
আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। ফাইল ছবি
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির হাইকোর্টের জামিনের আদেশের স্বাক্ষরিত কপি বরগুনার আদালতে এসে পৌঁছেছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে জামিনের আদেশের কপি বরগুনার আদালতে পৌঁছায়।
মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মিন্নির হাইকোর্টের জামিনের আদেশের স্বাক্ষরিত কপি আজ বেলা ১২টার দিকে বরগুনার আদালতে এসে পৌঁছেছে। এখন আমরা মিন্নির পক্ষে বেলবন্ড (জামিননামা) দাখিলের অনুরোধ করবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আদালতের বিচারক বেলবন্ড গ্রহণ করে কারা কর্তৃপক্ষকে রিলিজ অর্ডার পাঠাবেন। আমরা আশা করছি, সকল দাফতরিক কাজ শেষ করে আজকের মধ্যেই মিন্নিকে মুক্ত করা সম্ভব হবে।’
এর আগে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী মিন্নিকে সোমবার হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে করা রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদনের ওপর নো-অর্ডার (কোনও আদেশ নয়) দেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। এর ফলে মিন্নির জামিনের মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানান আইনজীবীরা। চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত এ আদেশ দেন।
গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তাঁর স্ত্রী মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় মিন্নি ছিলেন প্রধান সাক্ষী।
কিন্তু মিন্নির শ্বশুরই পরে হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পর মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রিফাত হত্যা পরিকল্পনায় তার স্ত্রীও জড়িত ছিলেন।
এই মামলায় দুই ধাপে বরগুনার আদালতে জামিন চেয়ে বিফল হন মিন্নি। পরে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তিনি। গত ৮ আগস্ট হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ জামিন প্রশ্নে রুল দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে মিন্নির আইনজীবীরা আবেদনটি ফেরত নেন।
এরপর ১৮ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে মিন্নির জামিন আবেদনটি দাখিল করেন তাঁর আইনজীবীরা। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২০ আগস্ট হাইকোর্টের এই বেঞ্চ মিন্নির জামিন প্রশ্নে রুল দেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ২৯ আগস্ট মিন্নির জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, মিন্নি তাঁর বাবার জিম্মায় থাকবেন। গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না।
হাইকোর্টের এই রায় ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে, হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা আজ চেম্বার বিচারপতির আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির গতকাল রবিবার বরগুনা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ২৪ জনকে আসামি করে যে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন, সেখানে মিন্নির নাম রাখা হয়েছে আসামির তালিকার ৭ নম্বরে।