মানিকগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের জামিনের বিরোধিতা করে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেছেন, মমতাজ পার্লামেন্টের মতো পবিত্র জায়গায় গানের জলসা বসাতো। বিরোধীদের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক বক্তব্য দিতো। তিনি সংসদকে কলুষিত-কলঙ্কিত করেছেন।

শনিবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে মিরপুরে মো. সাগর নামে এক হকার নিহতের মামলায় চারদিনের রিমান্ড শেষে মমতাজকে আদালতে হাজির করা হয়। আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার এসআই মনিরুল ইসলাম।

মমতাজের পক্ষে আইনজীবী মাসুদুর রহমান লিংকন জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে বলেন, “মামলার ঘটনার সঙ্গে তিনি (মমতাজ) কোনোভাবে জড়িত নন। তিনি এজাহারভুক্ত আসামি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। মমতাজ বেগম শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।”

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি শুনানিতে বলেন, “দেশের ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, এমপি, সাবেক মন্ত্রী, এমপি, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব, প্রধান বিচারপতি, ঢাকা মহানগর পিপি, বাকিগুলো আর নাই বললাম। সবাই একযোগে পালিয়ে যায়। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। মমতাজ বেগম গ্রেপ্তারের পর কিছু মানুষের চিত্র দেখেছি। এলাকায় তারা মিষ্টি বিতরণ করেছে। এতেই বোঝা যায় তার দ্বারা মানুষ কীভাবে নির্যাতিত হয়েছে।”

এই পিপি আরও বলেন, “মমতাজ বেগম সংসদে মানুষের চরিত্রহনন, বিরোধীদের হেয় করেছেন। কীভাবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিন চান বুঝি না। আইন সেফ করলেও জনগণ করছে না। তারা বাইরে বের হতে পারেন না। পুলিশ ধরার আগে মানুষ ধরে তাদের পুলিশে দিচ্ছে। তারা এত জনবিরোধী কাজ করেছে। এখন জামিন পেলে দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। মামলার তদন্তে ব্যাঘাত ঘটছে। তাই আমি জামিন নামঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।”

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত ১২ মে রাত পৌনে ১২ টায় ধানমন্ডির স্টার কাবাবের পেছনের একটি বাসা থেকে মমতাজকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরদিন তাকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর থানাধীন ১০ নং গোলচত্বর এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় ঘটনাস্থলে মারা যান মো. সাগর। এ ঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর নিহতের মা বিউটি আক্তার মিরপুর থানায় শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করে ২৪২ জনের নামে হত্যা মামলা করেন। মমতাজ বেগম এই মামলার ৪৯ নম্বর আসামি।

লোকসংগীতের জনপ্রিয় শিল্পী মমতাজ নবম সংসদ নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন। পরে ২০১৪ সালে তাকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয়।

২০১৮ সালেও নৌকা নিয়ে জয় পাওয়া মমতাজ ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে দলের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যান।