Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

‘বাজেটের কিছু প্রস্তাব জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’

Icon

ড. মোস্তাফিজুর রহমান

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৫, ১৮:০২

‘বাজেটের কিছু প্রস্তাব জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান

একজন অর্থনীতিবিদ এবং বর্তমানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো হিসেবে কাজ করছেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন অর্থনীতিবিষয়ক নীতি ও গবেষণার কাজ করছেন। সম্প্রতি পেশ করা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। তার সঙ্গে কথোপকথনে অংশ নিয়েছেন মো. হারুন-অর-রশিদ

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় টাকার অঙ্কে বাজেটের আকার কমছে সাত হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু প্রস্তাব জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, যে কারণে জুলাই আন্দোলন হয়েছে, এই বাজেটে সুনির্দিষ্টভাবে সেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার কথা উল্লেখ নেই। 

ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাট কেনায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। নৈতিকভাবে এটি কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। অথচ বাজেটে পাচারকৃত অর্থ সম্পর্কে স্পষ্ট খতিয়ান উপস্থাপন করা হয়নি। একদিকে কালো টাকা বৈধ করার প্রস্তাব, অন্যদিকে অর্থপাচার নিয়ে নীরবতা, সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে এর বৈপরীত্য আছে। এটি জুলাই আন্দোলনের বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থি। তিনি বলেন, বাজেটের মূল দর্শন হওয়া উচিত ছিল রাজস্ব নীতির মাধ্যমে আয়বৈষম্য হ্রাস করা। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনেও এটি প্রধান দাবি হিসেবে উঠে এসেছে। বাজেটে কর ও অন্যান্য নীতির মাধ্যমে বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে নীতিগত দিক থেকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত মেলে না।

সিপিডির এই গবেষক বলেন, বাজেট যা দেওয়া হয়েছে সেখানে এনবিআরের সংস্কারের বাজেট হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটি তো হয়নি। করমুক্ত আয়ের যে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে তা আগামী অর্থবছরে যোগ হবে, তখন মূল্যস্ফীতি আরো বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনকে মাথায় রেখে কিছুটা সংস্কার করার কথা চিন্তা করা হয়েছে। টার্নওভার ট্যাক্স একটি চাপ তৈরি করবে। নতুন নতুন জায়গায় রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, বাজেটের আকারের দিক থেকে ব্যতিক্রমী, যা চলতি বছরের বাজেটের চেয়ে ছোট। প্রস্তাবিত বাজেটে অবকাঠামোর পরিবর্তে জনগণের ওপর জোর দিয়ে, প্রবৃদ্ধির বদলে সামগ্রিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত এই লক্ষ্যগুলোর জন্য বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়নি। ২ জুন বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। 

প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫.৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি দুই লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩.৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ এবং এডিপি দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা, যা ৬৩.২ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি, আগের মতোই সাড়ে তিন লাখ টাকা অপরিবর্তিত থাকছে। তবে ২০২৬ ২৭ ও ২০২৭-২৮ করবর্ষের জন্য স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।

গেজেটভুক্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এ আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’ করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে স্বাভাবিক ব্যক্তি ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবার করদাতাদের জন্য ২০২৬ ২৭ ও ২০২৭-২৮ করবর্ষে মোট আয় করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম করলে ন্যূনতম করের পরিমাণ এলাকা নির্বিশেষে পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন করদাতাদের ন্যূনতম করের পরিমাণ এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫