Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

কম দামে আন্তর্জাতিকমানের পণ্য দেবে ভিসতা : উদয় হাকিম

Icon

মিরাজুল ইসলাম

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২২, ১০:৪৬

 কম দামে আন্তর্জাতিকমানের পণ্য দেবে ভিসতা : উদয় হাকিম

উদয় হাকিম

দেশীয় ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজার বেশ প্রসারিত হয়েছে। সেইসাথে নিম্নমানের পণ্য দিয়ে, কত বেশি লাভ করা যায়- এমন একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতাও তৈরি হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। দেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজার, ব্র্যান্ডিংসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারে ব্র্যান্ড ও জনসংযোগ বিশেষজ্ঞখ্যাত ভিসতা ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের পরিচালক উদয় হাকিম। ওয়ালটনের যাত্রা শুরু থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত তিনি নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারও আগে প্রথম আলোসহ শীর্ষ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতাও করেছেন।

সম্প্রতি রাজধানী গুলশানের ভিসতা কার্যালয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের সাথে কথা বলেন ভিসতা ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের পরিচালক উদয় হাকিম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মিরাজুল ইসলাম।

দেশীয় ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজার ও পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাই।

বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজার অনেক সম্ভাবনাময়। অনেক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের চাহিদা অসীম। এখানে প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যা রয়েছে। এই বিপুল জনসংখ্যার তুলনায় পণ্যের বাজার অনেক ছোট। এখানে আরো অনেক পণ্য উৎপাদন করা প্রয়োজন। সারাদেশে যখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট চলে যাবে তখন সবার কেনার সামর্থ্য বাড়বে। আমরা গরিব দেশ থেকে উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছি। ২০৪৫ সালের মধ্যে আমরা হয়তো ধনী দেশের কাতারে পড়ে যাবো। তার মানে আমাদের পণ্য কেনার সামর্থ্য বাড়ছে। এ কারণেই এ সেক্টরে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের চাহিদা এত বেশি যে প্রতি দুই বছরে এটা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি প্রতিদিন আপডেটেড হচ্ছে। ফলে প্রতিদিনই ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবসারও বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারে আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?

সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা। ছোটবেলায় আমরা যে বাক্সের মতো দেখেছি সেটা পরিবর্তন হয়ে আসলো এলসিডি, এলইডি পরিবর্তন হয়ে আসলো স্মার্টটিভি। স্মার্টটিভি আরো উন্নত হয়ে আসলো অ্যান্ড্রয়েড টিভি। ভবিষ্যতে আরো পরিবর্তন আসবে। যখন মেটাভার্স এসে যাবে তখন হয়তো থ্রিডি টিভি লাগবে। তখন টিভিতেই আপনি থ্রিডি দেখতে পারবেন। এই যে পরিবর্তনটা, এটার সাথে খাপ খাইয়ে চলা এবং কাস্টমারদের নতুন কিছু দেয়া। এটাই হচ্ছে ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবসায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এটা প্রধান চ্যালেঞ্জ। আরো কিছু বিষয় রয়েছে যেমন- দুঃখজনক হলেও সত্য, এখানে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবসায় কিছু অশুভ প্রতিযোগিতা রয়েছে। অনেকেই বেশি লাভের আশায় বিদেশ থেকে নিম্নমানের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য বাজারজাত করছে। বাহারি বিজ্ঞাপনে ওইসব নিম্নমানের পণ্য কিনে বিক্রয়োত্তর সেবা পান না ক্রেতারা। দুঃখের কথা হলো এসব দেখার কোনো দায়িত্বশীল বিভাগ নেই। অন্যদিকে, আপনি যখন বাংলাদেশ থেকে কোনো পণ্য বিদেশে রপ্তানি করবেন, তখন মান নিয়ন্ত্রণের নানা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারপর পণ্যটি বিদেশে রপ্তানি করতে হচ্ছে। বাংলাদেশে যখন বিদেশ থেকে ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানি করা হয়, তখন কোথাও কোনো পরীক্ষা বা মান নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই।

দেশের বাজারে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের এই চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে আপনারা কেন নতুন উদ্যোগ নিলেন?

এটা খুবই বাস্তব। দেশে পণ্যের অনেক চাহিদা রয়েছে, কিন্তু চাহিদার তুলনায় মানসম্পন্ন পণ্য নেই। আন্তর্জাতিক মানের পণ্যের গুণগত মানের দিক থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। দেশীয় পণ্যের মানের জায়গাটিতে একটা গ্যাপ রয়েছে। ওই গ্যাপটাতে কাজ করার বিশাল সুযোগ আছে। আমার কাছে মনে হলো, অনেক দিন তো চাকরি করেছি। এখন আর চাকরি না। নিজেদের কিছু একটা করা উচিত। মূলত সে ধারণা থেকেই ভিসতার যাত্রা শুরু। ক্রেতা, উৎপাদনকারী এবং সর্বোপরি দেশ যাতে লাভবান হয় সেই লক্ষ্যে উচ্চমানের পণ্য তৈরি করাই ভিসতার অঙ্গীকার। ভিসতার স্লোগান হিসেবে নেয়া হয়েছে ‘এক্সিলেন্স ইন টেকনোলজি’। সেরা মানের পণ্য দিয়েই ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে চায় ভিসতা। দেশের ঘরে ঘরে নয়, বিশ্বের প্রতিটি ঘরে ভিসতা পণ্য পৌঁছে দেয়াই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

আপনার এই আত্মবিশ্বাসের শক্তি সম্পর্কে জানতে চাই।

ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবসায় দেশের সবচেয়ে মেধাবী, অভিজ্ঞ টিম এখন ভিসতায়। ইলেকট্রনিক্স সেক্টরে যতগুলো কোম্পানি রয়েছে কোনো কোম্পানিতেই ভিসতার মতো এত বেশি মেধাবী ও অভিজ্ঞ মানুষ নেই। আমি দীর্ঘদিন ওয়ালটনের ব্র্যান্ডিং, কমিউনিকেশন এবং লিঁয়াজো টিমের নেতৃত্ব দিয়েছি। ভিসতার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন ওয়ালটনের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং এবং পলিসি বিভাগের প্রধান লোকমান হোসেন আকাশ। পরিচালক হিসেবে আছেন ওয়ালটনের প্রধান প্রকৌশলী মইনুল হক। চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন ওয়ালটনের সোর্সিং বিভাগের প্রধান শামসুল আলম। জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন যুক্ত হয়েছেন। ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবসায় সবার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে খুব অল্প সময়েই ভিসতা মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে।

ভিসতার পণ্য উৎপাদন ও বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বলুন।

দেশের বাজারে ভিসতা ইলেকট্রনিক্স সবার আগে অ্যান্ড্রয়েড টিভি নিয়ে এসেছে। এরইমধ্যে অ্যান্ড্রয়েড টিভি বাজারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভিসতার দখলে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে ভিসতার কারখানা রয়েছে। বর্তমান কারখানার পাশেই আরো একটি কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ চলছে। স্বনামধন্য একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের হোম অ্যাপ্লায়েন্স এবং ইলেকট্রিক ফ্যান ভিসতার কারখানায় তৈরি হবে। সবমিলিয়ে আমাদের টার্গেট ক্রেতাদের হাতে সঠিক ও সাশ্রয়ী দামে মানসম্পন্ন পণ্য তুলে দেয়া। পণ্যের চাহিদা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে বাজারের অন্যতম শীর্ষস্থানে চলে যাবে ভিসতা। পরিমাণের না হলেও কোয়ালিটিতে নম্বর ওয়ান ভিসতা।

আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ইউরোপের বাজারে ভিসতা টিভি রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের টিভি পাওয়া যাবে ইউরোপের বাজারে। টেলিভিশনের পর পরিকল্পনা রয়েছে হোম অ্যাপায়েন্স, এসি, উচ্চ মানের স্মার্ট ফ্রিজ এবং আগামী প্রজন্মের ম্যাশ রাউটার উৎপাদন করার। এসব পণ্য হবে উচ্চমানের এবং রপ্তানি বাজার টার্গেট করে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫