Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

শিশুসাহিত্য বলতে বাচ্চাদের বোধগম্য হতে হবে এটাই বুঝি: সুকুমার বড়ুয়া

Icon

এহসান হায়দার

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:২৯

শিশুসাহিত্য বলতে বাচ্চাদের বোধগম্য হতে হবে এটাই বুঝি: সুকুমার বড়ুয়া

সুকুমার বড়ুয়া। ছবি: সংগৃহীত

সুকুমার বড়ুয়া, বাংলা ছড়ার রাজপুত্র। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছড়া রচনায় ব্যাপৃত। বিষয়-বৈচিত্র্যে, সরস উপস্থাপনা, ছন্দ ও অন্ত্যমিলের অপূর্ব সমন্বয় তাঁর ছড়াকে করেছে স্বতন্ত্র। প্রাঞ্জল ভাষায় আটপৌরে বিষয়কেও তিনি ছড়ায় ভিন্নমাত্রা দেন। তাঁর ছড়া একাধারে বুদ্ধিদীপ্ত, তীক্ষ্ণ, শানিত আবার কোমলও বটে। ছেলেভুলানো ছড়ার মতোই যেন আদুরে আর সরস। যেন হাসির রাজা গোপাল ভাঁড়ের জাদুকরী বুদ্ধিদীপ্ত কথা। 

চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার মধ্যম বিনাজুরি গ্রামে ১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি গুণী এই ছড়াকার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম সর্বানন্দ বড়ুয়া এবং মা কিরণ বালা বড়ুয়া। চট্টগ্রামের গহিরা গ্রামের শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র বড়ুয়ার মেয়ে ননী বালার সঙ্গে ১৯৬৪ সালের ২১ এপ্রিল তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন। ব্যক্তিগত জীবনে সুকুমার বড়ুয়া তিন মেয়ে এবং এক ছেলের জনক। 

সুকুমার বড়ুয়ার কাছে তাঁর শিক্ষাজীবনের কথা জানতে চাইলে টুপ করে পুরনো স্মৃতিতে ঢুকে পড়েন। শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছে তাঁর পূরণ হয়নি। মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছেন। চাকরি আর ছড়া; এই নিয়ে সুকুমার বড়ুয়ার জগৎ গড়ে উঠেছে। দু-হাতে লিখে গেছেন তিনি, যার ফলে ছড়ার রাজ্যে মিলেছে সম্মানের স্থান। এবং পাঠ্যবইয়েও ঠাঁই পেয়েছে তাঁর লেখা ছড়া। সুকুমার রচিত উল্লেখযোগ্য ছড়াগ্রন্থগুলো হলো ‘পাগলা ঘোড়া’ (১৯৭০, বাংলা একাডেমি), ‘ভিজে বেড়াল’ (১৯৭৬), ‘চন্দনা রঞ্জনার ছড়া’ (১৯৭৯), ‘এলোপাতাড়ি’ (১৯৮০), ‘নানা রঙের দিন’ (১৯৮১), ‘সুকুমার বড়ুয়ার ১০১টি ছড়া’ (১৯৯১), ‘চিচিং ফাঁক’ (১৯৯২) ‘ঠিক আছে ঠিক আছে’(২০০৬)।

গুণী এই শিশুসাহিত্যিক লেখালেখির জগতে ৬ দশকেরও বেশি সময় পার করছেন। এ মুহূর্তে কেমন আছেন, শিশুসহিত্য নিয়ে কী ভাবছেন, এসব নিয়ে কথা বলেছেন এহসান হায়দার। 

আপনার লেখার শুরু কত বছর বয়সে

লেখালেখি প্রথম শুরু হয়েছে ২০ বছর বয়সে; কিন্তু ওটা ছিল ২২ বছর বয়স আসলে। কেননা আমার বয়স দুই বছর কমিয়ে জন্ম সনদ করা হয়েছিল। 

প্রথম লেখা ছাপানোর গল্পটা বলুন

২২ বছর বয়সে ছাপা হয়েছে সংবাদ পত্রিকার খেলাঘর পাতায় আমার প্রথম ছড়া। ঐ লেখায় পুরস্কারও পেয়েছিলাম, দেয়নি। প্রথম হয়েছিলেন নাজমা জেসমীন চৌধুরী, দ্বিতীয় হয়েছিলেন ইমরুল চৌধুরী আর তৃতীয় হয়েছিলাম আমি সুকুমার বড়ুয়া। চিটাগাং থেকে লেখালেখি শুরু করি ১৯৫৮ সালে, ঢাকায় আসি ১৯৬০ সালে, ঢাকায় লেখালেখি শুরু হয় ১৯৬৩ সাল থেকে। 

তারপর ঢাকায় এলেন

তিন বছর লেখা হয়নি জীবিকার কারণে। ডিপি বড়ুয়া (দেবপ্রিয় বড়ুয়া), ড. কামাল সাহেবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, সেই সূত্রে একটা চতুর্থ শ্রেণির চাকরি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কী। তবে চাকরি হওয়ার পর লেখা শুরু করেছি পুরো মাত্রায়। ওখানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে) মিজানুর রহমান নামে একজন ছিলেন। উনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। আমার একটি লেখা একদিন ইত্তেফাক ছাপল ‘পাগলা ঘোড়া’ নামে। ড. মিজানুর রহমান সাহেব নোটিশ বোর্ডে সাঁটিয়ে দিলেন, সঙ্গে ইংরেজিতে কী কী লিখলেন ডিপার্টমেন্টের বোর্ডে। আমাকে সংবর্ধনার মতো একটা কী দিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা উপহার দিয়েছিলেন, ওইটা এখনো আছে আজিমপুরের বাসায়। ওই থেকেই শুরু আমার। 

প্রথম বই বের হলো কবে, কীভাবে? কেউ সাহায্য করেছিল কি ওই সময়ে আপনাকে?

আমার তখন নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। লিখছিও পুরো মাত্রায়। প্রথম বই বের হয় তখন। বইটা বের করার বিষয়ে উদ্যোগী হন ড. মিজানুর রহমান সাহেব। তিনি সব গুছিয়ে দেন। তিনি আবদুল হাই সাহেবের কাছে পাঠিয়ে দিলেন আমাকে। আর আবদুল হাই সাহেব আবার একটা স্লিপ লিখে সৈয়দ আলী আহসান সাহেবের কাছে পাঠালেন। এভাবে বাংলা একাডেমি থেকে ‘পাগলা ঘোড়া’ নামে বইটা প্রকাশিত হয়। তারপর দ্বিতীয় বই হয়েছিল মুক্তধারা থেকে। আবদুল হাফিজ নামে একজন ছিলেন, মারা গেছেন তিনি, উনিও লিখতেন। উনি ‘ভিজে বেড়াল’ নামে একটা সংকলন করলেন ছোট্ট। ওই সংকলনটা এখন নাকি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। কিছুদিন আগে ওখানকার কয়েকজন ছেলেমেয়ে এসে আমাকে জানাল। ওরা অনেকগুলো ছবিও তুলেছে; যেখানে যেখানে ছিলাম আমি, সেখানে গিয়ে আমার গ্রামের বাড়িতেও গিয়েছিল।

আপনার ছেলেবেলার কথা বলুন

ছোটবেলায় আমি পড়ালেখার জন্য সৎ বোনের বাড়িতে গেলাম। সেখানে ছাগল চরানোর কাজ করতাম। এর মধ্যে আমি আড়াই ক্লাস পর্যন্ত পড়েছি। ক্লাস টু পর্যন্ত বলা যায়। ক্লাস থ্রির বার্ষিক পরীক্ষাটা আমাকে দিতে দেয়নি আমার বোন। ওখানে থাকার সময় আমাদের স্কুলে একজন ইন্সপেক্টর এলেন, ম্যাডাম আমাকে প্রশ্ন করলেন বেশ কয়েকটি। তিনি আমার মেধা সম্পর্কে ধারণা পেলেন সে সময়ে। বোনের বাড়িতে অনেক কষ্টে আছি দেখে আমার মামাবাড়িতে ওরা চিন্তায় পড়লেন। আমার মামা থাকতেন শহরে, ১৯৪৯ সালে শহরে তার কাছে নিয়ে গেলেন আমাকে। একজন মামাতো ভাইও ছিল, ওখানে ছয় মাস থাকার পর মামা বদলি হয়ে গেলেন। ফলে আমাকে আবার গ্রামে ফিরে যেতে হলো। 

ওখানে কোনো খাবারের ব্যবস্থা নেই। এক মন্দিরের বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাছে শিষ্যগিরি করতে দিলেন। ঠাকুর ছিলেন অনেক রাগী, আমাকে খুব মারধর করতেন। এখনো মাথায় চিহ্ন আছে স্যান্ডেল দিয়ে বাড়ি দিয়েছিলেন। উনি মারা গেছেন। মামা বললেন, আর একবার মারলে তুমি ওখান থেকে চলে যেও। তারপর একদিন কী কথার জন্য মাইর দিছে, পিঠা বানানোর ব্যাপারস্যাপার নিয়ে, তারপর চলে গিয়েছি। এরপর আর সেখানে যাইনি। তার পর একদিন আর একটা কাজ ঠিক করে দিল, বাচ্চা রাখা আর পানি তোলার জন্য ৮ টাকা বেতন দেবে। আমি খুব খুশি হলাম। দেখি ৮ টাকা করে বেতন দেয়নি, ৩ টাকা করে দিত। অবশ্য বাচ্চাকাচ্চাগুলো এত ভালো, দেখা গেল নাচগান করত, আমিও তাদের সঙ্গে মুখস্থ করতাম। একটা বই ছিল আমি তো পড়তে পারি পুরোটা মুখস্থ করে অঙ্গভঙ্গি করে, অভিনয় করে দেখাতাম। বাচ্চারা খুব খুশি হতো। তারপর ওখান থেকে চলে গিয়েছি। একটা চায়ের দোকানে ১০ মাস চাকরি করলাম এক টাকা বেতনও দেয়নি, লোকটা অনেক রাগী ছিল। পালিয়ে বাঁচলাম আর কী! কিছু আনতেও পারিনি পালিয়ে এসেছি। তারপর একটা দোকানে চা খেয়ে ঝিমোচ্ছি, দোকানদার জিজ্ঞেস করলো-ঐ মিয়া কী করো? আমার তো কাজকর্ম নাই এই আর কী, বলল যে এখানে কাজ করবা? আমি বললাম ঠিক আছে করব। ওখানে বেশি দিন চলল না। ঘুরতে ঘুরতে ওই বাসায় আবার আসলাম। দেখি ওখানে মেস হয়ে গেছে, প্রায় ৫ জন লোক থাকে একজনে ৩ টাকা করে ভাড়া দেয়। ওরা অফিসে কাজ করত, ওরা চলে গেলে আলমারিতে কতকগুলো বই ছিল। ওইগুলো এক এক করে পড়তাম পথের পাঁচালী, কুলি, এরপরে শরৎচন্দ্রের মেজদিদি। ‘কুলি’ বইটা দারুণ লাগল। আমার জীবনের সাথে যেন মিলে যাচ্ছে ‘কুলি’ উপন্যাসটা। অবসর সময় পেলে চায়ের দোকানে যাই, ওখানে পেপার পাই তখন সংবাদ আর কলকাতার যুগান্তর এগুলো পড়তাম। পড়তে পড়তে একদিন একটা চেতনা জাগল আমিও একটা লিখতে পারব বলে। একদিন একটা লেখা লিখে পাঠালাম। জবাব দিল যে, তোমার লেখাটি ভালো হয়নি আর একটা লিখে পাঠাও। ‘বৃষ্টি নেমে আয়’ নামে একটা লিখলাম ওইটা ছাপা হলো ‘সংবাদ’-এ। পড়ে দেখলাম আমি পুরস্কারও পেয়ে গেছি। খুব খুশি ওখানে তো হৈচৈ পড়ে গেছে। সকলেই বলছে আরে রান্না করে বাবুর্চি ছেলে, তার লেখা ছাপা হয়েছে-আবার পুরস্কারও পেয়েছে, সবাই তাজ্জব হয়ে গেল। ওখানে মাহবুব আলম আছে, মাহবুব আলম সাহেব সবিহ উল আলমের বাবা। উনি ‘জামানা’ পত্রিকা করতেন। উনাদের অফিসের মধ্যে আমাকে নিয়ে বেশ আলোচনা হতো। আমি রান্নাবান্না করে কাগজে লিখি এটা খুব সহজ কথা না। যা-ই হোক ওখানে আমাকে বলল, ওকে স্কুলে দিলে ভালো হতো। তখন মাহবুবুল আলম সাহেব বললেন, ওকে পড়তে দিবেন না-ও নিজের মতো করে বেড়ে উঠুক। তারপর উনি একদিন একটা কথা বললেন আমাকে, ‘যখন তুমি রান্না করবা তখন তুমি একজন রান্না কর্মী। আর যখন লিখতে বসবা তখন তুমি পৃথিবীর সব কবির মতো একজন কবি মনে করবা নিজেকে।

তারপর ঢাকায় এলেন কোন সময়ে

১৯৫৮-১৯৬০, তিন বছর চট্টগ্রামে ছিলাম দেখছি যে ওখানে বেতনে পোষাচ্ছে না। ঢাকায় চলে এলাম পরিকল্পনা করে যেখানে বৌদ্ধরা মিলিত হয়। বুদ্ধপূর্ণিমা ১৯৬০ সালের জুলাই মাসে সেখানে আসলাম। সেখানেই পরিচয় হয় ডিপি বড়ুয়া ও দিপক বড়ুয়ার সঙ্গে। এখানে এসে একটা রান্নার কাজ পেলাম। পাঁচ জনের জন্য রান্না ৫ টাকা করে ২৫ টাকা। আমি এতেই খুশি ছিলাম, কারণ আমার মা একলা ছিলেন মামাবাড়িতে। টাকাগুলো পাঠালে কিছু উপকার হতো বলে খুব খুশি হতেন। তারপর ডিপি বড়ুয়ার মেসটা ভেঙে গেল। এর মাঝখানে র‌্যাঙ্কিং স্ট্রিটের একটা বাসায় গেলাম। ওখানে ৭ মাসের মতো কাজ করেছিলাম। ১৯৬১ সালে আমার মা মারা গেছে। এরপর ড. কামাল হোসেন খবর পাঠালেন আমার চাকরি হবে। আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল, মা মারা গেছে এখন আর চাকরি করে কী হবে? তারপর ১৯৬২ সালেই কাজে লেগে গেলাম ৬৪ টাকা বেতনে, একটা প্রজেক্ট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর ওখান থেকেই শুরু আর কী। লেখালেখি করি, পড়ি। 

৬৯-এর আন্দোলন মনে পড়ে? তখন তো খুব ছড়া লেখার চল ছিল স্লোগানধর্মী...

এখন যে শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন, মাহমুদুল্লাহসহ আরও অনেকেই ছিলেন। রশিদ সিনহা তো মারা গেছেন, আড্ডা করতেন তারা পল্টন ময়দানে। বিকেলে আড্ডা বসতো, তখন তো সরকারবিরোধী লেখার একটা চল ছিল। ১৯৬৬ সালের দিকে শফিকুন নবীও ছিলেন। আমিও যেতাম, লেখা তো হতোই...

ছড়ার বাইরে আর কিছু লেখার কথা ভেবেছেন কখনো

গল্প লিখেছি, হ্যাঁ ফাঁকে ফাঁকে। লিখেছিলাম চট্টগ্রামে থাকতেই। সংখ্যায় খুব বেশি নয় তা। তারপর ঢাকায় এসে তৎকালীন পাকিস্তানি খবরের কাগজেও লিখেছিলাম। পরে আর লেখা হয়নি। ছড়াই লিখেছি। ছড়া এসে যায়, যেটা  আসে আর কী! আমাকে টানে খুব। 

কাদের ছড়া ভালোলাগে আপনার

মাহমুদুল্লাহ, মোহাম্মদ মোস্তফা, শেষের দিকে লুৎফর রহমান রিটন। আমীরুল ইসলাম পরীক্ষামূলক লেখে আর কী, লেখক হিসেবে টানে। নতুন কিছু করার চেষ্টা।

শিশুসাহিত্য শিশুর মানস গঠনে, চিন্তার বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ বিষয়টি নিয়ে একটু বলুন

আমাদের সময়ের কথা বলি, আগের দিনে যে রকম বই পড়ার আগ্রহ ছিল; এখন মোবাইল আসার পর বই ধরে কিনা আমার সন্দেহ! কিছু কিছু পড়ে; কিন্তু যত পড়ার কথা তা পড়ছে না। ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস আসার পর, সব যেন ওই ডিভাইসে ঢুকে পড়েছে। এই যে মোবাইল বন্ধ করার পর কেমন করে চালু করতে হয় আমি জানি না; কিন্তু আমার নাতনি হলে বুঝিয়ে দিতে পারত। সে স্কুলে মাত্র ক্লাস টুতে উঠেছে।  

‘ঠিক আছে ঠিক আছে’ ছড়াটা কোন সময়ে লিখলেন

ঠিক আছে, কী যেন কী-তাও নাকি ঠিক আছে! শব্দটা ঢুকে গেল। তিন বছর ধরে মাথায় ঘুরছিল শব্দটা। খুব জ্বালাতন করছিল। লিখতে লিখতে তিন বছর লেগে গেল। তিন বছর পর ‘ঠিক আছে ঠিক আছে’ লিখলাম। 

আপনার নিজের বই-ছড়া সম্পর্কে বলবেন?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ আমার ছড়া বের করেছেন বহু বছর আগে। এখনো তাতে প্রতিবছর বিল আসে, ভালো লাগে। কতবার বইটা যে প্রিন্ট হলো। নিজের জন্য এটা ভালো লাগে। অন্য কোনো প্রকাশনা এমন গুছিয়ে আমাকে টাকা পাঠায় না। লন্ডন থেকে সাইফুল্লাহ মাহমুদ তো খোঁজই নিল না। এত ভালো বইটা সে নিয়েছে। কী আর বলব! 

আপনি ছড়া লিখে বাংলা একাডেমি, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১৭ সালে একুশে পদক পেয়েছেন...

হ্যাঁ, আমি খুব খুশি। খুবই আনন্দিত। আমার জীবনের প্রাপ্তি অনেক। অনেক পেয়েছি। কৃতজ্ঞ তাদের কাছে। আর একটা খারাপ লাগা রয়েছে আমার-আমি ১৭ বছর হলো অসুস্থ, লিখতে পারি না এখন, তারপর আবার স্মৃতি হারাচ্ছে, মনে থাকে না কিছু।  

আপনার দৃষ্টিতে শিশুসাহিত্যে চমক রয়েছে এমন কার লেখার কথা বলবেন?

ওই যে হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছেন। হুমায়ূনই লিখতে পারতেন বোধ হয় শিশুসাহিত্য। দ্বিতীয় হুমায়ূন আহমেদ আছে কিনা জানি না। হুমায়ুন আজাদের লেখাও ভালো লাগত।

শিশুসাহিত্য আপনার ভাবনায় কেমন

শিশুসাহিত্য বলতে বাচ্চাদের বোধগম্য হতে হবে এটাই বুঝি। বাচ্চাদের মতো সহজ হতে হবে। বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড়, পথের পাঁচালী এগুলো তো হাতে পেলে পড়া শেষ না করে রাখা যায় না। এই যে চাঁদের পাহাড়কে এখন অন্যরকম করে সিনেমা বানিয়েছে। দেখেছ তো? 

হ্যাঁ, দেখেছি। এটাও ঠিক পরিচালকের ভাবনা তো তার নিজের মতোই হবে। তবে গল্পের মূল ঠিক রাখাটাও জরুরি। একটু বেশি ভৌতিক লাগে বোধহয়... আপনি দেখেছেন ওটা?

এখন দেখলাম, বই পড়তে পারি না তো, ছোটবেলায় পড়েছি। দেখি কিছু একটা আসছে। শিশুর ভয় লাগে। ভয় লাগার মতো কিছু আছে। আসলে শিশুর আনন্দ পেতে হবে পড়ে কিংবা দেখে, তবে তা শিশুর হবে। না হলে তা কী করে শিশুর হবে। ছড়া যেমন শিশুকে দোলায় ঠিক তেমনি দুলুনি দরকার শিশুসাহিত্যের সব ক্ষেত্রে।  

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫