গণহত্যার বিচারে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনা: আসিফ নজরুল

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক, কিছুদিন বাংলাদেশ সরকারের একজন সরকারি কর্মকর্তা (ম্যাজিস্ট্রেট) হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি একাধারে লেখক, ঔপন্যাসিক, রাজনীতি-বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে  ১৯৮৬ সালে স্নাতক এবং ১৯৮৭ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ১৯৯৯ সালে সোয়াস (স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ) ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে তার পিএইচডি সম্পন্ন করেন। পরবর্তী সময়ে জার্মানির বন শহরের এনভায়রনমেন্টাল ল সেন্টার থেকে পোস্ট ডক্টরেট ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে একজন কমনওয়েলথ ফেলো হিসেবেও কাজ করেছেন। এ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে সোচ্চার ছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার কার্যক্রমসহ নানা বিষয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম ডি হোসাইন।

অভিযোগ আছে জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে, এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা কী? 

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার দ্রুত শেষ করতে চায়। প্রয়োজনে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনা আছে। আগামী দু-এক মাসের মধ্যে হয়তো দেখা যাবে ঘন ঘন শুনানির তারিখ পড়ছে। বিচারকাজের গতি নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। যদি বিচার আরো দ্রুত করতে হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করার পরিকল্পনাও আছে। তবে বর্তমান বিচার কার্যক্রম নিয়ে আমরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট। কারণ গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন করে অনেক কাজ করতে হয়েছে। এসব কাজ করতে অনেক সময় লেগেছে। আশা করি, এখন বিচার কাজের গতি আগের চেয়ে বাড়বে। 

বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে আপনারা কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন?

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনার বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এ নিয়ে কাজ চলছে। আশা করি, দ্রুত শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে পারব। শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য আমরা ভারতের কাছে চিঠি লিখেছি। চিঠি লেখার পর ভারত যদি শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করে, তাহলে এটি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে প্রত্যর্পণ চুক্তি, সেটির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে। সে ব্যাপারে আমরা বিশ্বসমাজে কী পদক্ষেপ নেব, সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঠিক করা হবে। এ ছাড়া ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারির লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আরো কিছু করণীয় থাকলে ক্ষেত্রবিশেষে চিন্তা করে তা অবশ্যই করা হবে। আমাদের যা যা করণীয়, তা করছি। 

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার আগে হবে, নাকি নির্বাচন আগে হবে? 

নির্বাচনের সঙ্গে বিচারের কোনো বিরোধ নেই। বিচারকাজের গতি নিয়ে আমরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট। ফলে বিচারের কাজ তার গতিতে চলবে। আর নির্বাচনের প্রস্তুতি নির্বাচন কাজের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, তারা নেবেন।

জুলাই গণহত্যার বিচার কি নির্বাচনের আগেই সম্ভব?

আশা করছি, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই ট্রায়াল কোর্ট তথা বিচারিক আদালতে এই বিচারকাজ শেষ করা সম্ভব হবে। জুলাই গণহত্যার বিচারের কার্যক্রম অত্যন্ত সাবলীলভাবে চলছে। আগামী মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারের শুনানি শুরু হবে। এখানে কারো কোনো প্রকার গাফিলতি নেই। আপনাদের কাছে আমাদের প্রতিজ্ঞা, অবশ্যই বাংলাদেশে যে নির্মম অমানবিক গণহত্যা হয়েছে, সরকার তার বিচার করবে।

স্বতন্ত্র অ্যাটর্নি সার্ভিস কবে চালু করা হবে? 

বিভিন্ন সময় অভিযোগ আসে পাবলিক প্রসিকিউটররা (পিপি) যেহেতু দলীয়ভাবে নিয়োগ লাভ করেন, সে কারণে তারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। তারা রাষ্ট্রের পক্ষে ভূমিকা না রেখে দলের পক্ষে ভূমিকা রাখেন। এতে অনেক ক্ষেত্রে মানুষ ন্যায়বিচার পায় না। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে স্বতন্ত্র অ্যাটর্নি সার্ভিস চালু করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে আইন তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। হয়তো এক মাসের মধ্যে আইন চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

আইন উপদেষ্টা হিসেবে আপনার প্রধান দায়িত্ব কী মনে করেন?

আইন উপদেষ্টা হিসেবে আমার প্রধানতম দায়িত্ব হচ্ছে এই গণহত্যার বিচার করা। আমি যখন সরকারে ছিলাম না, তখন আমিও বলতাম, এটা হচ্ছে না কেন, ওটা হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নগুলো থাকা উচিত। থাকলে আমরা উত্তরটা পাই। আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, আইন উপদেষ্টা হিসেবে আমার প্রধানতম দায়িত্ব হচ্ছে এই গণহত্যার বিচার করা। কিন্তু বিচারটা করার সময় আমাকে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় করতে হবে। 

বিচারটা গ্রহণযোগ্য করতে আপনার কী পরিকল্পনা?

ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রচুর টাকা আছে, লবিং ক্যাপাসিটি আছে, শত্রু ভাবাপন্ন দেশ আছে। তাই এমনভাবে বিচার করতে হবে, যা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠতে না পারে। প্রশ্ন তারা তুলবেই, কিন্তু প্রশ্নটা যেন কোনোভাবে যৌক্তিক না হয়, সে চেষ্টাটা করতে হবে। আমাদের ডিউ প্রসেস রাখতে হবে। আমাদের যে প্রসিকিউটর টিম, ইনভেস্টিগেশন টিম আছে, তাদের প্রতি আমার আস্থা আছে। সারাক্ষণ আমার মনে হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের তিনটা লক্ষ্য আছে- বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। বিচারটা মূলত আমাদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, এখানে কোনো রকম গাফিলতি হচ্ছে না, হবেও না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh