Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

আমরা চেয়েছি বামপন্থিরা সামনে আসুক: সাইফুল হক

Icon

বখতিয়ার আবিদ চৌধুরী

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৫, ১০:১৩

আমরা চেয়েছি বামপন্থিরা সামনে আসুক: সাইফুল হক

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি’র যৌথ রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে মতবিরোধের ফলে ২০০৪ সালের ১৪ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি’। দলটি রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’র প্রতিষ্ঠাকালীন শরিক। বর্তমানে দলটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন সাইফুল হক। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশগ্রহণ, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপির অবস্থানসহ রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বখতিয়ার আবিদ চৌধুরী।

অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস পূর্ণ হলো। গণতন্ত্রে উত্তরণে সরকার কতটা অগ্রসর হতে পারল?

সরকারের দিক থেকে তো এক ধরনের চেষ্টা আছে। বিচার ও সংস্কারকে একটা দৃশ্যমান পর্যায়ে এনে এই বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার একটা প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের। আমি মনে করি, এই প্রতিশ্রুতিটা ঠিক আছে এবং সরকার এটা ঠিক রাখবে। সরকারের কিছু উদ্যোগ আছে, একই সঙ্গে বিভিন্ন টানাপোড়েন ও সিদ্ধান্তের দোলাচলও আছে। তার পরও আমি এখনো আশাবাদী যে, ১৬ বছর ধরে মানুষ যে নির্বাচনটির অপেক্ষা করছে তা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ সরকার সম্মানজনকভাবে বিদায় নেবে। আমি মনে করি, নির্বাচিত সরকার ছাড়া একটা দেশ অনির্দিষ্টকাল এ ধরনের সরকার দিয়ে চলতে পারে না। সরকারও খুব একটা সামাল দিতে পারছে, তা বলা যাচ্ছে না। দেশে একটা আধা নৈরাজ্যিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কিন্তু আমরা সরকারকে সমর্থন করছি (রাজনৈতিক দল), মানুষও সরকারকে কিছুটা সহ্য করছে যে, ‘এ সরকার তো খুব অল্প সময়ের জন্য এসেছে, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচিত সরকার আসবে।’ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, বাধা আছে তার পরও আমি আশাবাদী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের হাতেই দেশ যাবে। 

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক আলোচনা চলছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এতে অংশ নিয়েছে। সে আলোচনার বিষয়ে বলুন...

আলোচনাটা ভালো হয়েছে। আমরা ১৬৬ প্রস্তাবের মধ্যে ১২১টিতে একমত হয়েছি। ২২টিতে আমাদের দ্বিমত ছিল, ভিন্নমত ছিল। আর ২৩টিতে আমরা আংশিক একমত হয়েছি। তবে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে আমাদেরও কিছু অস্পষ্টতা দূর হয়েছে। আমার মনে হয় ঐকমত্যের জায়গাটা আরো কিছুটা বাড়বে। গুরুত্বপূর্ণ তিন-চারটি কথা আমরা বলেছি। যেমনÑরাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। কারণ ঐতিহাসিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশের নামকরণ হয়েছিল। সুতরাং রাষ্ট্রের নামকরণের যে প্রস্তাবনা সেখানে আমরা আমাদের অসম্মতি স্পষ্ট করে জানিয়েছি। সংবিধানের মূলনীতির ক্ষেত্রে আমরা বলেছি যে, ১৯৭২-এর সংবিধানের চার মূলনীতি বহাল রাখা দরকার। এর সঙ্গে আমরা তাদের যে প্রস্তাবনা সেখান থেকে ‘বহুত্ববাদ’ বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে থাকা ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার’ সংবিধানের মূলনীতিতে যুক্ত করার প্রস্তাব করেছি। আর গণতন্ত্র থাকলে বহুত্ববাদ না হলেও চলে। যদি বহুত্ববাদ রাখতে চায় তাহলে আমাদের দিক থেকে বড় কোনো আপত্তি নেই। 

প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক যে অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামো, আমরা তার পরিবর্তন চেয়েছি। সরকার, রাষ্ট্রপতি ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে চার বছরে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছি। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন মন্ত্রিপরিষদের ওপরে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিপরিষদের ১ নম্বর সদস্য হবেন, মন্ত্রিপরিষদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী কাজ করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রী পরিষদের যৌথ কর্তৃত্বে সরকার চলবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠা, নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে আইন প্রণয়ন বিভাগ এবং বিচার বিভাগের একটা যৌক্তিক সমন্বয় নিয়ে আমরা কথা বলেছি। এ ছাড়া আমাদের অনেক প্রস্তাবনা রয়েছে। তাদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আমাদের আরেকটি বৈঠক হতে পারে, সেখানেও এ ব্যাপারে আরো কিছু কথা বলব। আলোচনাটা মোটামুটি ইতিবাচক। 

গণতন্ত্র মঞ্চ বেশ কয়েক বছর হলো বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় রয়েছে। সংস্কার বিষয়ে বিএনপি কিছুটা দ্বিধান্বিত হলেও জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে বারবার শক্ত অবস্থানের জানান দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গণতন্ত্র মঞ্চের অবস্থান কী?

বিএনপিও সংস্কারের পক্ষে। বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের আলাপ-আলোচনা, বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই কিন্তু ৩১ দফা তৈরি হয়েছিল। সুতরাং বিএনপি যেহেতু এটাকে আপহোল্ড করছে, গণতন্ত্র মঞ্চও আপহোল্ড করছে। বিএনপিসহ কোনো দলই সংস্কারের বিরুদ্ধে নয় বলে আমি বিশ্বাস করি। 

অভ্যুত্থানের আগে আমরা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে ছিলাম। অভ্যুত্থানের পর বোঝাপড়াটা ঠিক আগের পর্যায়ে নেই, কিছু ঘাটতি আছে। গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলোর মধ্যেও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ঘাটতি রয়েছে। অনেক ব্যাপারে সাধারণ ঐকমত্য থাকার পরেও কিছু কিছু প্রশ্নে আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। সেটা বিএনপির সঙ্গেও গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলোর আছে। আলাপ-আলোচনা করে সামগ্রিকভাবে গণহত্যার বিচার, সংস্কারের বিষয়ে একমত হয়ে একটা সনদে স্বাক্ষর করা এবং নির্বাচন- এসব বিষয়ে ব্যাপকভাবে ঐকমত্যের জায়গা রয়েছে। কিছু দ্বিমত আছে, যেখানে সনদটা স্বাক্ষর হলো এটা কার্যকর কীভাবে হবে- এ নিয়ে মঞ্চের মধ্যে দলগুলোর অবস্থানের কিছু পার্থক্য তৈরি হয়েছে। কেউ মনে করছেন এটা সংবিধান সংস্কার সভা নির্বাচন হবে। একই সঙ্গে এটা সংসদ হিসেবে কাজ করবে। বিপ্লবী ওয়কার্স পার্টিসহ মঞ্চের আরো কিছু দল মনে করছে, যেহেতু সংস্কারের বিষয়টি ৩১ দফায় আমাদের আগের প্রতিশ্রুতি, আবার নতুন করে ঐকমত্য কমিশনের তত্ত্বাবধানে একটা সনদে স্বাক্ষর করব। সব মিলিয়ে ন্যূনতম একটা বোঝাপড়ায় যাওয়া সম্ভব। 

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি তো বামধারার একটি দল। সিপিবি, বাসদসহ বামপন্থি বেশির ভাগ দল বাম গণতান্ত্রিক জোটে রয়েছে। আপনারা গণতন্ত্র মঞ্চে অবস্থান করছেন, এটাকে একটা মধ্যপন্থি জোট বলা যায়। আপনাদের বোঝাপড়াটা কী হয় সে অর্থে?

আমরা মনের দুঃখে বাম জোটে আমাদের মেম্বারশিপ সুপ্ত রাখার আবেদন করেছিলাম। আমরা অর্থাৎ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আর গণসংহতি আন্দোলন। আমরা বলেছিলাম যে, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে দুনিয়াব্যাপী কমিউনিস্টরা, বামপন্থিরাই নেতৃত্ব দিয়েছে। দুনিয়াব্যাপী ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে বামপন্থিদের নেতৃত্বে বৃহত্তর জোট এবং বিভিন্ন মঞ্চ গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও আমরা তেমনটি করতে পারি। যেখানে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে যুগপৎভাবে রাজপথে নামানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’ এটাই ছিল জোটের ভেতর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক অবস্থান। এ বিষয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বেশির ভাগ দলগুলোকে আমরা সম্মত করাতে পারিনি। আমি মনে করি, তারা একটা ভুল করেছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে সাধারণ যে কর্মকৌশল সেটাই তারা বুঝতে পারেনি। বিএনপি বা কোনো বুর্জোয়া দলের সঙ্গে আমরা জোট করতে চাইনি, কোনো মঞ্চ, কোনো মোর্চা করতে চাইনি- আমরা চেয়েছি ফ্যাসিবাদকে যারাই বিরোধিতা করতে চায় তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে। ইসলামি ধারা, মধ্যপন্থি, প্রগতিশীল, দেশপ্রেমিক বা শাসকশ্রেণির ক্ষমতাবহির্ভূত দলগুলো- প্রত্যেকেই যাতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমাদের রাজনৈতিক তত্ত্বগত চিন্তা ও উপলব্ধি বাম গণতান্ত্রিক জোটে প্রস্তাব করেছিলাম শুধু। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি। এ জন্য ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে বামপন্থি নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ প্রায় আধা বেকার অবস্থায় ছিলেন। যখন দায়িত্ব এবং সর্বোচ্চ ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্ন ছিল, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল, তারা তা পারলেন না। আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে সমদূরত্বে রাখার যে ভুল রাজনীতি, তার খেসারত দিয়েছেন বামপন্থিরা। এখন তারা বলছেন বৃহত্তর জোট করার জন্য, যখন দরকার ছিল বামদের উদ্যোগে বৃহত্তর জোটের তখন তারা করলেন না। তারা ঐতিহাসিক ভুল করেছেন। তাদের এ ভুলের উপলব্ধি দরকার, অনুশোচনা দরকার। ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে তারা তাদের মতো অবস্থান নিতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদের ভূমিকাটা খুব বেশি দৃশ্যমান হয়নি। যে জন্য এখন তাদের নানাভাবে ফ্যাসিবাদের দোসর বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা বলছি, তারা ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে তাদের মতো করে একটা ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু সময়ের যে দাবি ছিল তা তারা বুঝতে পারেননি। 

আমরা যাদের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ করেছি, কিছুটা বাধ্য হয়েই করেছি। বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে আমাদের যে পরিমাণ বোঝাপড়া ছিল, এদের সঙ্গে ওই পরিমাণ বোঝাপড়া বাস্তবে আমাদের নেই, এটা সত্যি। বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে আমাদের আদর্শিক ঐক্য ছিল, এদের অনেকের সঙ্গেই আদর্শিক ঐক্যের জায়গাটি নেই। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ছাড়া এখানে কেউ আর নিজেদের বামপন্থি বলে মনে করে না। পরিচয়ও দেয় না। বামপন্থি বললে অনেকে বিব্রত বোধ করেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের কর্তব্যটি পালন করতে গিয়ে তুলনামূলকভাবে কম নির্ভরযোগ্য এসব বন্ধুদের নিয়ে আমাদের গণতন্ত্র মঞ্চ করতে হয়েছে। আমি মনে করি, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে। এখন মঞ্চের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মেলে আবার কিছুতে মেলে না- এ রকম একটা দ্বিধার মধ্যে আমরা আছি। তবে গণতন্ত্র মঞ্চকে আমরা ধরে রাখতে চাই, ঐক্য ধরে রাখতে চাই।

বামপন্থি অন্য দলগুলোর সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ কিংবা আলোচনা হয়?

সিপিবি, বাসদ, কমিউনিস্ট লীগসহ বেশির ভাগ বাম দলগুলোর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ ও আলোচনা হয়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সবারই একটা দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ আছে। আমরা বরাবরই চেয়েছি তারা একটা ভূমিকা পালন করুক, অভ্যুত্থানের পরেও। কারণ রাজনীতির ভারসাম্যটা যেখানে দক্ষিণ দিকে চলে যাচ্ছে সেখানে আমরা চেয়েছি বামপন্থিরা যত বেশি সম্ভব সামনে আসুক। নিজের দলের ব্যানার নিয়ে হোক বা জোট নিয়ে। 

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি দুই দশক পেরিয়েছে। উল্লেখযোগ্য সময় পেরিয়ে আসার পরও কর্মী-সমর্থক বাড়েনি। নতুনরা কেন যুক্ত হচ্ছে না, সংকট আসলে কোথায়?

এবারের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দলের বিকাশের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারণ এবারের এই ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে বিএনপির বাইরে যে দু-তিনটি দল অনেক বেশি সামনে এসেছে, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি তাদের অন্যতম। আর দলের একটা ব্যাপক পরিচিতি তৈরি হয়েছে, দলের নেতৃত্বের একটা ব্যাপক পরিচিতি, গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে। গত ৯ মাসে জেলায় জেলায় আমাদের কাজ বৃদ্ধি পেয়েছে, উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়েছে। নতুন অনেকেই এখন পার্টিতে যুক্ত হয়েছে। পুরোনো বামপন্থিদের একটা অংশ ফ্যাসিবাদের অংশীদার ছিল, যার ফলে আমাদের ব্যাপারে মানুষের একটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, সন্দেহ ও দ্বিধা ছিল। কিন্তু অভ্যুত্থানে আমাদের যে ভূমিকা তাতে আমরা একটা ভরসার জায়গা তৈরি করতে পেরেছি। আমি বিশ্বাস করি, আগামী দিনগুলোতে দলগতভাবে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বিকাশ, সম্প্রসারণ এবং নতুন প্রাণ পার্টিতে যুক্ত হবে। 

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। অতিসম্প্রতি মিয়ানমারকে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের মন্তব্য বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ বিষয়গুলো কীভাবে দেখছেন?

ভারত তো একটা ফ্যাসিস্ট রেজিমকে অন্ধভাবে সমর্থন করতে গিয়ে গোটা বাংলাদেশ এবং তার ১৮ কোটি জনগণকে বিরোধিতার জায়গায় নিয়ে গেছে। এর দায়টা ভারতের। আওয়ামী লীগ যেকোনোভাবে ক্ষমতায় থাকতে অনুগত একটা পররাষ্ট্রনীতি, ভারত তোষণনীতি অনুসরণ করেছে। হাসিনার পতনকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মনে করেছেন এটা তাদেরই পতন। বাংলাদেশের যে মর্যাদা নিয়ে নতুন করে উত্থান ঘটেছে- এই পরিবর্তনটাকে ভারত এখনো মেনে নেয়নি। ফলে সে জায়গা থেকে ভারতের বাংলাদেশবিদ্বেষী একটা তৎপরতা এখন আমরা দেখি। নতুন পরিবর্তনকে ভারতের গ্রহণ করা দরকার, উপলব্ধির মধ্যে নেওয়া দরকার। একটা সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে সমতা, ন্যায্যতা, সমমর্যাদা বা সম-অংশীদারির ভিত্তিতে আমরা ভারতের সঙ্গে গণতান্ত্রিক সম্পর্ক তৈরি করতে চাই। এখন ভারতকে ঠিক করতে হবে এই মর্যাদার ভিত্তিতে তারা সম্পর্ক তৈরি করতে চায় কি না। 

আর মিয়ানমারের বিষয়ে সরকার যেভাবে মানবিক করিডর দেওয়ার কথা বলেছে- আমি বলব এটা অন্যায়। যদিও পরবর্তী সময়ে সরকার বলেছে, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত তারা গ্রহণ করেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, বোঝাপড়া ছাড়া এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত নয়। সরকারের পক্ষে সেটা সম্ভবও নয়। পৃথিবীর বহু দেশের জন্য এ ধরনের করিডরের এক্সপেরিয়েন্স ভালো নয়, অনেক দেশের জন্য এটা বুমেরাং হয়েছে। মানবিক করিডর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য সামরিক করিডর হয়ে উঠবে কি না সেটাও ভাবতে হবে। আমাদের এ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে পরাশক্তিগুলোর যে তৎপরতা, তাতে বাংলাদেশের জমি তাদের জন্য ব্যবহার হবে কি না করিডরের নামে- এমন অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এগুলোকে বিবেচনায় না নিয়ে হঠাৎ করে মানবিক করিডর দেওয়া যায় না। আর আমরা তো ২০১৭ থেকে মানবিক দায়িত্বই পালন করে আসছি। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের কক্সবাজারের গোটা অঞ্চলে পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী কীভাবে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন করবে, সেটাই আমাদের মূল ইস্যু। সুতরাং নতুন করে আমরা কোনো বিপদে পড়তে পারি এবং আমাদের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে- এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকারের নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫