
সাকিব আল হাসান।
সাকিব আল হাসান দেশের ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলাধুলার নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিবের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইফতেখার আলম ফরহাদ।
ফিফা সভাপতি বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে ক্রিকেট একদিন পাত্তাই পাবে না। আপনি কী মনে করেন?
সাকিব: আমার কাছে খারাপ লাগে একটার সঙ্গে আরেকটার তুলনা করা। এটা উদার মনের পরিচয় দেয় না। কারণ দিন শেষে আমরাই বাংলাদেশ। ফুটবল তো একটা গ্লোবাল ইভেন্ট। অলিম্পিকের পরে সবচেয়ে বড় আসর হয় ফুটবলে। তার সঙ্গে ক্রিকেটের তুলনা করা উচিত নয়। ক্রিকেট খেলে ১২-১৪টি দেশ। তার ভেতরে ছয়-সাতটি দেশ দাপট দেখায়। বাকিরা অত শক্তিশালী নয়। হয়তো একসময় গ্লোবাল স্পোর্টস হবে, যদি টি১০ বা টি২০ অলিম্পিকের খেলা হয়।
নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইউনিসেফের পুরস্কার মঞ্চে থাকতে পারার অনুভূতি শুনতে চাই।
সাকিব: আমি ইউনিসেফের পক্ষ থেকে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ছিলাম, যেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। আমরা একই স্টেজ শেয়ার করেছি। আমার জন্য এটা অনেক গর্বের ও বড় প্রাপ্তি। আমার ধারণা, এ রকম আগে কখনো হয়নি। সুতরাং সেদিক থেকে গর্ব করার মতোই।
আইপিএলে দু’বার এবং সিপিএলে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হলেন। এ অর্জনগুলো জাতীয় দলে ভালো খেলতে আপনাকে কি উজ্জীবিত করে?সাকিব: খুবই আনন্দ লাগে। অবশ্যই উজ্জীবিত করে। কারণ ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের মধ্যে আইপিএল, সিপিএল বড় দুটি টি২০ টুর্নামেন্ট। স্বাভাবিকভাবে চ্যাম্পিয়ন দলের অংশ হতে পারা অনেক আনন্দের ও গর্বের বিষয়। কারণ চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে আমারও কিছু অবদান রাখার সুযোগ থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা করতে পারি। এর প্রভাব অবশ্যই জাতীয় দলের খেলায়ও ফেলে।
টি২০ বিশ্বকাপের এক বছর আছে। টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে তার প্রস্তুতি কি শুরু করে দিয়েছেন?
সাকিব: দেখুন, নতুন কোচ একটি মাত্র সিরিজ দেখেছেন। তিনি এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়েই আছেন। টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে অনেক বেশি ফোকাসও করছেন। আমার কাছে মনে হয়, আরও আগে থেকে টি২০ দল গোছানোর সুযোগ পেলে ভালো হতো। ২০১৯ বিশ্বকাপ শেষে মাত্র এক বছর পাচ্ছি। আমরা আর একটা সিরিজ সামনে খেলব। এর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় থাকবে না। বিশ্বকাপের জন্য দল তৈরি হতে হবে।
দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের জায়গাগুলো কোথায়?
সাকিব: আমার কাছে মনে হয়, কাঠামোগত উন্নয়নও অনেক বেশি জরুরি। ত্রিদেশীয় সিরিজে সম্ভবত তিনবার বিদ্যুৎ চলে গেছে। এই জায়গাগুলোতে উন্নয়ন দরকার। ঢাকার বাইরেও যে ক্রিকেট আছে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শুধু ঢাকা বা চিটাগাং বাংলাদেশের ক্রিকেট না। খুলনা, সিলেট বা অন্যান্য ভেন্যুতে যেসব বিদেশি দলকে নেওয়ার সুযোগ আছে, সেই সিরিজগুলো ওই ভেন্যুতে হতে পারে। এতে ওই জায়গার অবকাঠামোর উন্নতি হবে। শুধু জাতীয় দলকে নিয়ে ফোকাস করা আমার মনে হয় সংগঠকদের মূল কাজ না। খুলনা, রাজশাহী, চিটাগাং, সিলেটে যে স্টেডিয়ামগুলো আছে, সেখানে একটা প্রপার জিম, রানিং ট্র্যাক এবং মানসম্পন্ন ইনডোর সুবিধা গড়ে তোলা। মিরপুরে জাতীয় দলের ইনডোর সুবিধা ভালো নয়। গ্রীষ্মকালে ওখানে ১৫ মিনিটের বেশি ব্যাটিং করা যায় না, এত গরম। ১০ বছর ধরে বলার পরও মিরপুরের ইনডোরে এসি লাগেনি। আমরা যখন অন্যান্য দেশের ইনডোরগুলো দেখি... ফকফকা লাইটের আলো, এসি লাগানো। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।
নির্বাচকরা বলছেন, ভবিষ্যতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে না খেললে বিপিএল খেলতে দেওয়া হবে না। ভারতেও এই নিয়ম আছে। আপনি কি এই নিয়মের সঙ্গে একমত?
সাকিব: এটা নির্ভর করে আলাদা আলাদা খেলোয়াড়ের ওপর। আমি বিদেশে টুর্নামেন্টগুলো খেলি। দেশে সেভাবে খেলতে পারি না। এ জন্য আমাকে জাতীয় দলে খেলতে দেবে না, তা তো নয়। আমি মনে করি, এই লিগগুলোকে এমন আকর্ষণীয় করে তোলা উচিত, যাতে ক্রিকেটাররা খেলতে বাধ্য হয়। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা কেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে? কারণ ওদের প্রথম শ্রেণির লিগ অনেক বেশি আকর্ষণীয়। আমাদের দেশে ৩৫-৪০টি টিভি চ্যানেল আছে। লিগের খেলাগুলো যদি টিভিতে ফ্রি দেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে দেখবেন অন্যরকম হবে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের ম্যাচ ফি ৩০-৪০ হাজার টাকা। এটা কি যথেষ্ট। একজন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারের জন্য হতাশাজনক কি-না?
সাকিব: অবশ্যই হতাশাজনক। খুবই হতাশাজনক। বাংলাদেশের বর্তমান জীবনযাত্রায় একজন খেলোয়াড়কে চলতে হলে এই টাকা খুবই নগণ্য। প্রতি বছর জিনিসের দাম বাড়ছে। সরকারি চাকরিজীবীদের ইনক্রিমেন্ট হয়। যে যেখানে চাকরি করে প্রতি বছর ইনক্রিমেন্ট হয়। আমরা এই জায়গায় দেখি, সব সময় একই থাকি। আরও কমানো হয়। বিপিএল এবং ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এর বড় উদাহরণ। একটা জিনিস আমি খুব ভালোভাবে ফিল করি, এখানে দেশি ক্রিকেটারদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। যেটা খুবই খারাপ। আমার কথা হচ্ছে, সবার জন্যই সমান সুযোগ থাকা উচিত। যে খেলোয়াড় যেটার প্রাপ্য মনে করে, তাকে সেটা অর্জনের জন্য ছেড়ে দেওয়া হোক। এরপর কোনো দল যদি তাকে না নেয় সেটা সে খেলোয়াড় বুঝে নেবে। এভাবে আটকে রাখাটা আমার কাছে মনে হয় না কখনোই ভালো।
দেশের অন্য খেলাগুলো ফলো করেন? সম্প্রতি ফুটবল দল খুব ভালো খেলছে, দেখেছেন?
সাকিব: আমাদের শুটাররা সব সময় ভালো করে। যে কোনো আন্তর্জাতিক গেমসে। তারা পদক জেতে। আমার ধারণা, শুটাররাই বড় কিছু অর্জন করেছে এখন পর্যন্ত। সম্প্রতি আরচারিতে রোমান সানা পদক জিতেছে। জুনিয়র পর্যায়ে আমাদের মেয়ে ফুটবলাররা অনেক ভালো করছে। ছেলেদের ফুটবলে নতুন করে ভালো করায় মানুষ অন্তত সামর্থ্যটা বুঝতে পারছে। যে যে খেলায় ভালো করার সুযোগ আছে সেগুলোকে ফোকাস করলে ভালো করব। যেমন শুটিং, আরচারি। আমার ধারণা, ব্যাডমিন্টনেও অনেক ভালো করতে পারবে।