গ্রেপ্তার হলে করণীয়

বাংলাদেশে এখন আইন-শৃঙ্খলায় ক্রান্তিকাল চলছে। বাড়তি নিরাপত্তার জন্য সারাদেশে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সন্দেহভাজন মনে হলে যে কোনো মুহূর্তেই তারা আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারে। গ্রেপ্তার ও আটক অবস্থায় এ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী নাগরিক অধিকার ও পুলিশের কর্তব্য নির্ধারিত হয়।

কোনো ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলে তার কিছু আইনগত অধিকারের নিশ্চয়তা সংবিধান ও বিদ্যমান বিভিন্ন আইনে বলা আছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অহেতুক পুলিশি হয়রানি থেকে মুক্ত থাকার জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নিজের পেশাগত পরিচয়পত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। পুলিশের কাছে সঠিক নাম, ঠিকানা ও পেশাসহ পরিচয় তুলে ধরতে হবে। নিজের সঠিক নাম-ঠিকানা ছাড়া পুলিশের কাছে অন্য কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে একজন গ্রেপ্তার ব্যক্তি আইনত বাধ্য নয়। বাধ্য না থাকার এ অধিকার একজন গ্রেপ্তার ব্যক্তির মৌলিক অধিকার হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত।

যদি গ্রেপ্তার বা আটক করে তাহলে একজন নাগরিক হিসেবে প্রথমেই জানার অধিকার রয়েছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কী? আর তাদের কাছে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত কোনো পরোয়ানা আছে কি না? গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে এবং প্রয়োজনে ওয়ারেন্ট (যদি থাকে) দেখাতে পুলিশ বাধ্য। যদি তারা নাগরিককে পরোয়ানা দেখাতে সক্ষম না হন, তাহলে বুঝতে হবে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় আটক করতে পারে (ধারা ৫৪)। সেই সঙ্গে যে পুলিশ কর্মকর্তা প্রশ্ন করেন, তার পরিচয় জানার অধিকার গ্রেপ্তার ব্যক্তির থাকবে। তাই গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তাদের পরিচয় জানতে এবং তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইতে পারেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির চেনাজানা কারও নাম, ফোন নম্বর ও ঠিকানা সঙ্গে রাখলে অন্তত আত্মীয়কে গ্রেপ্তারের বিষয়টি দ্রুত জানান। পরিচিত আইনজীবীর ফোন নম্বর সঙ্গে রাখতে পারেন। গ্রেপ্তারের পর দ্রুত তাকে বিষয়টি জানাবার চেষ্টা করুন। পুলিশ যদি আপনাকে ধরে নিয়ে যায় সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলুন। সেখানেও যদি সহযোগিতা না পান তাহলে আদালতে হাজির করার পর বিচারকের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করতে পারেন।

গ্রেপ্তারের পর কাউকে লকআপে রাখার আগে তার বিভিন্ন জিনিসপত্র থাকলে তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে আটককৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর নেন। এই স্বাক্ষর দেওয়ার সময় তালিকাটি অবশ্যই পড়ে নেওয়া উচিত। 

গ্রেপ্তারের পর আইনজীবী বা পরিবারের কাউকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানাতে না পারলে আদালতে হাজির করার পর ম্যাজিস্ট্রেটকে সরাসরি বিষয়টি জানানো উচিত। এতে আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আটক হওয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তার কাছে দেওয়া বিবৃতি বা স্বীকারোক্তি সাধারণত সাক্ষ্য আইন অনুসারে আদালতে প্রমাণ করা যায় না। তবে পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তির পর তার ওপর ভিত্তি করে কোনো আলামত উদ্ধার করা হলে তা আদালতে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। গ্রেপ্তারের পর কোনো পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার বা অসুস্থ হলে আদালতের মাধ্যমে বা নিজ উদ্যোগে মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারবেন। পরীক্ষা করালে এই প্রতিবেদনটি সংগ্রহে রাখবেন। পরীক্ষক চিকিৎসকের পরিচয় জেনে রাখা উচিত কারণ তা পরে প্রয়োজন হতে পারে।

পুরনো কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হলে দ্রুত ওই মামলার নম্বরসহ কাগজপত্র নিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে গিয়ে জামিন শুনানির চেষ্টা করা যেতে পারে। নতুন কোনো মামলায় বা কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হলে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে জামিন শুনানির চেষ্টা করতে পারেন। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির ইচ্ছানুযায়ী পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতকে তার পছন্দমতো আইনজীবী বা নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ ও দেখা করতে দেবেন।

জেনে রাখা ভালো পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার বা আটক করতে এলে এবং পুলিশের পরিচয় নিয়ে কোনো সন্দেহের উদ্রেক হলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে নিশ্চিত হওয়া। পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি সন্দেহ দূর করার জন্য গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তা যদি নির্দিষ্ট করে কোনো থানা বা জোনের নাম উল্লেখ করেন, তাহলে সেখানেও ফোন করে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //