Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

আবৃত্তি কণ্ঠের শিল্প নয়, মস্তিষ্কের শিল্প : শিমুল মুস্তাফা

Icon

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২২, ১০:৩৪

আবৃত্তি কণ্ঠের শিল্প নয়, মস্তিষ্কের শিল্প : শিমুল মুস্তাফা

শিমুল মুস্তাফা

শিমুল মুস্তাফা দেশের জনপ্রিয় আবৃত্তি শিল্পী। আবৃত্তি তার পেশা নয়, নেশা। ঘোরতর নেশা। আশির দশকের গোড়ার দিক থেকেই জড়িয়ে পড়েন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। কণ্ঠে আওয়াজ তোলেন। তার ভয়হীন কণ্ঠ আজও ভয়হীন। শিল্প তার কাছে প্রার্থনা, সেটি শিল্পের যে মাধ্যমই হোক না কেন।

একজন দূরন্ত, দুর্নিবার এবং চির আপোষহীন মানুষ শিমুল মুস্তাফা। এখন পর্যন্ত ৪০টি আবৃত্তির অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে। তার এই সাক্ষাৎকারটি শুধু আবৃত্তির মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আবৃত্তির বাইরেও শিল্পের অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মাহমুদ সালেহীন খানের সঙ্গে।

কীভাবে আবৃত্তির প্রতি ভালো লাগা শুরু হয়?

এটা তো কোনো আয়োজন করে হয় না। আস্তে আস্তে বিষয়টি ঘটে যায়। আমার পারিবারিক বন্ধনই ছিল শিল্পমনা। আমার মা বাবা দু’জনেই চারুকলার ছিলেন। তাই পরিবারেই একটি শিল্পের আবহ ছিল। বাবা মায়ের কাছ থেকেই আবৃত্তির প্রতি ভালোলাগা শুরু হতে থাকে। 

কবিতা ও আবৃত্তি-শিল্পের এই দুটি মাধ্যমকে কীভাবে বিবেচনা করবেন?

কবিতা এবং আবৃত্তির সম্পর্ক অনেকটা মা-মাসির মতো। কবিতা জন্ম দেন কবি, তিনি মা। আর আবৃত্তিকাররা কবিতার মাসি অন্তত। জনক না হলেও স্নেহের জায়গাটা, প্রেমের জায়গাটা, আন্তরিকতার জায়গাটা, লালনের জায়গাটা একজন আবৃত্তিকারের কিন্তু কোনো অংশেই কম নয়। কবিতা মানুষের বোধের জায়গা তৈরি করে, মানুষকে উপলব্ধি করার জায়গা তৈরি করে। আমি কবিতাকে এভাবেই ধারণ করি। কবিতা ভালোবেসেই পড়ি। আমি যা পড়ি তা বিশ্বাস করি। যেমন ভালো লাগল একটি কবিতা; কিন্তু আমার আদর্শের সঙ্গে মেলেনা, আমি সে কবিতা পড়ি না। আবৃত্তি কণ্ঠের শিল্প নয়, মস্তিষ্কের শিল্প। কণ্ঠ হচ্ছে একটি সাউন্ড বক্সের মতো। মস্তিষ্ক যদি পরিশিলীত না হয়, সাউন্ড বক্স নিজে নিজে আর কিরকম বাজতে পারে? আমার মস্তিষ্কে যে বোধ এবং দৃশ্যপট তৈরি হচ্ছে, সেটাই আমি কণ্ঠ দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি।

বাংলাদেশের আবৃত্তিচর্চার পটভূমি নিয়ে যদি কিছু বলেন?

আবৃত্তিচর্চার ব্যাপারটা আসলে স্বাধীনতার আগে থেকেই শুরু হয়; কিন্তু আমি বলব আবৃত্তির মূল বহিঃপ্রকাশ গোলাম মোস্তফা, ইকবাল বাহার চৌধুরী, হাসান ইমাম এদের হাত ধরে বাংলাদেশে শুরু হয়। এবং স্বাধীনতা পরবর্তী পর্যায়ে আবৃত্তি সেই অর্থে ভূমিকা না রাখলেও মধ্য সত্তরের দিকে কাজী আরিফ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় সঙ্গে প্রবীণ যে আবৃত্তি শিল্পীদের কথা বললাম, এঁরা মিলে আবার আবৃত্তিচর্চা শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আবৃত্তি বেশ প্রভাব বিস্তার করেছিল। সত্তরের দশকের রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটের কারণে শিল্প চর্চায়ও একটি ধস নেমে আসে। কারণ আমরা দেখেছি দেশের ক্রান্তিকালে শিল্পীরা তাদের অবস্থান অনেক বেশি শক্তিশালী করে ফেলে; কিন্তু দুর্ভাগ্য পঁচাত্তর থেকে আশি সাল পর্যন্ত শিল্পকলার প্রত্যেকটি মাধ্যম সেইভাবে জেগে উঠতে পারেনি। অনেকটাই আস্থাহীন, হতাশায় পড়ে গিয়েছিল শিল্পীরা। আমাদের বিগত দু’শত বছরে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় আমরা যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছি; কিন্তু এই পাঁচ বছরে আমাদের সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন মিডিয়া যে ভাবে কাজ করছে, তখন তো এত মিডিয়া ছিল না। আর যেগুলো ছিল সেগুলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করেছে। ফলে অনেক কিছুই নিষিদ্ধ ছিল।

নব্বইয়ের গণআন্দোলনে আবৃত্তির তো বিরাট ভূমিকা ছিল...

একাশির পর আবার নতুন করে প্রেরণা, অনেক সাহস, নতুন উদ্দীপনা, নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে শিল্পকলায় আমাদের অনেক পরিবর্তন এসে যায়। এবং এরই ধারাবাহিকতায় খুবই সক্রিয় হয়ে ওঠে আমাদের থিয়েটার এবং সঙ্গে সঙ্গে আবৃত্তি। তখন সংগীত যতটা না সক্রিয় হয়ে ওঠে, থিয়েটার এবং আবৃত্তি অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেই সময় পথনাটক কর্মীরা, মঞ্চ নাটক কর্মীরা রাজপথে ছিলে, তবে নেতৃত্বে ছিল আবৃত্তি শিল্পীরা। আবৃত্তিতে সে সময় যে পরিবর্তন আসে, তা হলো আমাদের শাসকের ইচ্ছানুযায়ী যে শৃঙ্খলিত করে রাখার পাঁয়তারা ছিল তার বিরুদ্ধে আমরা আওয়াজ তুলি। এরই সঙ্গে সঙ্গে কবিরাও সোচ্চার হয়ে ওঠে। স্বৈরাচারি সরকার হটাতে তারাও উদগ্রিব হয়ে ওঠে। তারই ফলশ্রুতিতে মধ্য আশিতে তৈরি হয় কবিতা পরিষদ। এবং শুরুতেই তখন বলা হয় যে, শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা। এই কথা প্রথম কবিরাই প্রকাশ করে। এর বছর দুয়ের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় আবৃত্তি উৎসব, গঠিত হয় আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। এ সময় অনেক কবি এবং আবৃত্তিকারকে জেল জুলুম খাটতে হয়। হুলিয়া চলে আসে। অনেক কবিতা নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময় কবিতা এবং আবৃত্তি একই সঙ্গে কাজ করেছে। নব্বইয়ের আন্দোলনের চরম মুহূর্তে প্রেমের কবিতাও প্রতিবাদের কবিতা হয়ে গেল একসময়। আমরা খুব রোমান্টিক কবিতাকেও মানুষের দাবিদাওয়া হিসেবেই তুলে ধরলাম। তখন নিষিদ্ধ ছিল আমাদের কবিতা পড়া। আমরা কবিতা পড়তে গেলেই পুলিশ ধাওয়া করতো। আমাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হতো। সেই প্রেক্ষাপটেই আমার জন্ম। স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে করতেই আবৃত্তি করা, আশির দশকের গোড়ার দিক থেকে আমি আন্দোলনে সম্পৃক্ত হই।

একানব্বইয়ের পরে আবৃত্তি আস্তে আস্তে সংগঠিত হলো। প্রেমের কবিতা যেভাবে প্রতিবাদের কবিতা হয়ে গিয়েছিল, আস্তে আস্তে তা আবার প্রেমের কবিতা হয়ে উঠল। প্রতিবাদের কবিতাগুলো আমরা ধীরে ধীরে পড়তে ভুলে গেলাম। আমরা আমাদের ক্লান্ত যাত্রার শেষ পরিচ্ছদ- বাহান্ন, একাত্তর, নব্বই এই আন্দোলন করতে করতে খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। নব্বইয়ের পর যখন আমরা আলোর দিশা দেখলাম, তখন আমরা হুড়মুড় করে সেই দিশার দিকে ছুটতে শুরু করলাম। আমাদের অতৃপ্ত বাসনা পূরণের জন্য আমরা নেমে পড়লাম। অনেকে ভেবেছে আমাদের আর এভাবে চললে হবে না। তখন অনেকেই আর্থিকভাবে খুব স্বচ্ছল হয়ে উঠল। এর ফলে আমরা শিল্পীরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলাম। একটি অংশ আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতি চর্চা করতে শুরু করল, আরেকটি অংশ আমরা আগের মতোই রয়ে গেলাম।

শিল্পীদের কী রাজনৈতিক পরিচয় থাকাটা জরুরি?

শিল্পীর রাজনৈতিক আদর্শ থাকাটা জরুরি; কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের ভেতর অবস্থান করে কাজ করাটা আমি সমর্থন করি না। আমাকে যদি বলা হয় হাতের দশটা আঙুল কেটে ফেলা হবে, আমি তবে পায়ের আঙ্গুল দিয়ে হলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই আমার অবস্থান জানাব; কিন্তু টেলিভিশন পর্দার সামনে অনেক দেশপ্রেমিক দেখা যায়, তারা ঠিকই দৌড়ে পালাবে। কে সরকার হলো এটা আমি দেখি না, আমি দেখি কে দেশকে ভালোবাসার কথা বলে, কে আমার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে। আমার জীবনে আমি কোনো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে কবিতা পড়িনি। আমার পঁয়ত্রিশ বছর আবৃত্তি জীবনে আমি কোনো দিন বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমন্ত্রণ পাইনি। তাতে কী হয়েছে?

আমাদের সংস্কৃতিচর্চার বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

আমরা পাতা বাহার দিয়ে বাগান ভরে ফেলছি; কিন্তু গোলাপ ফোটাতে পারছি না। আমি একটি জিনিস মনে করি যে একটি জিনিসের বিন্দু যদি সরে যায়, বৃত্তও সরে যায়। আমাদের বিন্দুগুলো ক্রমশ সরে যাচ্ছে। আমাদের শেকড় থেকে বিন্দু সরে যাচ্ছে। আমাকে অনেকে বলে আপনি এখানে যান না কেন, ওখানে যান না কেন? আসলে শিল্পীকে লোক দেখানোর জন্য শিল্পচর্চা করলে হবে না। টেলিভিশনের পর্দা বা বিশেষ জায়গার প্রয়োজন হয় না শিল্পী হওয়ার জন্য। একজন বলেছেন, তুমি যদি সুরেলা কণ্ঠে গান গাও তাহলে পৃথিবীর যে প্রান্তে বসেই গাও না কেন, কেউ না কেউ তা ঠিকই শুনছে। আমি যদি অজপাড়াগাঁয়ে বসেও দেশের জন্য কাজ করি, কোনো শিল্পের জন্য কাজ করি কোনো একদিন সেখান থেকেই আলো জ্বলে উঠবে। আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করে, আপনাকে আগের মতো দেখি না কেন? তাদের একটিই উত্তর দেই, আমি আগের জায়গাতেই আছি, বরং আপনারাই আগের জায়গা থেকে সরে গিয়েছেন। তাই আমাকে দেখতে পান না।

দশ-পনের বছর ধরে যা দেখছি, এ প্রজন্ম অনেক মেধাসম্পন্ন, কেবল এ প্রজন্মকে নৈতিক জায়গাটা শেখানো হচ্ছে না। এজন্য আমি বলি, আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি না বাড়িয়ে, মানসিক প্রবৃদ্ধিটা বাড়ানো উচিত। আমার কষ্ট করতে আপত্তি নেই । একবেলা কম খাব, এর বিনিময়ে আমাদের নৈতিক বোধটা যদি বাড়তো আর অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং হিংসার জায়গাটা যদি কমতো, তবে খুব ভালো হতো। 

আবৃত্তির সংগঠনগুলো যেভাবে কাজ করছে, আবৃত্তি শিল্পী কি আমরা সেভাবে পাচ্ছি?

ওটার জন্য আমরা কিছুটা দায়ী, আর আমাদের মন মানসিকতা অনেকখানি দায়ী। একটি জাতির পরিচয় বহন করে তাঁর শিল্পকলা। বাংলাদেশকে আমরা চিনবো এদেশের শিল্পকলা দিয়ে। ভারতে যে বাণিজ্যিক শিল্পকলাগুলো হচ্ছে-চলচ্চিত্রে এবং গানে, আমরা ওটা দ্বারা মোহিত হচ্ছি; কিন্তু ভারতে একজন উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পীকে একজন বাণিজ্যিক শিল্পীর চেয়ে অনেক বেশি মূল্যায়ন করা হয়। ভারতে একটি গানের লিরিক জাবেদ আখতার লিখলে পাঁচ লাখ রুপি পায়। বাংলাদেশে একটি গানের লিরিক লিখলে পাঁচশত টাকা পায়। আমাদের দেশে একজন উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পীকে যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়, তার চেয়ে দশগুণ বেশি মূল্যায়ন করা হয় আধুনিক একজন ড্যান্সারকে। আজকে আমি কবিতা লিখলে আমাকে যদি দুইশত টাকা সম্মানী দেওয়া হয়, আর কবিতার অর্ধেক শ্রম দিয়ে আমি যদি একটি টেলি নাটকের স্ক্রিপ্ট তৈরি করি আমাকে দশ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ফলে এ প্রজন্ম কবিতা লিখবে, না নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখবে? আমি কবিতা পড়লে আমাকে একটি ফুলের তোড়া দিয়ে বিদায় করা হয়, আর একজন ড্যান্সার মঞ্চে উঠলে তাকে সত্তর হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোও তাই করছে। এক-দেড় হাজার টাকা দিয়ে আমাদের মূল্যায়ন করা হয়, আর একজন সংগীতশিল্পী এলে পায় ষাট-সত্তর হাজার টাকা। আমাদের শিল্পবোধের কারণেই হয়তো ভালো আবৃত্তিশিল্পী বা একজন ভাল কবি আমরা পাই না। প্রজ্ঞা লাবনী বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী। একটি টিভি চ্যানেলে তিন ঘন্টা সরাসরি অনুষ্ঠান করার পর তার হাতে এক হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। বলেছিলাম, শিল্পীকে টাকা না দাও, কিন্তু অসম্মান কোরো না। সেই চ্যানেলে পাঁচ বছর ধরে আমাকে ডাকে না। আমি প্রতিবাদ করব, আরেক জন করবে, 

তৃতীয়জন নিজের পকেটের টাকা খরচ করে টেলিভিশনে আবৃত্তি করবে। কারণ আমাদের লোভ লালসাটা অনেক বেশি। কেউ কেউ অর্থের জন্য লালসা দেখায়, কেউ কেউ অর্থ ব্যয় করে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে চায়। এদের দলে তো আমরা নই। 

রাষ্ট্রীয়ভাবে আবৃত্তির মূল্যায়ন কি সেভাবে হচ্ছে, গান নাচ বা চলচ্চিত্র শিল্পের বিবেচনায়?

আমরা যাঁদের দ্বারা ভাষা পেয়েছি- শুধু একুশে ফেব্রুয়ারিতে কয়টা ফুল দিয়ে সব দায় মিটিয়ে দেই। বিশ্বের বুকে যাঁরা এদেশের জন্য সম্মান এনে দিয়েছেন তাদেরকেই বা কতটুকু দিয়েছি? দস্যু বনহুরের লেখক রোমেনা আফাজ, যার লেখা বই ট্রাকে করে করে বিক্রি হয়েছে। সেই নারীকে রাষ্ট্রীয় সম্মান তো দূরের কথা, ফুল দিয়েও তাঁকে সম্মান জানানো হয়নি। মরে যাওয়ার কিছুদিন আগে আমরা হঠাৎ করে মনে করলাম শাহ আব্দুল করিমের কথা। তারপর তাঁকে নিয়ে কাজ শুরু করলাম। বাংলাদেশে জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে একটি জন্মবার্ষিকী পালন করা হয় না। তাঁর নামে একটি প্রতিষ্ঠান কেন, রাস্তাও হয়নি। অথচ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জামানত বাতিল হয়েছিল এমন একজনের নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া। তাঁকে আমরা ন্যূনতম মূল্যায়ন করতে পারিনি। আবৃত্তির ক্ষেত্রে আশা করাটা তাই মানায় না। 

পেশা হিসেবে আবৃত্তি শিল্পের ভবিষ্যৎ কি?

আবৃত্তি পেশা হিসেবে দাঁড়াবে- এমনটা আমি চাই না। শিল্প যখন পেশা হয়ে যায় তখন শিল্পত্ব হানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাংলাদেশে একজন ক্ল্যাসিক্যাল শিল্পী আছে পণ্ডিত গোলাম মোস্তফা। সংগীতটা তার পার্থনার মত। টেলিভিশনের সামনে আসাটা তার জন্য জরুরি না। প্রার্থনাটা তার জন্য জরুরি। লালন যখন গান করেছেন, তিনি কিন্তু এই চিন্তা করে গান করেননি, যে পরবর্তীতে আরো অনেকে তার গান গাইবে। তিনি তার আত্মতৃপ্তির জন্য গেয়েছেন। সেরকম আবৃত্তি আসলে আত্মতৃপ্তির জন্যই করা উচিত।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫