দাদার আগে বাবার মৃত্যুতে নাতি-নাতনিরা সম্পত্তি পাবে

কামাল সাহেবের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলের নাম আমিন আহমেদ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমিন তার একমাত্র কন্যাসন্তান বৃষ্টি আহমেদকে রেখে মারা যান। তার কয়েক বছর পর মারা যান কামাল সাহেব। 

অর্থাৎ আমিন মারা যান ২০২০ সালের ৭ জুন এবং তার বাবা কামাল সাহেব মারা যান ২০২৩ সালে। কামাল সাহেব মৃত্যুর সময় তিন মেয়ে ও স্ত্রী রেখে মারা যান। তবে তার মৃত্যুর সময় নাতনি বৃষ্টিও জীবিত ছিলেন। এখন কামাল সাহেবের সম্পত্তি ভাগের সময় বৃষ্টি (নাতনি) সম্পত্তির অংশ দাবি করলে তার তিন মেয়ে ও স্ত্রী ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলেন, বৃষ্টির বাবা আমিন যেহেতু কামাল সাহেবের আগে মারা গেছেন তাই সে সম্পত্তি পাবেন না। পরে সম্পত্তি ভাগের বিষয়টি আদালতে গড়ায়।

দাদার আগে বাবার মৃত্যু হলে দাদার সম্পত্তিতে নাতি-নাতনিদের অংশ প্রাপ্তি বিষয়ে আমাদের প্রচলিত আইন নিয়ে বেশ কিছু মতভেদ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ওয়ারিশদের প্রত্যেকের অংশ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, অতঃপর সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এই বণ্টন অনুসরণ না করলে আল্লাহর দেওয়া সীমা লঙ্ঘনের ফলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ তোমাদের অংশ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করলেন, যেন তোমরা এ ব্যাপারে ভ্রষ্টতার শিকার না হও। আল্লাহ সব বিষয়ে অবগত।’ 

(সুরা : নিসা, আয়াত : ১৭৬)। নবী হজরত মোহাম্মদ (স.) বলেছেন-‘সমস্ত দরকারি জ্ঞানের অর্ধেকই হচ্ছে উত্তরাধিকার-সংক্রান্ত জ্ঞান।’

যদিও মুসলিম শরিয়াহ আইন অনুযায়ী দাদার আগে বাবা মারা গেলে সন্তানরা কোনো অংশ পাওয়ার অধিকারী হন না। তবে দাদা চাইলে নাতিদের জন্য সম্পত্তি ওসিয়ত বা দান করে যেতে পারেন। এদিকে ‘মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১ সালের ৪ ধারা’ অনুসারে দাদা জীবিত থাকাবস্থায় বাবা মারা গেলেও মৃত ব্যক্তির সন্তানরা দাদার মৃত্যুর পর দাদার সম্পত্তিতে অংশীদার হবেন। সন্তানদের বাবা জীবিত থাকাবস্থায় যেটুকু সম্পত্তি পেতেন, সমপরিমাণ সম্পত্তি সন্তানরা পাবেন। এ ক্ষেত্রে ছেলে বা কন্যাসন্তানের বিষয়ে কোনো ধরনের বৈষম্য হবে না।

যেহেতু বাংলাদেশে বর্তমানে মুসলিম পারিবারিক আইন-১৯৬১ চালু রয়েছে। এ আইনটির ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যার সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে বণ্টন করা হবে, তার আগে তার কোনো ছেলে বা মেয়ে মারা গেলে এবং ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি বণ্টনের সময় ওই ছেলে বা মেয়ের কোনো সন্তানাদি থাকলে, তারা প্রতিনিধিত্বের হারে সম্পত্তির ওই অংশ পাবে- যা তাদের বাবা অথবা মা জীবিত থাকলে পেতেন। অর্থাৎ দাদার সম্পত্তিতে নাতি-নাতনি সরাসরি উত্তরাধিকারী না হলেও মৃত বাবা ও মায়ের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাই ‘মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১ সালের ৪ ধারা’ অনুসারে আমিন আহমেদ জীবিত থাকলে যে অংশ পেতেন সেই অংশ তার মেয়ে বৃষ্টি পাবেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh