বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের সবাই বন্ধুর মতো : নাহিদ রানা

হিমু আক্তার
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৬:১০

দেশের জার্সিতে এরই মধ্যে ১৪ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন নাহিদ রানা। সর্বোচ্চ গতিতে বল করে রীতিমতো তারকাও বনে গেছেন। এমনকি প্রতিপক্ষের ভাবনায় থাকেন এই ২২ বছর বয়সী পেসার। কিন্তু সেই নাহিদ আবার বন্ধুদের কাছে আগের মতো। বরং বন্ধুদের কাছে গেলে তারকা ব্যাপারটাই আসে না তার মাঝে। মাত্র চার বছরের মধ্যে জীবনের বাঁকবদলেও বদলাননি নাহিদ। ক্যারিয়ারের নির্দিষ্ট কোনো আইকনও নেই। শুধু ক্যারিয়ার শেষে চান, দেশের মানুষ যেন তাকে মনে করে। শুধু এটুকুই চাওয়া নাহিদের। সম্প্রতি সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন এই তরুণ সেনসেশন।
টিভিতে দেখা নায়কদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করছেন। সবমিলিয়ে কেমন কাটছে?
আসলে এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। শুধু এটুকু বলব, এটা অনেক উপভোগ্য। আমি নিজেও কখনো ভাবতে পারিনি। এই অনুভূতি অন্য রকম। মনে হয়েছে জীবনটাই বদলে গেছে। উপভোগ করছি এটাই বলতে পারি।
একজন তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে অভিজ্ঞতা এখন পর্যন্ত কেমন হলো?
সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো কাটছে। অনেক উপভোগ করেছি। যাদের খেলা টিভিতে দেখতাম, যাদের সব সময় তারকা ভেবে এসেছি, তাদের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে পারা আমার কাছে অবশ্যই স্মরণীয়। সিনিয়রদের সঙ্গে এভাবে মিশতে পারা, একসঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করতে পারাÑএটা আসলেই অন্য রকম।
সিনিয়ররাও আপনার অনেক সুনাম করেছেন, এটা কেমন লাগছে?
এটা তো অনেক বড় পাওয়া। সব ক্রিকেটার মাঠ ও মাঠের বাইরে আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছেন। আমি যে জুনিয়র, সেটা আমাকে ড্রেসিংরুমে বুঝতেই দেওয়া হয়নি। সবাই আমাকে বন্ধুর মতো মেনে নিয়েছেন। কেউ ছোট হিসেবে ট্রিট করেননি। বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের সবাই বন্ধুর মতো। মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক ভাইয়েরাও যখন খেলেছেন বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেছেন। আমি যে ছোট সেটা বুঝতেই দেননি। এটা আমার খুব ভালো লেগেছে।
আপনি ১৫২ কিলোমিটার গতি তুলেছিলেন, সামনে কত তুলতে চান?
আমার এটা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো টার্গেট নেই। ইচ্ছা আছে, যখন একাদশে সুযোগ পাব তখন নিজের সেরা গতিটা উপহার দেওয়া ও দলের যে পরিকল্পনা থাকবে সেটা এক্সিকিউট করা। দলের জন্য যেটা ভালো হবে দিন শেষে সেটাতেই ফোকাস রাখতে চাই।
ক্যারিয়ারে কার উইকেট নেওয়ার স্বপ্ন দেখেন?
নাহ, এ রকম কোনো স্বপ্ন নেই যে কারো উইকেট নিতেই হবে। এটা উল্টো মানসিক চাপ দেবে। আমি আমার সেরাটা দিয়ে বোলিং করব। এরপর যে উইকেটটা পাব, সেটাই আমার কাছে স্পেশাল। আমার কাছে স্পেশাল ব্যক্তি নন, স্পেশাল হলো উইকেট-সেটা যারই হোক।
দেশের হয়ে রেকর্ড গতির বোলিং আপনার। নিজেকে কিছুটা বিশেষ মনে হয় কি না?
নাহ, আলাদাভাবে নিজেকে বিশেষ কিছু মনে হয় না। আমি নিজের চেষ্টাটা করছি। সব সময় নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে চেষ্টা করতেছি। এর জন্য পরিশ্রম করছি। একটা ডিসিপ্লিন লাইফে চলার চেষ্টা করি। যথাসময়ে ঘুমানো, সময়মতো খাওয়া-এমন সবকিছু একটা নিয়মের মধ্যে রাখার চেষ্টা করি।
জাতীয় দলে খেলছেন এখন। বন্ধুদের কাছেও কি তারকা হয়ে উঠেছে নাহিদ রানা? তার জীবন কতটা বদলেছে?
আসলে যারা বন্ধু তাদের সঙ্গ সব সময় এক রকম। তাদের কাছে গেলে তারকা ব্যাপারটা আসে না। তাদের সঙ্গে আমার ওমন সম্পর্ক না। বন্ধুত্ব আমাদের আগের মতোই আছে। বন্ধুদের সঙ্গে আমি আগে যেমন ছিলাম এখনো তেমনই আছি। পরিবারেও একই। আমি মাঠে ভালো করেছি, পরিবারের সবাই খুশি। তাদের ভালো লাগছে। সবাই আমার এই মুহূর্তগুলো উপভোগ করে। পরিবার থেকে সব সময় একটা কথাই বলে, সুস্থ থেকো আর মানুষের কাছে দোয়া চাইবা।
বাড়িতে মা-বাবা খেলা দেখেন? জাতীয় দলে খেলার সময় তাদের সঙ্গে কি কথা হতো প্রতিদিন?
আগে তেমন খেলা দেখতেন না। বুঝতেন না। এখন একটু একটু খেলা দেখেন। হয়তো খেলা পুরোপুরি বোঝেন না। তবে দেখেন এখন। খেলার দিন প্রতিদিনই মাকে কল দিতাম। মা ভালো খেলার জন্য বলতেন।
ক্রিকেট খেলা নিয়ে ছোটবেলায় কোনো বিশেষ স্মৃতি আছে কি?
ক্রিকেট নিয়ে স্মৃতি তো বহু আছে। একবার বাসায় আম্মু আমাকে বকা দিয়েছিল। তখন স্কুল থেকে পালিয়ে খেলতে চলে গেছি। তো ক্রিকেট খেলে সেদিন বাসায় ফিরতে আমার অনেক দেরি হয়ে যায়। আম্মা সেদিন অনেক টেনশন করছিল। আমি বুঝতে পারিনি আম্মু এত চিন্তায় পড়ে যাবেন। সেদিন অনেক বকা দিয়েছেন। আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এটা আমার মনে এখনো গেঁথে আছে।
পেস বোলিংয়ে কাউকে আইকন মানেন কি?
আসলে সেভাবে কাউকে অনুসরণ করা হয় না। ছোট থেকে খেলা দেখছি তো, সবাইকেই ভালো লাগে। বিশেষভাবে কাউকে ফলো করা হয় না বা বিশেষভাবে কাউকে আইকন মানা হয় না। সবার খেলাই ভালো লাগে।
ক্যারিয়ারে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
ব্যক্তিগত লক্ষ্য একটা আছে। সেটা হলো যখন আমি ক্রিকেট ছাড়ব তখন সবাই যাতে বলেন যে, বাংলাদেশের একটা পেস বোলার ছিল।