
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে পোশাকশ্রমিক মিনারুল ইসলামের নিহত হওয়ার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁকে হাজির করা হলে শুনানি শেষে এই নির্দেশ দেন বিচারক।
নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ কাইউম খান জানান, মিনারুল হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ ১২ নম্বর আসামি। এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ২৬ মে মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেলিনা হায়াৎকে গ্রেপ্তারের জন্য শহরের দেওভোগ এলাকায় তার নতুন বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আজ সকাল পৌনে ছয়টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে বহনকারী গাড়ির ওপর হামলা হয়। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিবি রোডের কালীর বাজার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় র্যাব ও পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে পুলিশের দুই সদস্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ কাইউম খান জানান, আইভীর বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরকসহ মোট পাঁচটি মামলা আছে। মিনারুল ইসলাম হত্যা মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান আছেন।
গত বছরের ২০ জুলাই সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আদমজী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন পোশাকশ্রমিক মিনারুল ইসলাম। শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরদিন গ্রামের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় ২৩ সেপ্টেম্বর নিহত মিনারুল ইসলামের ভাই নাজমুল হক বাদী হয়ে ১৩২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।
আইভীকে গ্রেপ্তার করতে রাত সাড়ে ১১টা থেকে তার বাড়ির সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। জানতে পেরে বাড়ির বাইরে অবস্থা নেয় এলাকাবাসীও। পরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর শুক্রবার ভোররাতে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গ্রেপ্তারের সময় সেলিনা হায়াৎ আইভী সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না দেখিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।”
নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র বলেন, “জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু; বলা যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমি অপরাধী। কিন্তু আমি নারায়ণগঞ্জে ২১ বছরের সেবায় কোনো দল কিংবা ব্যক্তিকে আঘাত করার মতো কিছু কখনো করিনি। যখনি নারায়ণগঞ্জে কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তখনি প্রতিবাদ করেছি।”
“নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। কোনো অপরাধ না করে অপরাধ হিসেবে আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো।”
এ সময় বিগত সময়ের মতো নারায়ণগঞ্জবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
২০০৩ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রথম নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এরপর ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) প্রথম নির্বাচনে শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে দেশের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।
২০১৬ ও ২০২২ সালে তিনি ফের নাসিক সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইভীকে সিটি করপোরেশনের পদ থেকে অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার।