
অফিসে সহকর্মীদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছে। প্রতীকী ছবি
পড়ালেখা শেষে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে অফিসার পদে চাকরি পেয়েছে নীলিমা। আহা কী শান্তি! তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই শান্তি উধাও হয়ে গেল তার, আর তখন ‘আহা’ হয়ে গেল ‘উফ’। কার্যস্থলে দেখে কর্মীদের মধ্যে ক্ষমতা ও প্রভাব নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছে। দলাদলি আর রাজনীতিই সেখানে মুখ্য, সহকর্মীদের ভুলত্রুটি নিয়ে আলোচনা আর সমালোচনা করাই সবার প্রধান বিনোদন। অফিসের বারান্দা থেকে সিঁড়ির কোণ পর্যন্ত ফিসফাস আর গুঞ্জনে মুখরিত। কর্মীরা কাজ বাদ দিয়ে বালতি ভর্তি তৈল নিয়েই যেন ছোটাছুটি বেশি করছে। বড় স্যারকে মেজো স্যার, আর মেজো স্যারকে ছোট স্যার তৈল দিচ্ছেন অবিরত, উপর থেকে নিচ পর্যন্ত এভাবেই চলছে।
এ সব দেখে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর তৈল প্রবন্ধটির কথা মনে পড়ে যায় নীলিমার। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘তৈল সর্বশক্তিমান; যাহা বলের অসাধ্য, যাহা বিদ্যার অসাধ্য, যাহা ধনের অসাধ্য, যাহা কৌশলের অসাধ্য, তাহা কেবল একমাত্র তৈল দ্বারা সিদ্ধ হইতে পারে।’
অফিস রাজনীতির কথা আগে শুনলেও, এ সম্পর্কে কোনো সঠিক ধারণা ছিল না নীলিমার। তবে নিজে এর ভেতরে পড়ে বুঝতে পারছে ভয়াবহতা। কোনো দলের অংশ না হওয়ায় কিছু বোঝার আগেই তার বিরুদ্ধে সবাই একজোট হয়ে যায়। ফলে এমন অবস্থা তৈরি হলো যে, বস্তায় বস্তায় কাজ দিয়ে তাকে নিশ্বাস ছাড়ার সময়ও দিতে চাইল না। তার ওপর রয়েছে অনভিজ্ঞতার বোঝা, যা তাদের মহাজোটীয় নজরদারিতে পড়ল। চাটুকার পরগাছা কর্মী থেকে শুরু করে ধূর্ত সহকর্মী এবং পক্ষপাতদুষ্ট ম্যানেজারের মোকাবিলা করতে করতে চাকরি টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ল।
যখন অফিসের চাপ আর রাজনীতি তার জন্য অসহনীয় হয়ে উঠছিল, তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই জসীমের সঙ্গে দেখা। নীলিমার অসুবিধার কথা জানতে পেরে শোনান নিজের অভিজ্ঞতার কথা। বললেন, অফিসের রাজনীতি নতুন কিছু নয়, এটা প্রায় সব অফিসেই থাকে। তাকে কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দিলেন, শেখালেন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর কিছু উপায়।
এক. সরাসরি দলাদলি না করে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে।
দুই. নিজের কাজকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে এবং কাজের গুণগত মানে ছাড় দেওয়া যাবে না। এতে অফিসের রাজনীতির প্রভাব কমে যাবে এবং কাজের মাধ্যমে অবস্থান শক্তিশালী হবে।
তিন. দক্ষতা বাড়াতে হবে। যত বেশি দক্ষতা অর্জন করা যাবে, অন্যদের প্রভাব তত কম পড়বে।
চার. ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। অফিসের পরিবেশ যখন বিষাক্ত হয়ে ওঠে তখন ধৈর্য ধারণের বিকল্প নেই। এতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি অনুকূলে চলে আসে।
যেই কথা, সেই কাজ। পরের দিন থেকেই জসীম ভাইয়ের কথামতো নীলিমা নেমে পড়ে কাজে, ফলও পেয়ে যায়। বছর শেষে দেখা মিলল বড় অঙ্কের ইনক্রিমেন্টের, একই সঙ্গে অফিসে নিজের গুরুত্বও বাড়ল।