এম ডি হোসাইন
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ পিএম
আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ পিএম
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ পিএম
এম ডি হোসাইন
আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম। সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে এই উপদেষ্টার সঙ্গে সাম্প্রতিক দেশকাল পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন এম ডি হোসাইন।
৫ আগস্টের পর গণমাধ্যমের ভূমিকাকে কিভাবে দেখছেন?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শুনেছি আমাদের সংবাদ প্রচার করতে দেওয়া হয়নি। আমাদের সংবাদ সংগ্রহের কারণে মিডিয়া হাউসগুলোতে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হয়েছেন। ৫ আগস্টের পরও সেই সাংবাদিকদের নানা চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে বলে জেনেছি। যে হাউসগুলোতে ফ্যাসিবাদের এজেন্টরা রয়ে গেছে, তাদের বিতাড়িত করতে হবে। আমরা স্বাধীন গণমাধ্যমের কথা বলছি, কারণ আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই। ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া নতুন বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব নয়। গণমাধ্যম থেকে জুলাই
গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা (স্পিরিট) এবং আকাঙ্ক্ষা পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখনো আমাদের অনেক ভাই-বোন আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। এখনো অনেকে শহীদ হচ্ছেন। অথচ গণমাধ্যমগুলোতে সেই শহীদ ও আহতদের কথা দিন দিন কমে আসছে। জনগণের স্মৃতি থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু গণমাধ্যম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের নিহত হিসেবে উল্লেখ করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের সব প্রজ্ঞাপনে তাদের শহীদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশবাসী তাদের শহীদ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, সেখানে গণমাধ্যম তাদের শহীদ বলতে কার্পণ্য করছে।
এই আন্দোলনের স্পিরিট কি ছাত্ররা ধরে রাখতে পারবে?
ছাত্ররা বারবার দেশের কল্যাণে রক্ত দিয়েছেন, কিন্তু আন্দোলনের সফলতা তারা সব সময় পাননি, বারবার বঞ্চিত হয়েছেন। এবার সুযোগ এসেছে, ছাত্রদের আত্মত্যাগের প্রতিদান দিতে হবে। ছাত্ররা শিক্ষাজীবন শেষ করে যেন কর্মসংস্থান করতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দেশ গঠনে তরুণদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। তরুণদের যোগ্য হয়ে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে হবে।
শহীদ সাংবাদিকদের পরিবার ও আহতদের জন্য সরকার কী ভূমিকা রেখেছে?
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যেসব সাংবাদিক শহীদ ও আহত হয়েছেন, তারা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সম্মাননা দেওয়া হবে। এই আন্দোলনে শহীদ সাংবাদিকদের পরিবার ও আহত সাংবাদিকদের পাশে থাকবে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। সেই কাজের অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পর্যায়ে ৩৫০ জন সাংবাদিককে অনুদানের চেক প্রদান করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো সাংবাদিককে অনুদান দেওয়া হবে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সাংবাদিকতাকে নতুন করে দেখতে চায় জনগণ। সে জন্য গণমাধ্যমের সংস্কার প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে সরকার গণমাধ্যম সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।
ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায় বলে জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডের কোনো নীতিমালাই ছিল না, দলীয় কর্মীদেরও অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিককে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়নি। সেই জায়গা থেকে এই জঞ্জাল পরিষ্কার করতে হবে। যদি কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকে, অপরাধ না করেও যদি নাম এসে থাকে, সেটার ব্যবস্থা আমরা নেব। দ্রুত সময়ে যেহেতু কাজ করতে হয়েছে, তাই ভুলত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু যারা মূলত সাংবাদিক না, সাংবাদিকদের নীতিমালার মধ্যে পড়ে না, যারা ব্যক্তিগত নানা সুবিধার মধ্য দিয়ে গত সরকারের আমলে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পেয়েছিলেন, সেগুলোই বাতিল করা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে আইনগত বা আর্থিক অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। নবায়নের সুযোগ থাকবে। ধীরে ধীরে নবায়ন করব। কারো যদি নাম এসে থাকে, তিনি যদি তথ্য-প্রমাণ দেন, তাকে আবার বিবেচনা করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারগুলো কী?
কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এখন রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রম চলছে। সেখানে অর্থনৈতিক সংস্কারও হবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে অন্তর্বর্তী সরকার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে, যাতে দেশে-বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং জননিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা পুলিশের ভেতরে যে ধরনের পুনর্গঠন বা সংস্কার প্রয়োজন, পাশাপাশি আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, শিক্ষার্থীদের আবার শিক্ষামুখী করা- এই বিষয়গুলোও সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে।
এই সরকারের মেয়াদ কত দিন হতে পারে? জাতীয় নির্বাচন কবে হবে?
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান একটি লক্ষ্য হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া তৈরি করা। এ বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ অনেক দিন ধরে ভুগছে। ক্ষমতা হস্তান্তরের সাংবিধানিক সুষ্ঠু কোনো প্রক্রিয়া ছিল না, মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। প্রয়োজনীয় সব সংস্কার শেষে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকার প্রায় ১৬ বছরে দেশে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে। সরকার দেশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে, যাতে দেশ ও দেশের মানুষ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh