তর্জালে সরব ছিলেন এই নির্মাতা। সম্প্রতি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সমসাময়িক বিষয়ে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম ডি হোসাইন।
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে আপনার পরিকল্পনা কী?
আমি কখনোই কোনো আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে পড়িনি। তবে উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পর নতুন নতুন কাজের মুখোমুখি হয়েছি। এটা করেছি দেশের জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা থেকে, যা অপ্রতিরোধ্য। এ ছাড়া অধ্যাপক ড. ইউনূসের সহকর্মী হওয়ার লোভ সামলাতে না পারায়। সংস্কৃতি অঙ্গনে পরিবর্তন আনাই আমার মূল পরিকল্পনা। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি সেসব কিছুই করব, যাতে পরিবর্তন আনতে পারি।
আপনি ফ্যাসিস্টদের বিরোধিতা করেছেন কেন?
আমি উপদেষ্টার দায়িত্বটা তখনই নিতে রাজি হয়েছি, যখন মনে করেছি যে কাজটা হয়তো আমি করতে পারব। আমি ফ্যাসিস্টবিরোধী কি না, তার পুরস্কার হিসেবে আমার কাজ প্রয়োজন নেই। আমি ফ্যাসিস্টদের বিরোধিতা করেছি আমার বিবেকের কারণে। নিশ্চয়ই এই পদের জন্য নয়। আপনি নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবেন, আমি মারা গেলে মন্ত্রী হিসেবে কেউ আমাকে মনে রাখবে না, মনে রাখবে ফিল্মমেকার (চলচ্চিত্র নির্মাতা) হিসেবে।
এবার পহেলা বৈশাখে ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি পুড়িয়েছে কারা?
জুলাই বিপ্লবকে চ্যালেঞ্জ করে পরাজিত ফ্যাসিবাদের দোসররা ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি পুড়িয়ে দিয়েছে। ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ যারা পুড়িয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনার কাজ চলমান আছে। জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ হবে এসব অপকর্মের মুখ্য জবাব। এবার আমরা সবাই একত্রিত হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে পেরেছি, যা ফ্যাসিবাদের দোসরদের ভালো না লাগার কারণ হতে পারে।
এবারের পহেলা বৈশাখে কী কী ব্যতিক্রম ছিল?
এ বছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে নববর্ষের শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন সবাই। পহেলা বৈশাখে নববর্ষের শোভাযাত্রা শান্তিপূর্ণ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই সহযোগিতা করেছে। এবার সব ধর্ম-জাতি নির্বিশেষে সবার সমন্বয়ে বিশাল আয়োজন হয়েছে। বৈশাখকে কেন্দ্র করে আমরা সবাই এক হয়ে উৎসব পালন করতে পেরেছি। যার মাধ্যমে দেশকে নতুনভাবে চিনেছে মানুষ। কিন্তু ফ্যাসিবাদের দোসরদের ভালো লাগেনি। তারা আমাদের ঐক্যে বাধা দিতে চেয়েছে।
আপনার সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির বিষয়ে আপনার মতামত কী?
তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতিতে আমার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রত্যেক চ্যানেলের নিজস্ব এডিটরিয়াল পলিসি থাকে। সেই পলিসির আলোকে তারা কী সিদ্ধান্ত নেবে তা তাদের ব্যাপার।
তিন সাংবাদিকের প্রশ্নে কি আপনি বিব্রত হয়েছেন?
আমাকে যখন প্রশ্ন করা হলো, একজন খুনিকে খুনি বলা যাবে কি না- এই প্রশ্ন জনতার জুলাইকেই বেমালুম নাই করে দেওয়ার একটা চেষ্টা হিসেবেই দেখেছে সবাই। প্রেস কনফারেন্সে তাদের কথাগুলো আমাকে বিস্মিত করলেও ধৈর্য নিয়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারপর মানুষ তাদের ক্ষোভ জানিয়েছে।