Logo
×

Follow Us

আইন-আদালত

হলি আর্টিজান মামলার আপিলের রায়

মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড যে কারণে দিলেন আদালত

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:১৬

মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড যে কারণে দিলেন আদালত

হাইকোর্ট। ছবি- সাম্প্রতিক দেশকাল

আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা মামলায় ৭ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আজ সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো.মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া আসা‌মিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ।

রায়ে আদালত বলেছেন, আসামিরা স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া কারাগারেই থাকবেন।

হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিক ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে যে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডটি জনসাধারণের মনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টিসহ জননিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে। তাই মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আপিলকারীদের আমৃত্যু কারাদণ্ড (স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত) দণ্ডিত করা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে- হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের রায়ে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

আপিল বিভাগের ‘আতাউর মৃধা ওরফে আতাউর বনাম রাষ্ট্র’ মামলার নজিরের ১৭৯ প্যারায় বর্ণিত পর্যবেক্ষণের মর্ম অনুসারে আপিলকারীদের আমৃত্যু কারাদণ্ড (স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত) দণ্ডিত করা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। সে অনুযায়ী প্রত্যেককে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো এবং তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৫ বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো বলে রায়ে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট। 

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আরিফুল ইসলাম ও আমিমুল এহসান। আসামি পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন এস এম শফিকুল ইসলাম।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ৬(১)(ক) (অ) ধারা অনুসারে অপরাধ করায় বিচারিক আদালত তাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। কিন্তু হাইকোর্ট বলেছেন- না, এই আসামিরা ৬(১) (ক) (আ) ধারা অনুসারে অপরাধ করেছেন। অর্থাৎ এই আসামিরা কেউই সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তারা সহযোগিতার (অ্যাবেটমেন্ট) সঙ্গে যুক্ত ছিল। এখানে সাজা হলো যাবজ্জীবন। এখানে আপিল বিভাগের ‘আতাউর মৃধা ওরফে আতাউর বনাম রাষ্ট্র’ মামলার নজিরের ১৭৯ প্যারায় বর্ণিত পর্যবেক্ষণের মর্ম অনুসারে আপিলকারীদের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতী) সদস্যরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি।

বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ওই ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত হয়ে শুরু হয় বিচার। মামলার আট আসামির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়। টানা এক বছর মামলার বিচার শেষে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালত তার রায়ে সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও একজনকে খালাস দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার অপর আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়।

বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ রায়ের পর নিয়ম অনুসারে ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও খালাস চেয়ে করা আসামিদের জেল আপিল শুনানির জন্য মামলার নথিপত্র বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। বিচারিক আদালতের এসব নথির মধ্যে মামলার এজাহার, জব্দ তালিকা, চার্জশিট, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও রায়সহ মোট ২ হাজার ৩০৭ পৃষ্ঠার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় জমা করা হয়।

এরপর বিচারিক আদালত থেকে আসা মামলাটির সব নথিপত্র একত্রিত করে আপিল শুনানির জন্য উত্থাপনের জন্য পেপারবুক তৈরি শেষে মামলাটি শুনানিতে ওঠে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫