আইন ও ইসলামের চোখে অনুমতি ছাড়া বাসায় ঢুকলে শাস্তি

লোকমান হাওলাদার
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১৬:১৫

প্রতীকী ছবি
চাইলেই ইচ্ছামতো কারো বাড়িতে ঢুকে পড়া যাবে না। কারো অনুমতি ছাড়া অন্যের বাসায় প্রবেশ করা যেমন অসৌজন্যমূলক কাজ, তেমনি আইনের দৃষ্টিতে দণ্ডনীয় অপরাধ। সমাজে অনেক সময় দেখা যায়, কিছু মানুষ বিনা অনুমতিতে অন্যের বাড়িতে ঢুকে পড়ে, আবার কেউ কেউ বাড়ির আশপাশে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করে। অথচ তারা হয়তো জানে না, এ ধরনের আচরণ অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় এবং এর জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে।
আইনের দৃষ্টিতে অনধিকার প্রবেশ অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যদি কেউ সন্তোষজনক কারণ ছাড়া অন্যের বাসা বা তার লাগোয়া জমি বা মাঠে অনধিকার প্রবেশ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই অপরাধের জন্য ১০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। তবে শুধু মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশেই নয়, বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ সালে এ ধরনের অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৪৪৭ ধারায় বলা হয়েছে, বেআইনিভাবে অন্যের জমি, বাড়ি বা কোনো স্থানে প্রবেশ করলে অথবা বৈধভাবে প্রবেশের পর বেআইনি উদ্দেশ্যে সেখানে অবস্থান করলে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে। এতে বোঝা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যক্তি সম্পত্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনুমতি ছাড়া প্রবেশ ও ভয়ভীতি দেখানোর ক্ষেত্রে বাড়তি শাস্তির বিধান রয়েছে। কেউ যদি জোরপূর্বক প্রবেশের পর বাসার সদস্যদের হুমকি দেন বা ভয়ভীতি দেখান, তাহলে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারা অনুযায়ী মামলা হতে পারে। এই ধারায় বলা আছে, কাউকে প্রাণনাশ বা গুরুতর ক্ষতির ভয় দেখালে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ড দেওয়া হতে পারে। যদি হুমকির ধরন গুরুতর হয়, যেমন অপহরণ বা হত্যা ইত্যাদির ভয় দেখানো হয়, তাহলে সেই অপরাধের সাজা বেড়ে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে।
এ ছাড়া ভূমি দখলের চেষ্টা করা হলে সেটা আরো গুরুতর অপরাধ বলে গণ্য হবে। অনেকে মনে করেন, জমি বা বাড়ি জোরপূর্বক দখল করাও ‘ক্ষমতার’ বিষয়। কিন্তু এ কাজ সম্পূর্ণ বেআইনি। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ অনুযায়ী, কেউ যদি আইনানুগ মালিক না হয়েও কোনো জমি বা সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে রাখেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে অনধিক দুই বছর পর্যন্ত কারাদ- ও অর্থদ- দেওয়া হতে পারে। এই আইনে ভুক্তভোগীরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারেন এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিতের ব্যবস্থাও রয়েছে। শুধু আইনের দৃষ্টিতেই নয়, ইসলামের দৃষ্টিতেও অনুমতি ছাড়া অন্যের বাড়িতে প্রবেশ করা অনুচিত এবং গর্হিত কাজ। ইসলামে ব্যক্তির গোপনীয়তা ও সম্মান রক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অন্যের ঘরে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না অনুমতি চাও এবং সালাম করো।’ (সূরা : নূর, আয়াত-২৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি নিতে হবে যদি তা নিজের পরিবারের ঘর হয়। হাদিসে এসেছে, এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘আমি কি আমার মায়ের কাছে প্রবেশের জন্যও অনুমতি চাইব?’ উত্তরে মহানবী (সা.) বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই।’
আইন ও নীতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের উচিত অন্যের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান জানানো। অনুমতি ছাড়া অন্যের বাসায় প্রবেশ করা শুধু আইন ভঙ্গ নয়, নৈতিকতারও লঙ্ঘন। তাই সৌজন্য ও শালীনতার পরিচয় দিয়ে, প্রতিবেশী বা আত্মীয়স্বজনের বাসায় প্রবেশের আগে অবশ্যই অনুমতি নেওয়া আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। আমরা যদি দায়িত্বশীল হই তাহলে সমাজ ও ব্যক্তির উভয়ের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।