পরিবার আমাকে নিয়ে শঙ্কায় থাকত : শাহীন সামাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৩২

শাহীন সামাদ
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগীতশিল্পী শাহীন সামাদ। এখনো নিয়মিত সংগীতচর্চা করছেন। তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংবলিত গান পৌঁছে দেওয়ার গুরু দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন। প্রথিতযশা এই সংগীত ব্যক্তিত্ব দেশপ্রেমের গান নিয়ে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াটা কেমন ছিল?
স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে আমি ছিলাম বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম শিল্পী সংস্থার সঙ্গে। এটি সেই সময় একটি শক্তিশালী সংগঠন ছিল। আমাদের কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করা এবং মনোবল বাড়িয়ে দেওয়া। পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী ক্যাম্পে নিয়মিত যাওয়া হতো আমাদের। এক সময় সমর দা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আমাদের আমন্ত্রণ জানান। আমরা ৮ থেকে ১০ জনের মতো একটি দল গিয়েছিলাম। তখন আমাদের দিয়ে ৮টি গান রেকর্ড করা হয়। এরপর যখন আবার ডাকলেন তখন আমরা জাতীয় সংগীত গেয়ে আসি বেতার কেন্দ্রে। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে টালিগঞ্জ স্টুডিও থেকে ১৪টি গান রেকর্ড করে আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে জমা দিয়ে আসি। সেই গানগুলো সব সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে বাজত।
যখন গান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছেন তখন কি স্বাধীনতাবিরোধীদের কোনো হুমকি পেয়েছিলেন?
না না। আমরা তো ছিলাম ভারতে। সেখান থেকেই গান রেকর্ড করেছি। ওখানে স্বাধীনতাবিরোধী বলে কিছু ছিল না। আমি বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম শিল্পী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হই ১৯৭১ সালের ২ এপ্রিল। আর দেশে ফিরে আসি বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
আপনার এই কর্মকাণ্ড আপনার পরিবার সে সময় কীভাবে দেখেছে?
আমার পরিবারে আমি ছিলাম সবার ছোট। তখন আমার বয়স ১৮ বছর ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে আমাকে নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা বোধ করত। দেশ কবে স্বাধীন হবে, দেশে ফিরতে পারব কি-না। তবে কোনো চাপ ছিল না আমার ওপর।
স্বাধীনতার পরের সময়টা কেমন ছিল আপনাদের?
দেশে ফেরার পর কাজ বেড়ে গেল। বিভিন্ন সময় দেশের বাইরে যাওয়া, বিভিন্ন ডেলিগেশনে যাওয়ার মাধ্যমে ব্যস্ততা বেড়ে গেল।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানগুলো সঠিকভাবে কি সংরক্ষণ হয়েছে?
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রচলিত গানগুলো কিন্তু সেভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে ১৭টি একাত্তরের গান সংরক্ষণ করেছিলাম।
তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমের গানের সঙ্গে কীভাবে সংযুক্ত করছেন?
আমি সব সময়ই তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গান পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ছায়ানটে ১০০ শিক্ষার্থীর ক্লাস নিই নিয়মিত। এখানে দেশপ্রেমের ৯টি গান নিয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান করেছি। এ ছাড়া প্রতি বছর সারাদেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি কর্মশালার মাধ্যমে তাদের দেশপ্রেমের গান শেখাই।