বিচার বিভাগকে পৃথক করতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে: প্রধান বিচারপতি

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:১৭

বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের লক্ষ্যে শীঘ্রই সুপ্রিম কোর্ট হতে আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব প্রেরণ করার কথা জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেছেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর দেশের সকল বিচারকদের উদ্দেশ্যে আমার প্রদত্ত অভিভাষণে বলেছিলাম বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ করা হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা খুব শীঘ্রই সুপ্রিম কোর্ট হতে আইন শন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করব।
আজ সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এ কথা জানান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিচার বিভাগের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। যে স্বপ্ন নিয়ে জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, আইন পেশা পরিচালনার ক্ষেত্রে আপনারা পেশাগত নৈতিক মানদণ্ড রাক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব প্রদান না করলে সেই স্বপ্ন ব্যর্থ হবে। সমাজের অসহায় মানুষকে আইনী সেবা প্রদানের যে নৈতিক দায়িত্ব আপনাদের রয়েছে সেই দায়িত্ব পালনের আপনাদের মানবিক হতে হবে। আইন পেশাকে একটি নিছক জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা না করে অধিকার-বঞ্চিত মানুষের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করণের একটি উপায় হিসেবে বিবেচনা করলে এ পেশার গুরুত্ব ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগকে আমাদের এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যেন বিচার প্রাপ্তির সময় ও খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে এবং আদালত প্রাঙ্গণে তাদের বার বার আসতে না হয়। তবে এ বিষয়টি বিচারকদের একার ওপর নির্ভর করে না। এজন্য বিজ্ঞ আইনজীবীদের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কোর্ট অফিসার হিসেবে আইনজীবীদের প্রথম কর্তব্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কোন কর্মকাণ্ডে আমরা যেন জড়িয়ে না যাই সেদিকে সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে। আমার প্রত্যাশা থাকবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আদালতের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনা। যা আমি বরিশাল আদালতে পরিদর্শনে এসে দেখিছি।‘
তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘আইন পেশায় সাফল্যের শিখরে পৌছাতে প্রয়োজন নিষ্টা, সততা, ধৈর্য্য এবং পরিশ্রম। একজন আইনজীবীর পড়ালেখার কোন শেষ নেই। আইনের সর্বশেষ সংশোধন সম্পর্কে আপনারা নিজেদের আপডেটে রাখবেন। নিয়মিত ‘ল’ জার্নাল পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার জ্ঞান ও কর্মের দ্বারা যদি নিজস্ব একটি অবস্থান তৈরি করতে পারেন, তবেই সফলতা আপনাকে খুঁজে নেবে।’
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই জুলাই অভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী শহীদদের স্মরণ এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এর আগে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানান আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ। এসময় বরিশাল জেলা ও দায়রা জজসহ অন্যান্য আদালতের বিচারকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ অন্যান্য আদালত পরিদর্শন করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান বরিশাল জেলা ও দায়রা জজসহ অন্য বিচারকরা। পরে তিনি বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ, বরিশাল মেট্রোপলিটন আদালতসহ বিভিন্ন আদালতের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
এসময় আদালত চত্বরে বিচারকদের সঙ্গে নিয়ে কাঠ গোলাপ গাছের একটি চারা রোপণ করেন প্রধান বিচারপতি। এছাড়াও স্মৃতিময় বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।