সাম্রাজ্যবাদের কারণে মুসলিমরা অতিরঞ্জিত উপায়ে প্রতিক্রিয়া জানায়: জাহা হাদিদ

অনিন্দ্য হাসান
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ১০:৩৬

ব্রিটিশ ইরাকি স্থপতি জাহা হাদিদ। ছবি: সংগৃহীত
১৯৫০ সালের ৩১ অক্টোবর ব্রিটিশ ইরাকি স্থপতি জাহা হাদিদের জন্ম। আরবিতে তার পুরো নাম জাহা মুহাম্মদ হুসাইন হাদিদ আল-লাহিবি। জাহা জন্মেছিলেন ইরাকের মসুলে। তার পিতা মুহাম্মদ হাদিদ ইরাকি ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা ছিলেন।
মসজিদ থেকে শুরু করে পুব-পশ্চিমের বহু স্থাপত্যের রূপকার তিনি। জয়নেপ ফাদিলিগলু বিশ্বে প্রথম, জাহা দ্বিতীয় মসজিদের নকশাকার হিসেবে পরিচিত। বলা হয়- স্থান ও বস্তুর গঠনের চিরাচরিত ধারণা, গতানুগতিক জ্যামিতিক ভাবনা ও নিয়ম-কানুন সব ভেঙেচুরে তিনি জন্ম দিয়েছিলেন স্থাপত্যশিল্পের নতুন এক ভাষার।
সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই বিখ্যাত ছিলেন তিনি। হাদিদের সবচেয়ে আইকনিক কাজের মধ্যে রয়েছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘সিনসিনাটি কন্টেমপোরারি আর্ট সেন্টার’, ‘ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অক ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস লাইব্রেরি’ ও ‘লন্ডন অ্যাকোয়াটিকস সেন্টার’, যেটি মূলত ২০১২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। এই কাজগুলোর প্রতিটিতে তিনি তার প্রিয় উপাদান কংক্রিট ব্যবহার করেছেন।
আর এটার ব্যবহার এমনভাবে করা হয়েছে, মনে হয় যেন এগুলো ভিন্ন জগতের। ২০১৬ সালে মৃত্যুর আগে তিনি কাতারের আল-জুনুব স্টেডিয়ামের নকশা করেন। এটি প্রস্তুত এখন ফিফা বিশ্বকাপের জন্য। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ ৬৫ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
স্থাপত্যশিল্পকলায় অবদানের জন্য বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সব পুরস্কারই পেয়েছেন তিনি। এই দুই কিংবদন্তি স্থপতির কথোপকথনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। বিশেষত ক্রমবর্ধমান ইসলামফোবিক বিশ্বে একজন মুসলিম নারী হিসেবে জাহার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা উঠে এসেছে, যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
এটি ‘ইন্টারভিউ’ ম্যাগাজিন থেকে দেশকালের পাঠকের জন্য ভাষান্তর করেছেন- অনিন্দ্য হাসান
আপনার সামগ্রিক কর্মজীবনে আপনি কোথায় আছেন বলে মনে করেন। মাঝামাঝি, মাঝামাঝির আগে, না মাঝামাঝি পেরিয়ে?
হুম, কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে আমি বলব- এটি মাঝামাঝি পেরিয়ে গেছে। যেমন- আপনি জানেন, এই ধরনের লক্ষ্যগুলো সবসময় স্থানান্তর হতে থাকে। যদি ১০ বছর আগে, ২০ বছর আগে আমার একটি নির্দিষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকত, তবে এটি তখনকার মতো; এখনকার মতো নয়।
আপনি সম্প্রতি প্রিটজকার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যা আপনার প্রতি আমার মনোভাব বিস্মিত করেছে। এটা গ্রহণ আপনাকে খুশি করেছে, নাকি আপনাকে নার্ভাস করেছে, না আপনার বোঝা বাড়িয়েছে, অথবা আপনাকে উদ্দীপিত করেছে?
প্রিটজকার সম্পর্কে খুব দ্রুতই প্রতিক্রিয়া জানাতে বলা আর কী! তবে এটা এখন পর্যন্ত বোঝা নয়। লোকে আমাকে এমন একজন হিসেবে আরও বেশি দেখেছে, যে কিনা একটি প্রকল্প করতে পারে; কিন্তু আমাকে গ্রহণ করতে তাদের এতটা সময় লাগল! পুরস্কারের প্রভাবে আমার দরজা দিয়ে কাজের বন্যা বয়ে যাবে না। আমি সত্যিই জানি না যে, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কতটা।
এটা কি আপনাকে বিরক্ত করবে যে, এখন থেকে আপনাকে ‘প্রিটজকার পুরস্কার বিজয়ী’ হিসেবে বর্ণনা করা হবে?
আমি নিশ্চিত নই এটা কতদিন চলবে। আমি বলতে চাচ্ছি- আপনি আরো ভালো জানেন। আমার ক্ষেত্রে এটি এখন অনিবার্য বিশেষণ (উভয়ে হেসে ওঠে)। যেটা আমাকে বলতেই হবে, সত্যিই আমাকে বিরক্ত করে। আমি সত্যিই এই সমস্ত সম্মানের উপযুক্ত ছিলাম না। কারণ এটা দিয়ে বোঝাবে যে, আপনি একজন ক্যারিয়ারিস্ট। পদে পদে এটা বহন করতে হবে।
আমার চিন্তা এটাকে খুব বেশি গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে না, আর আড়ম্বরপূর্ণ হয়ে উঠছে না। এটি আমাকে বিরক্ত করছে। তবে আমি এটি উপভোগ করার ও এড়িয়ে যাওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আপনি ভালো করেই জানেন, আপনি যত পুরস্কারই পান না কেন, আপনি এখনো আপনার ক্লায়েন্টদের দ্বারা হেঁটে যাচ্ছেন। এটি একটি খুব কঠিন পেশা, আর তাই এটি আপনাকে জগতের সামনে নিয়ে আসে। আপনার ভাবার সময় নেই ‘ওহ, এটা দুর্দান্ত! আমি চমৎকার!’
আপনি কি মনে করেন যে, আপনার কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ, নাকি মনে করেন আপনি পরিবর্তন করেছেন?
আমি মনে করি কাজে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমি প্রথম যা করতে শুরু করি, তখন এটা নতুন ছিল, তবে সব সময় নতুন থাকাটা খুব কঠিন। একটি পয়েন্ট আছে- যখন আপনাকে সর্বদা উদ্ভাবনী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে, এর মধ্য থেকে আপনি এমন কিছু আবিষ্কার করেন, যা আপনি কখনই ভাবতে পারেননি।
অন্যদিকে আপনাকে আপনার সংগ্রহশালা তৈরি করতে হবে আর এটা নানা উপায়ে প্রাণবন্ত করে। নিজের মতো করে নিজের মধ্যে নতুন এই ধারণা জাগ্রত করতে হবে। একটি বিষয়, যা আমার কাজে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল তা হলো- প্রকল্প ও সাইটের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা। আমি মনে করি সাইটের কাস্টমাইজেশন খুব আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, যদিও প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনি যেভাবে মোকাবিলা করেন তা বেশ আলাদা।
আপনি কি বলবেন যে, এটি আপনার কাজের মধ্যে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ, অন্তর্নিহিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা?
ঠিক আছে, এটা আর নাগরিক স্থান সম্পর্কিত ধারণাগুলোর অধ্যয়ন। যদিও প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আপনি চাহিদার সংমিশ্রণকে কীভাবে ব্যাখ্যা করেন তা পরিস্থিতিকে বেশ অপ্রত্যাশিত করে তোলে।
স্থাপত্যের ক্ষেত্রে নতুন কী আছে, আপনি কি মনে করেন যে, তরুণ প্রজন্ম আপনার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে?
কীভাবে সেটা?
আপনার প্রতিষ্ঠানের স্থপতি বা সহকর্মীদের কাজের মধ্যে কি এমন কিছু আছে, যা বিশেষভাবে প্রাণবন্ত আর আপনি যা করছেন তা নিয়ে আপনাকে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করেছে?
এখনো না। (হেসে) একভাবে, সবকিছু বেশ অনুমানযোগ্য হয়ে উঠেছে। অল্প বয়স্ক স্থপতিদের কাজে নতুন ভাষ্য হয়েছে, তবে আমি মনে করি এটি এত আশ্চর্যজনক নয়। আমি এখনো সেই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছি, যখন কিছু আমাকে তাক করবে।
আর আপনাকে নার্ভাস করবে?
তবে আমি স্বভাবতই এটা নিয়ে বেশ নার্ভাস। আপনি যখন নিজে থেকে শুরু করেন তখন আপনি একটি বিষয় শেখেন তা হলো- আত্মসমালোচনা, যা আমাদের প্রান্তে রেখেছে। আমি বলছি না যে, আমরা সবসময় দুর্দান্ত কাজ করছি, তবে আমরা সারাক্ষণ চাপ দিচ্ছি।
আপনি কতটা শেখান?
আচ্ছা, এ বছর আমি ইয়েলে (ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে) ও ভিয়েনায় অ্যাপ্লাইড আর্টস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছি।
আপনি কবার ক্লাস নিতে যান?
ভিয়েনায় আমি মাসে একবার যাই।
পড়ানো কি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ?
আমার মধ্যে ২০ বছর আগের মতো শিক্ষাদানের সেই সামর্থ্য নেই। তখন আমার খুব ভিন্ন একটা পদ্ধতি ছিল, আমি খুব কর্মচঞ্চল ছিলাম আর সব সময় সেখানে থাকতাম। তবে আমি এখনো মনে করি আপনি শিক্ষার মাধ্যমে এমন কিছু আবিষ্কার করতে পারবেন, যা আপনি অন্যভাবে পারবেন না।
তা হলে শিক্ষাদানের মাধ্যমে আপনি নিজে কিছু কৌশল শেখেন?
হ্যাঁ। উদাহরণস্বরূপ গত বছর ইংল্যান্ডে আবাসন সম্পর্কে ছিল, আর তার আগের বছর বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র সম্পর্কে। গণব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে, এটি আসলে খুব আকর্ষণীয় ও সতেজকর হয়েছিল। এটি একটি খুব বড় আকারের প্রকল্প ছিল। আর আমার ছাত্রদের মধ্যে কেউ এ ধরনের কাজে সত্যিই যায়নি।
এটি আপনার কাছে আকর্ষণীয় ছিল। কারণ এটি আপনাকে এমন অঞ্চলে ঢুকতে বাধ্য করেছে, যেগুলো পেশাগতভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হননি?
ঠিক আছে ব্যাপারটা। এটা আসলে বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এটা আপনাকে এমন একটা প্রকল্পে আরও গভীরভাবে সাথে যেতে বাধ্য করে, যা আপনি হয়তো ভালোভাবে জানেন না।
একদিকে অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিগত ভাষা আর অন্যদিকে আপনার জন্য কাজ করা বিপুল সংখ্যক স্থপতি- এদের মধ্যকার দ্বন্দের সমাধান আপনি কীভাবে করেন? আপনার অফিসে কত লোক আছে?
প্রায় ৬৫ বা ৭০। তবে শুধু আমিই নই, যার দক্ষতা আছে এমন বেশ কজনকে দলের মধ্যে পরিচালনা করি। এ ছাড়াও আমার অফিসে যারা এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের অনেকেই এখানে কয়েক বছর আগে শুরু করেছিল; তারা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তারা যেভাবে প্রকল্পগুলো পরিচালনা করেন তার মধ্যে একটি অসাধারণ স্বাধীনতা রয়েছে। তবে এই বুঝ আছে অফিস যত বড় হবে, স্বাধীনতা পাওয়া তত বেশি কঠিন। অগত্যা প্রতিটি প্রকল্প আলাদাভাবে করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে অন্য লোকদের স্বর চেনাতে এটা করা হয়।
এটা কি ঘটছে?
হ্যাঁ, আমার মনে হয়। এটি এখনো একই ধরনের রূপবিদ্যায়; কিন্তু এখন যেহেতু প্রকল্পগুলো আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে। তাই বিষয়টি আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে ও মানুষের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করছে।
তাহলে আপনি কি বলবেন যে, এটি আপনার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি দিক?
হ্যাঁ। এটা আমার কাছে এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা একটা প্রজেক্ট ভালোভাবে করি যেটাকে একটি নির্দিষ্ট উপায়ে দেখা উচিত তার বিপরীতে। লোকেরা অনুমান করে- এমন একটি হাত রয়েছে, যা সবকিছু পরিচালনা করে; তবে আমি মনে করি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করা ও নতুন জিনিস আবিষ্কার করা আরও ভালো।
অফিস বড় হওয়ার সাথে সাথে আপনার সময় ও কাজের চাহিদা বাড়তে থাকে, তাই আপনি অন্যভাবে দেখতে শুরু করেন। আর আমি মনে করি যে জিনিসগুলো তৈরি করার অভিজ্ঞতা আপনি যেভাবে করেন তার ওপরও প্রভাব ফেলে।
আপনি কংক্রিট (সিমেন্ট, বালি, খোয়া নির্দিষ্ট অনুপাতে পানির সংমিশ্রণে তৈরি কৃত্রিম পদার্থকে কংক্রিট বলে। কংক্রিটের চাপ সহ্যক্ষমতা বেশি) সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন? কারণ আমি যখন আপনার কাজ দেখি তখন আমার মনে হয় যে, আপনি এটিকে অন্য যে কোনো উপাদানের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন।
এটি একটি চমৎকার উপাদান, আর এটি দিয়ে আপনি অনেক কিছু করতে পারেন। আমার প্রথম দিকের কিছু প্রকল্পে কংক্রিট খুব ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ- ভিট্রা (ওয়েইল অ্যাম রেইন, জার্মানির ভিট্রা ফায়ার স্টেশন) বা স্ট্রাসবার্গ (ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গে টার্মিনাস মাল্টিমোডাল হোয়েনহেম নর্ড)।
এ ছাড়া ওল্ফসবার্গের বর্তমান প্রকল্প (জার্মানির ওল্ফসবার্গের ফেনো সায়েন্স সেন্টার)। আমি কংক্রিট পছন্দ করি; কিন্তু আমি মনে করি আমাদের অন্যান্য জিনিসের দিকেও নজর দেওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ- কাঠামো কী করতে পারে আর কীভাবে নিজস্ব উপাদানের প্রতি বাস্তব হওয়া উচিত তা নিয়ে আমার ভাবনা আছে।
এখন আমরা আরও জটিল লম্বা ভবনগুলো দেখতে শুরু করতে পারি। হয়তো কাঠামোটি কংক্রিট, তবে আমরা ত্বকের দিকে তাকানো শুরু করতে পারি আর আপনি কীভাবে এটি ব্যাখ্যা করবেন। আমি মনে করি না এটি কেবল কংক্রিট আর্কিটেকচার হওয়া উচিত।
সেকারণে এটি আপনার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়ার্ধের আরেকটি অংশ?
হ্যাঁ, কিছুই পুরোপুরি অর্জন হয় না।
আমার কাছে অনেক শব্দ আছে, যেগুলোর প্রতি আমি খুব সংক্ষিপ্তভাবে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই। প্রথমত, ইরাক?
কঠিন একটা শব্দ। ইরাক আমার জন্য খুবই বেদনাদায়ক।
ইংল্যান্ড?
আরও কঠিন। আবার যথেষ্ট মজার। আরব বিশ্ব ও ব্রিটেনের মধ্যে কিছু মিল আছে। আর এ কারণে প্রচুর আরব এখানে আসে ও বসোবাস করতে থাকে। আমেরিকা ও জার্মানি এবং অন্য অনেক জায়গার বিপরীত। কালো ও সাদা, আরব বিশ্ব আর ইংল্যান্ডের ‘হয়তো’-এর মধ্যে একটি মিল আছে। আর তাই সমস্যা সমাধানের জন্য একটা শাশ্বত ঠিকানা। একটি দুর্দান্ত স্বাধীনতা, আবার অন্য দিকে এর অর্থ তারা পাত্তা দেয় না। ইংল্যান্ড, এটি একটি ধূসর পৃথিবী; শুধু আবহাওয়ার কারণে নয়।
চীন?
খুব উত্তেজনাপূর্ণ, একটা নয়াপৃথিবী।
ইসলাম?
এটা খুবই ভুল বোঝাবুঝি। আমি সাম্প্রতিক ধর্মীয় শাখাগুলোর কোনোটিই পছন্দ করি না। সবকিছু সহজে সমাধান করা যায় না। তবে আমি মনে করি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের কারণে তারা অতিরঞ্জিত উপায়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। উদাহরণস্বরূপ- কিছু লোক, যারা আগে খুব উদার ছিল তারা এখন বোরকা পরে, আর যারা কঠোর ছিল তারা আরও আধুনিক হয়েছে। পশ্চিমা ও ইসলামি বিশ্বের মধ্যে একটি মৌলিক ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে যে, সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করলে প্রতিকার পাওয়া যাবে।
আপনি কি মনে করেন আপনি সেখানে একটি ভূমিকা রাখতে পারেন?
কেউ আমার কাছে আসেনি। অবশ্যই, আমি একটি ভ‚মিকা পালন করতে চাই; কিন্তু আমি মনে করি এমন কিছু লোক আছে, যারা এটা আমার চেয়ে ভালো বোঝে। আর আমি এটাকে বাইরে থেকে দেখি, কারণ আমি ইসলামিক পদ্ধতিতে বড় হয়েছি। এটা আমাকে বিস্মিত করে- কেন এত ভুল বোঝাবুঝি। আমি মনে করি যে, এই বিষয়গুলো ধর্ম সম্পর্কে নয়, সংস্কৃতি ও রাজনীতি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া।
এ সম্পর্কে আমার নিশ্চিত জ্ঞান নেই, তবে মহিলাদের ভূমিকা সম্পর্কে বলবেন?
লোকেরা আমাকে এই প্রশ্নটি প্রায় সময়ই করে। আমি সত্যিই জানি না, ইসলামে নারী ও পুরুষের মধ্যে আদৌ কোনো পার্থক্য আছে কিনা; কিন্তু কাজের জন্য আমি নিশ্চিত যে, কোনো বাধা আসে না। আমার জীবনে এধরনের কোনো পরিস্থিতি হয়নি।
আর আমি সত্যিই চিন্তা করি না যে, লোকেরা কী ভাবছে, আমি কীভাবে পোশাক পরব ও কীভাবে আমার আচরণ করতে হবে। সত্যিই আমাকে স্বাধীনতা একটি ডিগ্রি দিয়েছে। আমি একধরনের উদ্ভট ছিলাম, তাই ব্যাপারটি দুভাবে কাজ করেছিল। পুরুষ আর নারী মস্তিষ্ক আলাদাভাবে কাজ করে কিনা সে বিষয়ে আমার ধারণা- হয়তো সেটা করে। তবে আমি বলতে পারি না কীভাবে সেটা।
এটা নির্ভর করে আপনার স্কুল বা আপনার বাবা-মা আপনাকে কতটা আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন তার ওপর। আর আপনি পুরুষ বা নারী কিনা তার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আমি মনে করি এটি আপনার কর্মজীবনে নারীদের অনেক প্রভাবিত করে, যদি আপনি বিভিন্ন বিষয় চেষ্টা করেন তবে এটি আপনাকে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার সম্ভাবনা জাগাবে।
অনেক নারী এটি করার জন্য প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও সমর্থন পায় না। তারা যেভাবে চিন্তা করে বা তাদের মস্তিষ্ক আলাদা বা যা কিছু হয়, তা নিজেদের তরফে হয় না।
আমার একটি চূড়ান্ত প্রশ্ন আছে- আপনি কি কখনো নিজেকে অন্য কোনো পেশার সাথে কল্পনা করেছেন?
অনেক বছর আগে আমি গায়ক হতে চেয়েছিলাম। আমি মনে করি আমি রাজনীতিতে যেতে পারতাম বা সাইকিয়াট্রিস্ট হতে পারতাম। এই বিষয়গুলোই আমি মনে করি যে, আমাকে করতে পাঠানো হয়েছিল।
তা হলে রাজনীতিবিদ, সাইকিয়াট্রিস্ট আর গায়ক?
সব মিলিয়ে। (হেসে) রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থীর মতো শোনাচ্ছে। আপনি যখন অনেক ছোট তখন আপনি মনে করেন যে, আপনি অনেক কিছু করতে পারেন। যদিও আমি সবসময় আর্কিটেকচার পছন্দ করি। আমি নিশ্চিত নই যে, আমি এখন ক্যারিয়ার পরিবর্তন করতে যাচ্ছি কিনা।