এহসানুল হক পাত্রী খোঁজ করে আসছিলেন অনেক দিন হয়। এর মধ্যে এক সুন্দরী পাত্রীকে তার পছন্দ হয়ে যায়। তবে মেয়ের বাবা অর্থলোভী। মেয়েকে এহসানুল হকের সঙ্গে বিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহর, বাড়ি খরচ বাবদ তিন লাখ টাকা ও বারো কাঠা জমি দাবি করেন। তার অনুরোধে তার বাবা রাজি হয়ে যান। কথা ছিল বিয়ের পর বারো কাঠা জমি মেয়ের নামে লিখে দেবে। তবে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর জমি লিখে না দেওয়ায় এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় সময় দ্বন্দ্ব হয়ে আসছে এহসানুল হকের। তার বাবাও পুত্রবধূকে এখন জমি লিখে দিতে চাচ্ছেন না।
পারিবারিক বিষয় নিয়ে তার এক আইনজীবী বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সময় জানতে পারেন ‘যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮’ সম্পর্কে। সেখানে যৌতুকের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যৌতুক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বশর্ত হিসেবে এক পক্ষ কর্তৃক অন্য পক্ষের কাছে দাবি করা অর্থসামগ্রী বা অন্য কোনো সম্পদ। এ দাবি বিয়ের আগে, পরে বা বিয়ের সময়-যখনই হোক না কেন, তা যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে। তবে মুসলমানদের ক্ষেত্রে দেনমোহর যৌতুক বলে গণ্য হবে না। আবার বিয়ের আসরে অতিথিরা নিজের ইচ্ছায় উপহার প্রদান করলেও তা যৌতুক নয়।
যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮-এর ২(খ) ধারায় যৌতুকের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান হয়, যৌতুক যে সর্বদা বরপক্ষ দাবি করবে, তা নয়। কনেপক্ষ বিয়ের শর্ত হিসেবে দেনমোহর ব্যতীত অন্যান্য অর্থসম্পদ দাবি করলেও তা যৌতুক এবং এর জন্য প্রচলিত আইনের অধীনে আদালতে মামলা করা যায়। আইনের এ ধারার ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু মামলা দেখা গেছে, যেখানে স্বামী তার স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেছেন। মামলার ফলে স্ত্রী ও তার আত্মীয়স্বজন আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্তও হয়েছেন। সুতরাং যে কোনো পক্ষই বিয়ের শর্ত হিসেবে অতিরিক্ত ধনসম্পদ দাবি করলে তা যৌতুক হবে এবং যৌতুক দাবি করায় অপরাধী বলে গণ্য হবেন।
যেহেতু যৌতুক দেওয়া-নেওয়া ও দাবি করা গুরুতর অপরাধ, সেহেতু আইনে এ অপরাধের জন্য সাজা বা দণ্ডের উল্লেখ আছে। ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ও ৪ ধারা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে যৌতুক দাবি, প্রদান ও গ্রহণ করার দণ্ড হচ্ছে অনধিক পাঁচ (৫) বছর; কিন্তু অন্যূন এক (১) বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। যে ব্যক্তি যৌতুক দেওয়া বা গ্রহণ করার ব্যাপারে সহায়তা করবেন, তিনিও একই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আইন সম্পর্কে অবগত হয়ে এহসানুল হক আইনজীবীর পরামর্শে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন। তবে এহসানুল হকের একটি ভয় রয়েছে, কারণ ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী, কোনো আইনানুগ কারণ নেই জেনেও যদি কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে সেই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আবার ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির অধীনেও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী, মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে এ ধরনের মামলা করলে তার জন্য শাস্তি হবে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। এহসানুল হক তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে যে যৌতুকের অভিযোগ এনেছেন এতে যদি তিনি নির্দোষ প্রমাণ হন তাহলে স্ত্রী তার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করতে পারবেন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : মামলা যৌতুক আইন যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh