Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

দাবা ও পরিবারই আমার জীবন : রানী হামিদ

Icon

হিমু আক্তার

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৩:১৩

দাবা ও পরিবারই আমার জীবন : রানী হামিদ

বয়সের কোঠা আশি পেরিয়েছে আগেই। তবে এখনো বাংলাদেশের পতাকা জড়িয়ে দেশে-বিদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। দাপট দেখাচ্ছেন দাবার বোর্ডে। বলছি, চার দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের দাবায় প্রতিনিধিত্ব করা আন্তর্জাতিক মাস্টার রানী হামিদের কথা। সায়েদা জেবুন্নেসা খাতুন থেকে যিনি এখন সবার কাছে দাবার রানী। আবার তরুণ প্রজন্মের দাবাড়ুদের কাছে যিনি ‘প্রিয় দাদি’। ৮২ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি তার চলমান জীবন নিয়ে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হিমু আক্তার...


এই বয়সে এসে দাবা খেলার অনুপ্রেরণা কীভাবে পান?

অনুপ্রেরণা তো আসলে নতুন করে পাওয়ার কিছু নেই। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবার মধ্যে নিজেকে রেখেছি। ছোট থাকতে বাবার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেতাম। বড় হয়ে যখন বিয়ে হয় তখন থেকে স্বামীর কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে খেলে আসছি। সন্তানেরাও অনুপ্রেরণা দিয়েছে। যত দিন আল্লাহ সুস্থ রাখেন খেলে যাব, ইনশাআল্লাহ।  

সম্প্রতি দিল্লি এয়ারপোর্টে বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেদিন আসলে কী ঘটেছিল?

আমাকে ও আন্তর্জাতিক মহিলা দাবাড়ু আয়েশা সুলতানাকে দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যান্ডমাস্টার ওপেন চেস টুর্নামেন্টে দাওয়াত করা হলে নিয়ম অনুযায়ী ভিসা নিয়ে দিল্লি এয়ারপোর্টে যাই। কিন্তু এয়ারপোর্টে নামার পরপর বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে তারা নানা প্রশ্ন করতে শুরু করে। অনেক প্রশ্নের পর শেষ পর্যন্ত আমাকে যেতে দিলেও আয়েশা সুলতানাকে তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে দিল্লি প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। ইমিগ্রেশন জানায়, ছয় মাস আগে আয়েশা নাকি মেডিক্যাল ভিসায় কলকাতা গিয়ে একটি টুর্নামেন্টে অংশ নেন। তখন আয়শা জানান, তিনি চিকিৎসার পাশাপাশি দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন। তখন ইমিগ্রেশন ছয় মাস আগের মেডিক্যাল কাগজপত্র দেখতে চায়। কিন্তু আয়েশা শুধু গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করার জন্য দিল্লি এসেছেন এবং কেবল খেলার কাগজপত্র এনেছেন। মেডিক্যাল কাগজপত্র সব ঢাকায় আছে, এরই মধ্যে দিল্লি চেস ফেডারেশন ফোন করে অনুরোধ করলেও তারা তুচ্ছ অজুহাত দেখিয়ে আয়েশাকে প্রবেশ করতে দেয়নি। এ ছাড়া আমাদের দুজনের সঙ্গে তারা অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে। প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের কাছে এ ধরনের আচরণে আমি হতবাক হয়েছি। দুই দেশের মাঝে কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো-মন্দ হতেই পারে। কিন্তু ক্রীড়াবিদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়, দুর্ব্যবহার করাটা কোনো সভ্যতার মধ্যে পড়ে না। কোনো দেশে খেলতে এসে আমরা যদি চিকিৎসা করি অথবা শপিং করি এটা অন্যায় কিছু না।


দাবায় যুক্ত হওয়ার গল্পটা কেমন বা গল্পটা কেমন ছিল? 

আসলে আমি ছোটবেলা থেকে দাবা খেলে আসছি। তখন দেশে মহিলা দাবা চালু হয়নি। তাই প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়নি। এরপর যখন চালু হলো তখন থেকে চেষ্টা করেছি নিজেকে যুক্ত রাখতে। সেভাবেই আসা।

সায়েদা জেবুন্নেসা খাতুন থেকে ‘রানী হামিদ’ হয়ে ওঠার জার্নিটা শেয়ার করবেন কি? 

আসলে আমার ডাক নাম ‘রানী’, এ নামে আমি বেশি পরিচিত। ছোটবেলায় আব্বা রানী বলে ডাকতেন। সেখান থেকেই শুরু। বিয়ের পর স্বামীর নাম যোগ হয়ে সবার কাছে হয়ে গেলাম ‘রানী হামিদ’। আগে রানী নামে লজ্জা পেলেও এখন উপভোগ করি। দাবায় এখন আমি সবার কাছেই রানী। 

সপ্তম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে আপনার নামও। কেমন লাগে এমন একটি স্বীকৃতি পেয়ে?

আসলে এখানে স্বীকৃতি পাওয়ার তো কিছু নেই। আমি স্বাধীনতার পর থেকেই স্বীকৃত ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। এত যুগ ধরে ক্রীড়া ক্ষেত্রে আছি। তবে অবশ্যই ভালো লাগল সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আমার নাম আসাতে। আশা করি, নতুন প্রজন্মের দাবা খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। দাবা নিয়ে তাদের মধ্যে জানাশোনা হবে ছোটবেলা থেকে। এটা ওদের দাবার প্রতি অনুপ্রেরণা জোগাবে। 

কাকে সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ মনে হয়েছে নিজের কাছে?

প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে কাউকে দুর্বল ভাবি না। সব প্রতিপক্ষকেই বোর্ডে কঠিন ভাবি। তবে এর মধ্যে গ্রান্ডমাস্টাররা সবাই কঠিন প্রতিপক্ষ ছিলেন। 

দাবার বাইরে পরিবারের সঙ্গে জীবন কেমন আপনার?

পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুন্দর সময় কাটে। বেশির ভাগ সবাই খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত, তাই বেশির ভাগ সময় খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। আমাদের পরিবারটাই তো আসলে ক্রীড়া ঘরানার। আমার স্বামীও ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন। ছেলেরাও খেলার সঙ্গে। সবমিলিয়ে দাবার বাইরের সময় পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করি। পরিবার আর দাবাই আমার জীবন। 

ফিদে বা গ্র্যান্ডমাস্টার হতে না পারার আক্ষেপ কি আছে?

আসলে গ্রান্ডমাস্টার হতে হলে আন্তর্জাতিক অনেক টুর্নামেন্ট খেলতে হয়। এত টুর্নামেন্ট খেলতে অনেক বাজেট লাগে, যা দাবা ফেডারেশন বা আমার ব্যক্তিগতভাবে সম্ভব হয়নি। এতে আক্ষেপ করার কিছু নেই। যতটুকু পেয়েছি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া 

মা দাবাড়ু, ছেলে ফুটবলার-এক ঘরে দুই কিংবদন্তির উত্থান কীভাবে?

এটাও আল্লাহর রহমত। পরিবারের তিনজন-আমি দাবায়, আমার স্বামী ক্রীড়া সংগঠক ও ছেলে ফুটবলার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া একটি বিরল প্রাপ্তি, যা দেশে বা বিদেশে আছে কি না জানি না। এ ছাড়া আমার আরো দুই ছেলে সোহেল হামিদ সাবেক স্কোয়াশ চ্যাম্পিয়ন ও প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটার এবং শাহজাহান ববি হামিদ সাবেক জাতীয় হ্যান্ডবল দল ও প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলার ছিল। আমরা পুরোপুরি স্পোর্টস পরিবার।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫