সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করব: ড. রেজা কিবরিয়া

আহমেদ সেলিম
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২১, ১১:৫৩

ড. রেজা কিবরিয়া
ড. রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে। স্বনামখ্যাত অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি কাজ করেছেন বিশ্বব্যাংকসহ নানা আন্তর্জাতিক সংস্থায়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গণফোরাম থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। গত ২৬ অক্টোবর ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে নিয়ে গঠন করেছেন গণঅধিকার পরিষদ নামের নতুন দল। তিনি এটির আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। দেশের বর্তমান রাজনীতি, আগামী নির্বাচন ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ সেলিম।
বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কী?
আমাদের লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষের যেসব অধিকার খর্ব হয়েছে, সেসব ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন সংগঠিত করা। বিশেষ করে ভোটের অধিকার। আরেকটা হলো- দেশকে দেশের মানুষের স্বার্থে পরিচালনা করা। এখন অন্য দেশকে খুশি করার জন্য সরকার আমাদের দেশকে পরিচালিত করছে। পাশাপাশি বৈষম্য কমানো, ন্যায় বিচার ফিরিয়ে আনা এবং সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী একটি দেশ উপহার দেওয়া আমাদের লক্ষ্য।
কেমন সাড়া পাচ্ছেন, কী কী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছেন?
আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। অনেক মানুষ আমাদের দলে যোগদান করতে চাচ্ছেন। মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি। আমরা সদস্যপদ দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনো শুরু করতে পারিনি। এ জন্য কৌশল ঠিক করতে দফায় দফায় বৈঠক করছি। তবে পার্টি গঠনের আগে ৬০ জনকে ধরে নির্যাতন করেছে প্রশাসন। এটা দেশ এবং বিদেশের মানবাধিকার সংস্থাকে জানাব। আরেকটা হলো- দল ঘোষণার দিনে আমরা চেয়েছিলাম হাজার-দেড়েক মানুষ নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করব; কিন্তু সরকার আমাদের হল বুকিং দেয়নি।
নুরুল হক নুরকে নিয়ে দল গঠন করে কত দূর এগোতে পারবেন?
আওয়ামী লীগের লোকরা নুরকে বিতর্কিত করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ নয় কিন্তু। কাজ করতে গেলে যাদের বিরুদ্ধে যাবে, তারা তো সমালোচনা করবে। এভাবেই আমরা বিষয়টিকে দেখছি।
গণফোরাম ছেড়ে আসার কারণ কী?
গণফোরামে আমি যোগদান করেছিলাম শুধু ড. কামাল হোসেনকে দেখে। উনাকে আমি চিনি দীর্ঘদিন থেকে; কিন্তু আমি দেখলাম দলের অন্য নেতারা নির্বাচনমুখী নয়। তারা নির্বাচনে যেতে চায় না। সে জন্য আমি মনে করেছি, যারা নির্বাচনমুখী না, তাদের সঙ্গে না থাকাই ভালো।
আপনার বাবা আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন? আপনি কেন বিপরীতমুখী?
আমি পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস করি না। আমার বাবা যে দল করতেন, আমাকেও সেই দল করতে হবে কেন। আর আমার বাবা শাহ এএমএস কিবরিয়া যে আওয়ামী লীগ করেছেন, সেই আওয়ামী লীগ এখন আর নেই। তারা তাদের নীতি থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে। এখন আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য হলো, দেশকে লুট করা এবং ক্ষমতা দখল করে রাখা। তাদের অগণতান্ত্রিক আচরণ, চেতনা আমি মনে করি খুবই আপত্তিকর। তারা এই ১২ বছর জণগণের সঙ্গে যে অন্যায় করেছে, তার অংশীদার আমি হতে চাই না।
রাজনীতি অনেকটা গৃহবন্দি। স্থবিরতা বিরোধী দলের মধ্যে বিদ্যমান। কারণ কী বলে মনে করেন?
বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের যে নির্যাতন করা হচ্ছে, তার মাত্রা বিগত ৫০ বছরের চেয়ে বেড়ে গেছে। আইয়ুব খানের আমলেও রাজনৈতিক বন্দিদের মোটামুটি ভদ্রভাবে রাখতো, তাদের চিকিৎসা দেওয়া হতো, তাদের আলাদা রাখতো, উন্নত খাবার দিত এবং খুব সহজে তাদের জামিন দিয়ে দিত। এখন সরকার গুণ্ডা, ধর্ষক, খুনি- তাদের জামিন দেয়; কিন্তু রাজনৈতিক কর্মীদের জামিন দেয় না। এই নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে বিরোধী দল মাঠে নামতে পারছে না।
ভোটের প্রতি মানুষের অনাস্থা বাড়ছে কেন?
বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা একটা অগণতান্ত্রিক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বের সব দেশে ইভিএমে ভোট দিয়ে বাটন চাপার পর একটা রশিদ বের হয়ে আসে এবং সেটা একটা বাক্সে রাখা হয়। ভোট দেওয়ার পর একটা প্রমাণ থাকে কোথায় ভোট দিয়েছেন ভোটার; কিন্তু বাংলাদেশে তা নেই। ব্যালট পেপারে ভোটের ক্ষেত্রে আগের দিন পুলিশ ভোট দিয়ে বাক্সবন্দি করে রাখেন। ভোট সেন্টার সরকারি দলের লোকজন দখল করে সাধারণ জনগণকে ভোট দিতে দেয় না। এ কারণে মানুষের ভোটের প্রতি অনাস্থা বাড়ছে।
আপনারা কী আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন? নিলে কীভাবে নেবেন?
আমরা আগেই বলেছি ৩০০ আসনেই ভোট করা আমাদের লক্ষ্য। আমরা তা পারব বলে বিশ্বাস আছে; কিন্তু ২ বছর পর নির্বাচন কীভাবে হবে, তা বলা মুশকিল। তখন পরিস্থিতি দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
সরকারবিরোধী কোনো জোটে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি?
কোনো জোটে যেতে পারি, আবার নাও যেতে পারি। সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সময় মতো আমরা জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এখন এটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?
এটা আমি এত গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। কারণ যে কেউ নির্বাচন কমিশনার হোক না কেন, এই অসৎ, অগণতান্ত্রিক এবং বিনা ভোটের সরকার ক্ষমতায় থাকলে ভোট সুষ্ঠু হবে না। আমি মনে করি, এই সরকার না যাওয়া পর্যন্ত কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তবে আমরা তিনটি প্রস্তাব দিয়েছি, এগুলে হলো- বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে নিরপেক্ষ সরকার গঠন অথবা সব দলের নেতাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা কিংবা জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করা।
গণফোরাম সংগঠিত করে তেমন একটা সাফল্য অর্জন করতে পারেননি। এবার নিজের দলের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী আপনি?
ওই যে, বললাম তারা নির্বাচনমুখী নয়। তবে দলের অভ্যন্তরীণ যে কোন্দল ছিল, তা আমি ম্যানেজ করতে পারতাম। সবাইকে নিয়ে দলকে ঢেলে সাজাতে পারতাম; কিন্তু নির্বাচনমুখী না হওয়ায় আমি কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। তবে গণঅধিকার পরিষদ নিয়ে আমি যথেষ্ট আশাবাদী। আমি বিদেশ থেকে একটা চাকরি ছেড়ে দেশে এসেছি। আমি মনে করছি, দেশের জন্য কাজ করা প্রয়োজন। দেশের স্বৈরাচার সরকারকে হটিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা সরকার আসবে, যারা সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করবে। তারা মানুষের আস্থা অর্জন করেই কাজ করবে। সেই সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করে যাব।