Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

যে সন্তানেরা জীবন দিয়েছে তাদের রক্তঋণ বৃথা করা যাবে না

Icon

খোকন তালুকদার

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:০২

যে সন্তানেরা জীবন দিয়েছে তাদের রক্তঋণ বৃথা করা যাবে না

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব ড. খন্দকার মোহাম্মদ কবিরুল ইসলাম

ড. খন্দকার মোহাম্মদ (খ ম) কবিরুল ইসলাম। ১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয় তার। ২০০১ সালে পদোন্নতি পেয়ে হন সিনিয়র সহকারী সচিব। পরের স্তরে পদোন্নতির জন্য উপযুক্ত হন ২০০৬ সালে। এরপর কেটে গেছে দুই দশক। কোনো এক অজানা কারণে ২৫ বছর পড়ে থাকেন একই পদে। চলতি বছরের গত ১৫ আগস্ট তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। অবসর গ্রহণের ঠিক আগের দিন অর্থাৎ শেষ কর্মদিবসে পদোন্নতি পেয়ে হন সরকারের সিনিয়র সচিব। দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে। তার দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা, সিভিল সার্ভিসের মানসিকতা এবং আগামীর বাংলাদেশে প্রশাসনের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, সেসব নিয়ে কথা বলেন দেশকাল নিউজ ডটকমের সঙ্গে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক খোকন তালুকদার।


আপনার চাকরিতে প্রবেশের শুরুটা কীভাবে হলো?

আমার পরিবারে প্রায় সবাই শিক্ষকতার সঙ্গেই জড়িত। বাবা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমিও শিক্ষক হব, এই স্বপ্নই ছিল মনে। কিন্তু পরিবার থেকে  সরকারি চাকরির দিকে আমাকে উৎসাহিত করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতকোত্তর শেষে ১৯৯৩ সালে ১১তম বিসিএসে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করি। প্রথম কর্মস্থল ছিল যশোর জেলায়। এরপর ২০০১ সালের ৭ মে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে উন্নীত হই। ২০০৬ সালে পরবর্তী ধাপে পদোন্নতির জন্য উপযুক্ত হই। কিন্তু সেই পদোন্নতি ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের আগপর্যন্ত আর হয়নি।  দীর্ঘ ২৫টি বছর একই পদে ব্লক থেকে কেটে গেছে। আমার জীবনের সবচেয়ে দুর্বিষহ ও কঠিন সময় কেটেছে ২০০৯ সালের পর থেকে, অর্থাৎ গত ১৫ বছর।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কল্যাণে অবহেলার সেই কারাগার থেকে মুক্তি পাই। ২০২৪ সালের আগস্টের ১৩ তারিখে উপসচিব এবং ১৮ তারিখে যুগ্ম সচিব হই। একই মাসের ২৫ তারিখে হই অতিরিক্ত সচিব। এরপর ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখে কর্তৃপক্ষ আমাকে সরকারের সচিব পদে পদোন্নতি দেয়। অবসর গ্রহণের শেষ কর্মদিবস ২০২৫ সালের ১৪ আগস্ট হয়ে যাই সরকারের সিনিয়র সচিব। 

আপনি দীর্ঘ সময় পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এমন সিদ্ধান্তের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন? 

দেখুন, আমার শাস্তি হয়নি বিষয়টি এমন নয়। আমাকে সর্বোচ্চ শাস্তিই তারা দিয়েছে। প্রশাসন চালাতে গিয়ে সরকার নানা পলিসি প্রয়োগ করে থাকে। আমাকে একই পদে রেখে মানসিকভাবে শাস্তি দেওয়াও সেটির অংশ। কর্তৃপক্ষ আমার নামে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেয়েছে বলে আমার জানা নেই। কিংবা কেউ অভিযোগ করেছে বলেও শুনিনি। আমার বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনেও (এসিআর) বিরূপ কোনো মন্তব্য নেই। নেহায়েত অপছন্দের তালিকায় রেখে আমার ওপর এই জুলুমের মানসিকতা সে সময়ের প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আমার ওপর প্রয়োগ করেছে। মাঝে মাঝে নিজের প্রতি অবিচারের বিষয়ে সিনিয়রদের বলেছিও। কিন্তু তারা কোনো সদুত্তর দেননি। আমার থেকে ১২ বছরের জুনিয়র অফিসার, তার অধীনেও চাকরি করতে হয়েছে। 

রাজনৈতিক ধ্যানধারণা পোষণ বা সংশ্লেষ থাকলে, এমন কোনো আচরণ প্রকাশ পেলেও পদোন্নতি দেওয়ার রেওয়াজ কম বা দেওয়া হয় না। আবার সরকার সমর্থিত নয় বা ভিন্ন ধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার ইঙ্গিত পেলে সেটিকে আরো শক্তভাবে আমলে নেওয়া হয়। আপনার ক্ষেত্রে কি এমন কোনো রাজনৈতিক সংশ্লেষ ছিল বলে মনে করেন?

রাজনীতির বিষয়ে আপনাকে যদি বলি, ধরেন সিএসপি (সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান) অফিসার। যাদের প্রশাসনে নিয়োগ দেওয়ার পর তারা প্রফেশনাল এথিকস বা নিরপেক্ষভাবে কাজ করে গেছেন। তারাও তো ছাত্রজীবনে একসময় কোনো না কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এদের অনেকেই ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ বা অন্যান্য আরো দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু চাকরিতে ঢোকার পর তারা সেই মানসিকতা পরিবর্তন করেছেন। আবার সরকারের দ্বারা সেই মানের প্রশিক্ষণও পেয়েছেন। ফলে এমন একটা এনভায়রনমেন্ট তারা তৈরি করেছিলেন। যেখানে সরকারও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করেনি। ফলে তারা তাদের কর্মকাল স্মুথভাবে পার করেছেন। তাদের ওপর সবাই আস্থা রাখত। সে আস্থার মূল্যায়নও তারা পেয়েছেন। কিন্তু নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কিছু সমস্যা থেকেই গেছে।

দলীয় রাজনীতির দুর্বল মানসিকতা থেকে অফিসাররা বের হতে পারেননি। ছাত্রজীবনের রাজনৈতিক মানসিকতাকে কর্মক্ষেত্রেও আড়ালে-আবডালে, কখনো কখনো প্রকাশ্যেও প্রয়োগ করেছেন। প্রকাশ্যে রাজনৈতিক সেøাগান দিতেও দেখা গেছে অনেককে। অন্য সরকারের সময়েও কিছু ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বিগত সরকারের রেজিমে, বিশেষ করে হাসিনার আওয়ামী লীগের সময়ে দলীয়করণ বেশি হয়েছে। নিয়োগের আগেই গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানোর যে রেওয়াজ, তা একবারে নিম্নতম স্তরে গিয়ে ঠেকেছে। কোনো একজন নিয়োগ প্রত্যাশীর বাবা কোন দল করে বা তার দাদা-নানা কোন দল করে অথবা কে অমুক ব্যাংকে চাকরি করে ইত্যাদি তথ্য দিয়ে একজন প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় বের করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 

ব্যুরোক্রেসি বা আমলাতন্ত্রের সবচেয়ে বড় একটা বৈশিষ্ট্য হলো তারা নিরপেক্ষ থাকবে। তারা পেশাদার হবে। এই জায়গায় কোনো রাজনৈতিক বা গোষ্ঠীগত পক্ষপাতিত্ব থাকবে না। কোনো পক্ষের হয়ে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে না। তারা সরকার ও জনগণের মধ্যে ব্রিজ হয়ে সংযোগ রক্ষা করবে। সরকার পরিবর্তন হলেও আমলাদের পরিবর্তন হয় না।

সরকার পরিবর্তন হলে নতুন সরকারের সঙ্গে তারা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি, রীতি ও পদ্ধতি, তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সংযোগটা ধরে রাখে। যাতে করে দেশের কোনো ক্ষতি না হয়। রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর, সেটি যেন কন্টিনিউ করে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে কে ক্ষমতায় এলো-গেল এটার জন্য দেশ ও মানুষের স্বার্থ যেন বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় থাকে আমলাদের। তবে টপ মোস্ট লেভেলে কিছু কিছু নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ধ্যানধারণা কিছুটা ইতিবাচক বিবেচনায় নেওয়া হয়। এটি প্রচলিত। আগেও হয়েছে। 

হাসিনা সরকার আমলাদের দিয়ে শক্তি প্রয়োগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আমরা দেখলাম, ডাকসু নির্বাচনের সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে শুভ কামনা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলেন। পরে তাকে প্রত্যাহারও করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। দল নিরপেক্ষতার এই সময়েও এমনটা হচ্ছে কেন? তাহলে গণমানুষের আস্থা কীভাবে ফিরে আসবে বলে মনে করেন?

আমাদের আমলাতন্ত্রের সিস্টেমটাই গলদ হয়ে গেছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা, অতি আবেগে অতি উৎসাহী হয়ে এটা করেছেন। এটা তার পেশাগত আচরণ নয়। এখানেই হলো প্রফেশনাল এথিকস। সে হয়তো ছাত্রদলের পক্ষে বলেছে। আরেকজন যদি জামায়াতের বা ছাত্রশিবির কিংবা অন্য কোনো দলের পক্ষে বলে তখন অবস্থা কী দাঁড়াবে? এরপর যে পক্ষ ক্ষমতায় আসবে, সে পুরস্কার পাবে। আরেকজনকে তখন চাপে পড়তে হবে। নানা হেনস্তার শিকার হতে হবে। যারা সার্ভিসে আছে, তাদের কোনো পক্ষ নেওয়াই উচিত নয়। কোন দলের প্রতি বিশেষ সহানুভূতি দেখানোটাও অপেশাদার আচরণ। এটি সার্ভিস রুলেরও বিরোধী। 

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব, তারপর যুগ্ম সচিব। এরপর অতিরিক্ত সচিব। তারপর সচিব পদে উন্নীত হলেন। সর্বশেষ আপনার অবসর গ্রহণের ঠিক আগের দিন ১৪ তারিখ আরো একটি পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র সচিব হয়েছেন। একই দিনে আবার অবসর। এক দিনের জন্য সিনিয়র সচিব হলেন কীভাবে? অনুভূতি জানাবেন কি?  

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমার ওপর অন্যায় করেছে, জুলুম করেছে। এই ইন্টেরিম সরকার আমাকে সম্মানিত করেছে। আমার ন্যায্য পাওনা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমাকে ১৫টি বছর পদোন্নতি দেয়নি হাসিনা সরকার। একজন অপরাধীরও অধিকার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু আমি তা পাইনি। চাকরি জীবনে এর চেয়ে আর বড় জুলুম নেই। বর্তমান সরকার মনে করেছে, আমাকে আমার প্রাপ্য ফিরিয়ে দেওয়া দরকার। আমি তাদের কাছে সুবিচার পেয়েছি। এমন বৈষম্যের শিকার কেবল আমি নই, আমার মতো আরো কয়েকশ অফিসার নিম্নতম পদে থেকেই অবসরে চলে গেছেন। অনেকে হতাশায়, গ্লানিতে স্ট্রোক করে মারা গেছেন। কেউ আবার পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিতে না পেরে চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। 

সচিব হওয়ার পর আপনার দপ্তরে কী কী উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা আপনার কাজের সাক্ষী হয়ে থাকবে, সিনিয়র সচিব হয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো কাজের কথা বা কোনো বিশেষ পত্র স্বাক্ষরের কথা কি আপনার মনে পড়ে?

বিশেষ কোনো উদ্যোগ নিতে পারিনি। তবে সহকর্মীদের পেশাগত নীতিতে অটল থাকার ক্ষেত্রে উজ্জীবিত রাখতে পেরেছি। দায়িত্ব (সচিব) নেওয়ার পর আমি সহকর্মীদের শুধু একটা কথাই বলেছিলাম, আমার হাতে সময় আছে আট মাস। মানে আট মাস পরে আমি অবসরে যাব। এই আট মাসে আমি আট বছরের কাজ করতে চাই। যদিও এটি সম্ভব ছিল না। কিন্তু এর দ্বারা সবাইকে উজ্জীবিত করতে চেয়েছি। কাজে গতি আনতে চেয়েছি। কোনো কাজ আমি ফেলে রাখিনি। এক কাজ নিয়ে কাউকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়নি। একই কাজে কাউকে দুইবারও আসতে হয়নি। আমি দপ্তর থেকে বিদায় হয়ে আসার আগের দিন পর্যন্ত কোনো কাজ পেন্ডিং রেখে আসিনি।

আমি শুধু মেসেজটা দিতে চেয়েছি, কাজগুলোকে দ্রুত করতে চাই। কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি সহ্য করব না। সিনিয়র সচিব হিসেবে বিশেষ কোনো পত্র জারি হয়নি আমার স্বাক্ষরে। কারণ এমন ক্ষেত্রে বিশেষ ইস্যু ও আরো উচ্চ মহলের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। আমি তো কয়েকটি ঘণ্টা মাত্র সিনিয়র সচিব হিসেবে থাকার সুযোগ পেয়েছি। আইনগতভাবে কোনো সমস্যা না থাকলে সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন করেছি সব। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দু-একটি চিঠিপত্র স্বাক্ষর করেছি মাত্র। 

এখন অবসর জীবনে এসে সাধারণ নাগরিকের চোখে প্রশাসনকে কীভাবে দেখছেন? আগের জুলুম বা তোষামুদে আমলাতন্ত্রের ধারা পরিবর্তন সম্ভব হবে বলে মনে করেন?

জুলাই বিপ্লবের চেতনা আমলারা এখনো সেভাবে ধারণ করছে না। আমলাদের চেঞ্জ হতে হবে। এর বিকল্প নেই। প্রশাসনে যদি তারা চেঞ্জ না হয়, তবে তারা সবার কাছে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। আমাদের যে জেন-জি এত ত্যাগ-তিতিক্ষা করে বৈষম্যের দেওয়াল ভেঙেছে। জাতিকে কারামুক্ত করেছে, ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করেছে। ন্যায্যতার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। নিজেদের চেঞ্জ না করলে তারা এই জেনারেশন, কিন্তু আমাদের প্রয়োজন মনে করবে না। আমি পদে থাকাকালেও আমার সহকর্মীদের বারবার বলেছি, আমাদের সেবাধর্মী হতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। যাদের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়, সংসার চলে, তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমলাতন্ত্রে পরিবর্তন আনাটা একটু কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। তবে অবশ্যই পরিবর্তন সম্ভব। নিজেদের পরিবর্তন না করলে নতুন প্রজন্মের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবে না। জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে। সুস্থ ধারায় পরিবর্তিত না হলে তাদের সামনে মাথা উঁচু নয়, নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। দেশে এখন প্রশাসনিক সংস্কার হচ্ছে। রাজনৈতিক সংস্কার হচ্ছে। ফলে নিজেদের চেঞ্জ করাটা অসম্ভব নয়। এটি সম্ভব। তবে হ্যাঁ, সেটির জন্য লিডারশিপ দরকার। এটি ব্যুরোক্র্যাসি ও পলিটিক্যাল পার্টি; দুই জায়গা থেকেই করতে হবে। ‘ফর দ্য বেটারমেন্ট অব দ্য পিপল’-এই ধারণার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষকেও এগিয়ে আসতে হবে।

বৈষম্য বিলোপের জন্য আমাদের যে সন্তানরা জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে তাদের এই রক্তের ঋণ বৃথা করা যাবে না। যারা লড়াই করেছে, তাদের মধ্যে আমার সন্তানও ছিল। আমার ছেলে হয়তো ফিরে এসেছে, কিন্তু অনেকের সন্তানই ফিরে আসেনি। আমার সন্তান নাও ফিরতে পারত। তাদের চোখের দিকে তাকালে বৈষম্য নিপাতের একটি ভাষা দেখতে পাই। 

আমাদের অনেক সম্ভাবনা আছে। এই সম্ভাবনাকে খেয়ে ফেলছে আমাদের দুর্নীতি ও অনীতিতে আক্রান্ত মানসিকতা। এক শ্রেণির আমলা কেবল দুর্নীতি করার ধান্ধায় থাকেন। এটি সচিবালয়েই আছে। আমাদের মননে কর্মস্পৃহা নেই। আমরা সকালে আসি, বেতন খাই। আবার বিকেলে তাইরে-নাইরে করে ঘরে ফিরি। এভাবেই আমরা দিন গুজরান করছি। কিন্তু আমি মনে করি, এই মোটিভেশনে আমাদের আসতে হবে। তা না হলে আমাদের নেক্সট জেনারেশনের কাছে জবাবদিহির মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। তারা আমাদের কিন্তু অবজার্ভ করছে। 

আমি আশাবাদী মানুষ। আমাদের সন্তানেরা যে বাংলাদেশের আশায় তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে, আশা করি আমরা তা অনুধাবন করে দুর্নীতিমুক্ত বৈষম্যহীন ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়তে পারব।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাকেও ধন্যবাদ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫