Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

‘খরচ বাঁচাতে চাইলে বেশি সময় লাগবে’

Icon

নিশাত বিজয়

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:১৯

‘খরচ বাঁচাতে চাইলে বেশি সময় লাগবে’

রাজধানী ঢাকায় একদিকে অতিরিক্ত রিকশা, ব্যক্তিগত বাহনের কারণে যানজট; অন্যদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ বাসের কালো ধোঁয়ায় বায়ুদূষণ থেকে বাঁচাতে স্বস্তির বার্তা নিয়ে তিন বছর আগে চালু হয়েছিল স্বপ্নের মেট্রোরেল। তবে ক্রমবর্ধমান যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী মেট্রোরেলে সময় বৃদ্ধি না হওয়া, কোচের সংখ্যা না বাড়ানোসহ একাধিক বিষয়ে যাত্রীদের আছে ক্ষোভ।  একই সঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা শহরজুড়ে মেট্রো মহাপরিকল্পনা পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা থাকলেও রাজনৈতিক সংকট, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, দাতাদের অতিরিক্ত ব্যয় দেখানোসহ একাধিক কারণে যথাসময়ে শেষ হচ্ছে না মেট্রোরেলের কাজ। এ বিষয়ে কথা বলেছেন মেট্রোরেলের অপারেশন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ। সাম্প্রতিক দেশকালের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতিবেদক নিশাত বিজয় ।

যানজটের নগরী ঢাকায় মেট্রোরেল স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেবার মান ও সময় বাড়ানো নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে, কী ভাবছেন? 

মেট্রোরেলের সময় বাড়ানোর জন্য আমাদের কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়। এটা বাড়ানোর জন্য যে ট্রায়াল রান দেওয়া লাগবে, সেটা এখন দিচ্ছি, আগামী সপ্তাহেও আরেকটি ট্রায়াল হবে, তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব যে কবে থেকে সময় বাড়ানো হবে। 

সম্ভাব্য কয় তারিখে মেট্রোরেলে চলাচলের সময়সীমা এক ঘণ্টা বাড়াতে পারবেন?

আমরা এটা (মেট্রোরেল) অক্টোবরের শেষে এক ঘণ্টা সময় বাড়ানোর চেষ্টা করছি।

আপনারা কি একই সঙ্গে টাইম-হেড (একটি মেট্রো থেকে অপরটি চলাচলের সময়ের পার্থক্য) কমানোর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন? 

একই সঙ্গে না। ওটাও (টাইম-হেড কমানো) ট্রায়াল রানের ভেতরে আছে। আমরা যখন টেকনিক্যাল বিষয়ে সবকিছু নিশ্চিত হব তখন নভেম্বরের প্রথম অর্ধে এক মিনিট করে কমাতে পারি। 

মেট্রো চলাচলের সংখ্যা বাড়াচ্ছেন, কিন্তু ট্রেনে কোচের সংখ্যা বাড়াচ্ছেন না কেন?

আমরা কোচের সংখ্যা এখন বাড়াতে পারছি না।  

সংকটটা কোথায়?

কোথাও সংকট নেই, কিছু টেকনিক্যাল বিষয় আছে। যেটা আমাদের সমাধান করে তারপর যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন শেষ হওয়ার পর আমরা কোচের সংখ্যা বাড়াতে পারি। তবে এটা বাড়ানো আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে হচ্ছে না।

আনুমানিক কত সময় লাগতে পারে? 

এখনো ওই পর্যায়ে যেতে পারিনি যে, কত সময় লাগবে সেটা বলতে পারব। এখন যেভাবে কাজ আগাচ্ছে হয়তো আরো ছয় থেকে আট মাস পর এসব বলতে পারব।  

মেট্রোর কোচ বাড়ালে তো তুলনামূলক কম খরচে বেশি যাত্রী নেওয়া সম্ভব হয়, সেদিকে আগাচ্ছেন না কেন?

না, না, কোচ বাড়ালেই যে সব কিছু (ব্যয় কমানো) সম্ভব, এটা সঠিক নয়। এটার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত আছে। লোড (যাত্রীসংখ্যা), বিদ্যুৎসহ কিছু বিষয় জড়িত আছে।  যদি কোচের সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ করা যেত, তাহলে তিন মিনিট পর পর রেলের দরকার ছিল না। তাহলে এক ঘণ্টা পরে আমি ১০০ বগি দিয়ে একবারে চালাতাম। অপারেশন চাহিদা আছে, জনগণের চাহিদা আছে, শুধু বগির সংখ্যা বাড়ালে তো হবে না। যেমন-সকালবেলায় তো হাফ লোড (অর্ধেক যাত্রী) থাকে না। এই সময়ে বগি বেশি হলে সেটা আরো আন-ইকোনমিক্যাল (ব্যয় বাড়াবে) হবে। যারা এটার ব্যাপারে মন্তব্য করে যে, এটা পয়সা বাঁচাবে, তারা হয়তো এসব বিশ্লেষণ না করেই বলে।

আগামী বছর তো কমলাপুর স্টেশন চালু হবে, তখন সারা দেশের ট্রেনযাত্রীরা মেট্রোতে উঠবে। তখন তো চাপ বাড়বে। সে সময় যদি কোচ না বাড়ানো হয় তখন চাপ সামলানো যাবে?

এটা তো দু-তিনটি উপায়েই করা যায়। শুধু কোচ বাড়িয়েই যে প্যাসেঞ্জার টানা যায় তা না, টাইম-হেড কমিয়ে যাত্রী চাহিদা পূরণ করতে পারেন। যেমন-এক ঘণ্টা সামনে বাড়াচ্ছি, ওভাবে করা যায়, আরো বিকল্প পথ আছে। 

প্রথমে কথা ছিল কমলাপুর মেট্রোস্টেশন ২০২৫ সালের মধ্যভাগে চালু হবে, এখন পরিকল্পনা ২০২৬ সালের শেষের দিকে হবে, বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী কি আগামী বছরে চালু করা সম্ভব হবে?

আগে (বিগত সরকার) কার কী পরিকল্পনা ছিল সেটা জানি না। আমরা বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা এখন থেকে আগামী বছরের শেষ কোয়ার্টারে চালু হবে ইনশাআল্লাহ।

কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে কমলাপুরের জন্যে আনা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছিল। সেটা পুনরায় জাপান থেকে কিনতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, এটার অগ্রগতি কী? 

অনেক কিছুর প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়ে গেছে, তবে এখনো পৌঁছেনি। 

এটার কারণে অতিরিক্ত কত টাকা ব্যয় হচ্ছে আপনাদের?

সব কিছু মিলে অতিরিক্ত প্রায় ২৮ কোটি টাকা খরচ হবে। তবে আমরা এটা কমলাপুর থেকে নেই, আমাদের রিজার্ভ যন্ত্রাংশ থেকে নিয়েছি।

নতুন দরপত্রে ভারতীয় কোম্পানি আগের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি মূল্যে পেয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, বিষয়টি কী?

নতুন দরপত্রে আর কি, এটা মতিঝিল-কমলাপুরের আগের দরপত্রটারই এক্সটেনশন। ওরা বেশি মূল্য (৭০ শতাংশ) চাইলেও আমরা সাফল্যের সঙ্গে ৩০ শতাংশ দাম কমিয়ে আনতে পারছি। 

তাহলে আগের থেকে কি ৪০ শতাংশ বাড়ছে?

বাড়ছে, তবে খুব বেশি না। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি দেখতে হবে, তারপর মূল্য সমন্বয়, সংশোধনের বিষয় দেখতে হবে, লোকবলের প্রয়োজনীয়তা দেখতে হবে। সব মিলিয়ে যা হয়েছে খুব বেশি না।

২০৩০ সালের ভেতরে যে মেট্রো মহাপরিকল্পনা চালু করার কথা ছিল সেটার অগ্রগতি কতদূর? 

এই মহাপরিকল্পনা আমরা (ডিএমটিসিএল) করিনি, আগের সরকার (সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ) করেছিল। ডিএমটিসিএল শুধু এক্সিকিউটিভ, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার কাজ করে, কিন্তু আমরা পরিকল্পনা করি না, এটা সরকার করে। 

তাহলে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কত দেরি হতে পারে?

কত দেরি হবে বিষয়টি এভাবে না দেখে, পাঠককে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। কোনো একটি মেট্রো প্রজেক্ট শুরু হলে অপারেশনে আসতে কমপক্ষে সাত বছর লাগে। আগামী বছরের মধ্যে কাজ শুরু হলে সেখান থেকে সাত বছর সময় ধরতে হবে। আমার চ্যালেঞ্জ আমি কবে কাজ আরম্ভ করব, এর সঙ্গে খরচ কমানোর বিষয় আছে।  

প্রকল্প দেরিতে শুরু হলে ডলারের দামসহ অন্যান্য ব্যয় বেড়ে যাবে না?

আপনি টাকা-পয়সা বাঁচাতে চাইলে তো দেরি হবে, তার জন্যে সময়ও লাগবে। আপনি যদি বলেন, যে পয়সা আছে সেটা দিয়ে করে ফেলতে, তখন আপনার দায়টা পরবর্তী প্রজন্মকে দিয়ে যাবেন। আপনি কি তা চান? আমি যে এত দামি দামি মেট্রো করব, কিন্তু প্যাসেঞ্জার ভাড়া দিতে পারবে কি না সেটাও ভাবতে হবে। কিন্তু আমাদের স্মার্ট ফাইন্যান্সিং লাগবে, যেখানে কস্ট অপটিমাইজেশন হবে এবং দেশীয় শিল্প-কারখানার কাজে যেন বেকারত্বের সমস্যাও দূর হয়।

কম খরচে করার জন্য আপনারা বিকল্প উৎস খুঁজছিলেন। সেটার অগ্রগতি কী?

এখন জাপান বা নির্দিষ্ট কোনো দেশ নয়, কম দামে কাজ করছে এ রকম যারা আছে, তাদের খোঁজ করছি। এডিবি, বিশ্বব্যাংক আছে, এর বাইরেও অনেক দেশের, বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে কথা শুরু হয়েছে এবং আশা করি একটা ফলাফল পাওয়া যাবে। 

তাহলে এখন এমআরটি লাইন-৬-এর বাইরে কোন প্রকল্প পুরোদমে চলছে না?

এখন সব প্রকল্পের কাজ যাচাই-বাছাই হচ্ছে। 

এমআরটি লাইন-৪-এর বর্তমান রুটপ্ল্যানের সঙ্গে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সম্প্রসারণ রেল প্রকল্প ওভারল্যাপ (সাংঘর্ষিক) করছে, কারণ রেলের প্রকল্প যেখানে ৩ হাজার কোটি টাকা, সেখানে মেট্রোরেলের প্রকল্পে লাগবে ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা। সে ক্ষেত্রে কি আপনারা বিকল্প রুটের চিন্তাভাবনা করছেন?

ওটা (এমআরটি-৪) নিয়ে এখনো কোনো বিকল্প চিন্তা করা হয়নি। বর্তমানের রুট থেকে আমরা আবার পুনর্বিবেচনা করছি। 

রুট পুনর্বিবেচনা করে কী করবেন? কেরানীগঞ্জ মেট্রোরেলের বাইরে থেকে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে কিছু ভাবছেন?

আমি একটা মেট্রোরেলের কাজ এখনো শেষ করতে পারিনি। বাকি যেগুলোর কাজ চলমান আছে সেগুলো এখনো সেই লেভেলে  পৌঁছাতে পারিনি। আর আমি মাস্টারপ্ল্যানের কাজটি আরম্ভ করতে পারিনি, মাস্টারপ্ল্যান করে আমরা সরকারের সঙ্গে ডিসাইড করব কোন কোন জায়গায় আমরা মেট্রোরেল নিয়ে যাব।

ভিন্ন একটি বিষয়, সম্প্রতি ডিএমটিসিএল চিঠি ইস্যু করেছে মন্ত্রণালয়ে, রিপোর্ট ডিটিসিএতে না করে তারা সরাসরি মন্ত্রণালয়ে করতে চায়, এর কারণ কী? 

সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমি কথা বলতে পারব না।

ডিটিসিএ যেহেতু ঢাকার সার্বিক গণপরিবহনের দায়িত্বে আছে, তারা র‌্যাপিড পাস করেছে। আপনারা আলাদাভাবে কেন আবার এমআরটি কার্ড করতে গেলেন?

আমাদের এমআরটি কার্ড একটা কেন, ১০টা করা উচিত ছিল। বাকি ৯টা করা হয় নাই এটা অন্যায় হয়েছে। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে অনেক কার্ড ব্যবহার করা হয়।

আপনারা আরো কী ধরনের কার্ড করতে পারেন, পরিকল্পনা আছে কি?

আপনি ডেবিট কার্ড-ক্রেডিট কার্ড দিয়ে হতে পারে। আবার কেউ কিউআর কোড দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কেউ আপনাকে গিফট কার্ড দেবে, সেটা দিয়ে পাস হয়ে যাবেন। গিফট কার্ড আরো তিন থেকে ছয় মাস লাগবে। ডিসেম্বরে হওয়ার দরকার ছিল, এটা হয়তো পিছিয়ে দুই-তিন মাস যাবে।

মেট্রোস্টেশনগুলোর কিছু বুথ বসেছে, মেট্রোরেলকে লাভজনক করতে আপনারা বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো চালু করবেন কবে?

বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর টেন্ডার প্রসেস আছে, আমি এটা কয়েক দিনের ভেতরে কন্ট্রাক্ট অ্যাগ্রিমেন্ট করতে পারব। তারপর আবেদন করতে পারব।

আপনি তো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেট্রোরেলে কাজ করেছেন, সেসব দেশের কোনোটায় কি মেট্রো লাভজনক ছিল?

অনেক দেশের মেট্রোরেল লাভজনক। তবে সেটা অনেক সময়সাপেক্ষ। আরেকটি বিষয় আছে, নির্মাণ খরচ কম হলে লাভজনক হয়, কিন্তু খরচ বেশি হলে লাভে আসতে সময় লাগে।

এ দেশের মেট্রোরেলকে লাভজনক করতে কী পদক্ষেপ নেবেন? 

আমাদের মেট্রোরেল তো এখনো প্রকল্পের অধীনে আছে, এটা আমাদের হাতে আসার পরে কাজ শুরু করব কীভাবে লাভজনক করা যায়। এখনই আমরা সোলার প্যানেল বসাচ্ছি, যাতে ইলেকট্রিসিটি বিল দিতে না হয়। এ ছাড়া বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চালুর বিষয়টি তো আছেই।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনাকেও ধন্যবাদ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫