জমি অন্যের দখলে থাকলে আইনি প্রতিকার

করিম সাহেব ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার অনেক দিনের ইচ্ছা গ্রামে একটি বাড়ি করবেন। সেই ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে বেতনের একটি অংশ সঞ্চয় করছেন। এর মধ্যে গ্রামে একটি ভালো জমির সন্ধান পান। জমিটিতে এখন ধান চাষ করা হলেও রাস্তার পাশে হওয়ায় চাইলেই যেকোনো সময় বাড়ি করতে পারেন। তবে তার যে টাকা সঞ্চয় হয়েছে সেই টাকা দিয়ে জমিটি ক্রয় করা সম্ভব হবে না। তবুও হাল ছাড়ার পাত্র তিনি নন। তাই সঞ্চয়ের টাকা ও ধারদেনা করে অনেক কষ্টে জমিটি ক্রয় করেন। নামজারি বা মিউটেশনও করেছেন। খাজনা পরিশোধ করেছেন। মালিকানাসংক্রান্ত সব দলিল ও কাগজপত্র ঠিকঠাক রয়েছে। কিন্তু হাতে যেহেতু এখন আর বাড়ি তৈরি করার টাকা নেই, তাই জমিটি নুরুল সাহেবকে দেখেশুনে চাষাবাদ করে খেতে দিয়েছেন। 

প্রথম দুই বছর চাষাবাদে লাভের একটা অংশও তিনি করিম সাহেবকে দিয়েছিলেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর হয় নুরুল সাহেব সেই জমিতে চাষ করে খাচ্ছেন। এর মধ্যে জমিটির প্রতি তার খারাপ দৃষ্টি পড়ে। একসময় জাল দলিল করে স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে নামজারি করে নেন। ছয় বছর পর করিম সাহেব গ্রামে গিয়ে জমি দখলে নিতে চান। ইচ্ছা বাড়ি তৈরি করা। কিন্তু এত সাধের জমিটির দখল নিতে পারছেন না। নুরুল সাহেব জমিটিকে নিজের বলে দাবি করছেন। এ নিয়ে গ্রামে বিচারও বসেছে। সেখানে দুই পক্ষ জমির দলিলপত্র উপস্থাপন করেন। এতে গ্রামের বিচারক বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেননি। তাই করিম সাহেব তার জমির অধিকার ফিরে পেতে আইনের আশ্রয় নেন। 

জায়গাজমি বেদখল ঠেকাতে এবং জমি ফিরে পেতে তৈরি হয়েছে ভূমি অপরাধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩। ভূমি প্রতারণা, জালিয়াতি, অবৈধ দখলের মতো ১২টি অপরাধ চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনের ৪(১) (ক থেকে ছ) ধারায় বলা আছে, অন্যের মালিকানাধীন জমি নিজের বলে দাবি বা প্রচার করলে, তথ্য গোপন করে জমি অন্যের কাছে বিক্রয় করলে, নিজের মালিকানার চেয়ে অতিরিক্ত জমি কারো কাছে সমর্পণ করলে, মিথ্যা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তির স্থলে অন্য ব্যক্তি সাজিয়ে জমি হস্তান্তর করলে, মিথ্যা বিবরণসংবলিত কোনো দলিল স্বাক্ষর বা সম্পাদন করলে, কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো মিথ্যা বা অসত্য তথ্য প্রদান করলে, সে ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা অনধিক সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

এ ছাড়া ৫(১) (ক থেকে ঙ) ধারা পর্যন্ত বলা আছে যে কোনো ব্যক্তির ক্ষতি বা অনিষ্ট সাধন করা বা কোনো দাবি বা অধিকার সমর্থন করা অথবা কোনো ব্যক্তিকে কোনো সম্পত্তি পরিত্যাগ বা চুক্তি সম্পাদন করতে বাধ্য করা অথবা প্রতারণা করা যেতে পারে- এরূপ অভিপ্রায়ে কোনো মিথ্যা দলিল বা কোনো মিথ্যা দলিলের অংশবিশেষ প্রস্তুত করলে, মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করলে, অসাধু বা প্রতারণামূলকভাবে কোনো ব্যক্তিকে কোনো দলিল স্বাক্ষর, সিলমোহর, সম্পাদনা বা পরিবর্তন করিতে বাধ্য করলে অনধিক সাত বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দ-নীয় হবেন।

এই মামলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে দাখিল করলে আদালত ১ নম্বর আসামির বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করতে পারেন কিংবা তদন্ত দিতে পারেন কিংবা আদালতের কাছে প্রাথমিকভাবে সত্যতা প্রমাণিত না হলে আদালত মামলাটি খারিজ করে দিতে পারেন। মামলার অন্যান্য কার্যক্রম ফৌজদারি কার্যবিধির পদ্ধতি অনুযায়ী পরিচালিত হয়। যেহেতু করিম সাহেব জমিটি ক্রয়সূত্রে মালিক হয়েছেন এবং জমির দলিল ও নামজারি তার নামে রয়েছে। খাজনাপত্র সঠিকভাবে পরিষদ করেছেন। তাই তিনি আদালতে ন্যায়বিচার পাবেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh