
মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী
মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী—মাঠের বাইরে থেকেও নতুন দিশা দেখাচ্ছেন দেশের ফুটবলকে। ২০১১ সালে যশোরে শামস-উল-হুদা একাডেমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফুটবলের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্কের শুরু।
ক্রীড়া সংগঠক থেকে দেশের ফুটবল উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি বাফুফের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। প্রতিটি ধাপে তিনি ফুটবলকে ফিরিয়ে আনছেন জনসাধারণের হৃদয়ে। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়, একাডেমি গড়ে তোলা থেকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন, প্রবাসী ফুটবলারদের আনায় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি স্থানীয় মেধা বিকাশ—সবকিছুতেই তার স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা ফুটবলের গুণগত উন্নয়নের ধারায় প্রাণ যোগাচ্ছে।
বিশেষ সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে বাংলাদেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর দৃষ্টিভঙ্গি ও নানা উদ্যোগের কথা।
ফুটবলের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক এবং সম্পৃক্ততার শুরুটা কেমন ছিল?
২০১১ সালে যশোরে শামস-উল-হুদা একাডেমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফুটবলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হই। তার আগে আমাদের ‘জাহেদী ফাউন্ডেশন’ যশোর-ঝিনাইদহ অঞ্চলে বিভিন্ন খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতা করত। আমার শ্বশুর শামস-উল-হুদা ছিলেন একজন খ্যাতিমান ক্রীড়া সংগঠক। তার অনুপ্রেরণাতেই একাডেমিটি প্রতিষ্ঠা করি। ছোট পরিসরে শুরু হলেও এখন এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান।
যশোরে জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্প আয়োজনে ভবিষ্যতে কী পরিকল্পনা রয়েছে?
সম্প্রতি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ১৫ দিনের ক্যাম্প ছিল আমাদের একাডেমিতে, যা ছিল ঢাকার বাইরে প্রথম জাতীয় দলীয় ক্যাম্প। নিরিবিলি পরিবেশ ও উন্নত সুযোগ-সুবিধায় তারা সন্তুষ্ট ছিল। আমরা তিনটি মাঠ প্রস্তুত রেখেছিলাম। এই অভিজ্ঞতা থেকে অনূর্ধ্ব-১৭ সাফ ও এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ সামনে রেখে আমরা অন্তত দুই মাসের ক্যাম্প আয়োজন করতে চাই, যাতে দলীয় সমন্বয় আরও ভালো হয়।
দেশের ফুটবলকে প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী করতে আপনারা কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন?
ফুটবল বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। তবে এতদিন পৃষ্ঠপোষকতার ঘাটতি ছিল। এখন আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি, ফুটবলকে তার পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে আনতে। দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসেই ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। ফুটবলের জাগরণ শুরু হয়েছে, এটাই আমাদের অনুপ্রেরণা।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ফুটবলকে আরও সক্রিয় করতে চাই। ২৩ মে যশোরে এএফসি গ্রাসরুট ফুটবল ডে আয়োজন করছি। সেখানে ফেডারেশনের সদস্যরা থাকবেন এবং ৮-১৪ বছর বয়সী প্রায় ৪০০-৫০০ শিশু অংশ নেবে। ফিফার নির্দেশনায় ২০-২৫ মে ফুটবল সচেতনতা সপ্তাহেও নানা কর্মসূচি থাকবে। এভাবেই আমরা তৃণমূল থেকে ফুটবলকে গড়ে তুলছি।
ক্রীড়া উপদেষ্টা প্রবাসী নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় মেধা গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলারের উন্নয়নে বাফুফের পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গি কী?
আমি উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে একমত। প্রবাসীরাও দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে দেশের নিজস্ব মেধা খুঁজে বের করাটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। এজন্য আমরা স্কুল ফুটবল চালু করতে চাই এবং জেলা-উপজেলায় লিগ শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এতে করে মফস্বল থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে আসবে। এরপর তাদের বাছাই করে বিপিএল, ফেডারেশন কাপসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলানো যাবে, যা দেশের ফুটবলে গুণগত পরিবর্তন আনবে।
প্রবাসী ফুটবলারদের আগমনে দেশের খেলোয়াড়েরা কি অস্তিত্ব সংকটে পড়বেন?
আমি তেমনটা মনে করি না। প্রবাসী ফুটবলারের সংখ্যা খুবই কম—গতবার ছিল কেবল হামজা, এবার হয়ত এক-দুই জন বাড়বে। ২৩-২৪ জনের স্কোয়াডে দুজন প্রবাসী থাকলে দেশি খেলোয়াড়দের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে যেমন ২৩ জনের মধ্যে দুজন প্রবাসী আছে। আসলে যারা ভালো খেলবে, তারাই জায়গা পাবে—প্রবাসী হোক বা দেশি। আর ক্যাম্পে একসঙ্গে থাকলে একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়, তখন দেশি-বিদেশির ভেদাভেদও থাকে না।
একাডেমি বিষয়ক আপনার অভিজ্ঞতা বাফুফে কীভাবে কাজে লাগাচ্ছে? বাফুফে কি নিজস্ব একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ একাডেমি গড়তে চায়?
আমরা সারা দেশে ২০০টির বেশি একাডেমিকে তালিকাভুক্ত করেছি। তাদের মধ্যে ১৭টি পেয়েছে ‘টু-স্টার’ স্বীকৃতি, মানে তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাকি একাডেমিগুলোকেও ‘ওয়ান স্টার’ দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছি। পরিকল্পনা রয়েছে তাদের কোচদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার।
আমরা আটটি বিভাগে আটটি স্বয়ংসম্পূর্ণ একাডেমি গড়তে চাই, যার জন্য ফেডারেশনের পাশাপাশি ক্রীড়ামোদীদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ছাড়া কক্সবাজারে ফিফা অনুমোদিত ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ নিয়েও কাজ করছি। কিছু জমি-সংক্রান্ত সমস্যা ছিল, তা সমাধান হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে উপমহাদেশের অন্যতম সেরা একাডেমি হবে।
জুনে দেশের মাটিতে হামজার প্রথম ম্যাচ। এই ম্যাচ ঘিরে কোনো বিশেষ আয়োজন থাকবে কি?
অনেক দিন পর জাতীয় স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ফুটবল ফিরছে। ১০ জুনের ম্যাচকে কেন্দ্র করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ স্টেডিয়াম প্রস্তুতের কাজ করছে। সেই উচ্ছ্বাস ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রচার-প্রচারণা ও সাংগঠনিক দিক থেকে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছি। আশা করছি, দারুণ একটা ম্যাচ উপভোগের সুযোগ পাবেন ফুটবলপ্রেমীরা।