১৭ বছরের ফাইয়াজকে ১৯ দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১২:৪১

১৭ বছরের কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজ। ছবি: সংগৃহীত
একজন কিশোরের হাতে হাতকড়া, কোমরে দড়ি, পুলিশ তাকে আদালতের গারদে নিয়ে যাচ্ছে। আর এমন ঘটনায় আদালত পাড়ায় উপস্থিত সবাই হতবাক। বিস্ময়ে চোখের পলক পড়ছে না তাদের। গতকাল শনিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত জেলা নিম্ন আদালতে এমন ঘটনা ঘটেছে।
জন্ম নিবন্ধন আনুযায়ী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের বয়স ১৭ বছর। কিন্তু পুলিশ মামলার এজাহারে তাকে ১৯ বছর বয়সী বলে দাবি করছে। আর নিম্ন আদালত সেই হিসেবকে বিবেচনা করে কিশোর ফাইয়াজকে ৭ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন।
সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় মাতুয়াইল হাসপাতালের বিপরীত পাশে এক পুলিশ সদস্যকে মেরে ঝুলিয়ে রাখার মামলায় ১৭ জন আসামির মধ্যে ১৬ নম্বর আসামি এ শিক্ষার্থী।
পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে লাশ গুম ও এ কাজে সহায়তাসহ তার মোটরসাইকেল চুরির মামলায় আসামি হিসেবে গতকাল শনিবার (২৭ জুলাই) ঢাকার নিম্ন আদালতে হাজির করা হয় ফাইয়াজকে।
এর আগে গত ২৪ জুলাই রাতে ফাইয়াজকে রাজধানীর মাতুয়াইলের বাসা থেকে সাদাপোশাকে একদল কর্মকর্তা লোকজন এসে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ধরে নিয়ে যায় বলে জানান হাসনাইন।
এদিকে মামলার এজাহারে ফাইয়াজের বয়স দেখানো হয়েছে ১৯ বছর। তবে জানা গেছে, জন্ম নিবন্ধন অনুসারে, হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সে।
ফাইয়াজের আইনজীবী ইশতিয়াক হোসেন বলেন, জন্ম নিবন্ধন ও এসএসসির সার্টিফিকেট অনুসারে, ফাইয়াজের বয়স ১৭ বছর ৩ মাস ৮ দিন। যাত্রাবাড়ী থানার এ মামলায় আদালতে ফাইয়াজের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আমরা বয়সের কারণে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করি এবং এ মামলাটি শিশু আদালতে প্রেরণের অনুরোধ করি। তবে আদালত অপারগতা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত রিমান্ড না দিয়ে মামলাটি নথিভুক্ত রেখে বয়স প্রমাণের অন্যান্য পদ্ধতি অনুসরণ করে তাকে শিশু কারাগারে প্রেরণের অনুরোধ করি। আদালত এ বিষয়েও অপারগতা প্রকাশ করে ৭ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। আমি মনে করি, ফাইয়াজের ৭ দিনের রিমান্ড একটি বিতর্কিত আদেশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইসরাত হাসান বলেন, কারও বয়স যদি ১৮ বছরের চেয়ে এক দিনও কম হয়, তবে ২০১৩ শিশু অধিকার আইন অনুসারে সে শিশু হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সে অনুসারেই শিশু আদালতে তার বিচারপ্রক্রিয়া চলবে। এমনকি কারও বয়স যদি সার্টিফিকেট অনুসারে ১৮ হয় কিন্তু সে দাবি করে তার বয়স ১৮-র কম, তবে তার বয়সের সত্যতা যাচাইয়ের আগে প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে বিচার করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আজ যদি শুধু এজাহারের ওপর ভিত্তি করে ফাইয়াজকে সাত দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়, তবে আদালত তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেছেন। তাছাড়া এটি শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘননই নয়, পাশাপাশি বাংলাদেশের আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এদিকে এই ঘটনায় মুষড়ে পড়েছেন ফাইয়াজের পরিবারের সদস্যরা। ফাইয়াজের মামা হাসনাইন আহমেদ বলেন, আমার ভাগিনা খুবই মেধাবী একজন ছাত্র। ঢাকা বোর্ডে এবার এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন একাডেমিক কোর্সেও ফাইয়াজকে ভর্তি করা হয়েছে, যেন তার এইচএসসির প্রস্তুতি একটু এগিয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমরা থানায় যোগাযোগ করলে তারা জানায়, থানায় নেই। এর পর গত তিন দিন বিভিন্ন থানা ও ডিবি অফিসে আমরা তাকে খুঁজতে থাকি। কিন্তু কোথাও তার খোঁজ পাচ্ছিলাম না। গত তিনদিন আদালতে ও বিভিন্ন থানার দ্বারে দ্বারে তাকে আমরা খুঁজতে থাকি। অবশেষে চার দিন নিখোঁজ থাকার পর আজ তাকে আদালতে তোলা হলো।
হাসনাইন আরও বলেন, ফাইয়াজ কখনও কোন আন্দোলনের সাথে জড়িত না। তার বয়স মাত্র ১৭ বছর, কিন্তু তাকে পুলিশ হত্যা মামলার আসামি করেছে। গারদ থেকে আদালতে নেওয়ার এক ফাঁকে তার সাথে কথা বললাম। সে জানিয়েছে, এই কয়েকদিন তার ওপর অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।