মিথ্যা মামলা হলে করণীয়

করিম সাহেব (ছদ্মনাম) তিন দিনের জন্য গিয়েছিলেন গ্রামে। ঢাকায় এসেই জানতে পারেন তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে। মামলার কথা শুনে তিনি ভীত হয়ে পড়েন। আমাদের দেশে হরহামেশাই এমন গায়েবি মামলা হয়ে থাকে। বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে বেশি গায়েবি মামলা হওয়ার কারণ রয়েছে। ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক আইনের ৪ ও ৫ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ২০ বছরের কারাদণ্ড। সেই সঙ্গে তা জামিন অযোগ্য অপরাধ। বিস্ফোরক এই আইনে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করা সম্ভব। এ কারণে কাউকে এ আইনের মামলায় আসামি করা হলে তিনি প্রচণ্ড ভীত থাকেন। দেশে অনেক অভিযোগকারীই রয়েছেন, যারা হয়রানির উদ্দেশ্যেই মিথ্যা মামলা করে থাকেন। অভিযোগ মিথ্যাই হোক আর সত্যই হোক, মামলার ধারা কঠিন হলে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন পাওয়া বেশ মুশকিল। 

আপনার বিরুদ্ধে যদি থানায় মামলা হয় তাহলে এজাহারের কপিটি সংগ্রহ করে আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। দেখতে হবে, অভিযোগগুলো জামিনযোগ্য বা জামিন অযোগ্য কি না। জামিনযোগ্য হলে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারেন। গ্রেপ্তার করা হলে আপনাকে আদালতে পাঠানো হবে। তখন আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন আবেদন করতে হবে। পুলিশ যদি রিমান্ড চায় তাহলে আপনার আইনজীবীর উচিত হবে রিমান্ড বাতিলের জন্য আবেদন করা। আদালত যদি জামিন দেন তাহলে একজন পরিচিত জামিনদারের জিম্মায় জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। জামিন না হলে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ জামিন অযোগ্য হলে অনেককে হাইকোর্ট বিভাগে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে আগাম জামিন চাইতে দেখা যায়। হাইকোর্ট বিভাগ আগাম জামিন সাধারণত নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। এই মেয়াদের মধ্যেই অধস্তন আদালতে গিয়ে জামিননামা সম্পাদনের জন্য আবেদন করতে হবে। 

আদালতে প্রতি তারিখে হাজিরা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে আপনার জামিন বাতিল করে দিতে পারেন আদালত। জামিন পুলিশ প্রতিবেদন হওয়ার আগেই চাইতে হয়। পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করার আগে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ দিয়ে মিথ্যা অভিযোগটি করা হয়েছে, তা প্রমাণের চেষ্টা করুন। তদন্তকারী কর্মকর্তা সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবেন। আর অভিযোগপত্র হয়ে গেলে মামলাটি বিচারিক আদালতে বদলি হবে। অভিযোগ গঠনের দিন হাজির হয়ে নতুন করে পূর্বশর্তে জামিন চাইতে হবে এবং জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। তখন আপনি মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করতে পারেন। যদি আদালতে মামলা (সিআর মামলা) হয় তাহলে আদালত সমন দিতে পারেন কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। 

যদিও মামলার অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ যিনি মামলা করেন তার ওপর বর্তায়। অনেক সময় মিথ্যা মামলা হলে মামলাকারী পরে আর হাজির হন না। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি তারিখ যাওয়ার পর মামলা থেকে খালাস পাওয়ার আবেদন করার সুযোগ আইনে রয়েছে। সিআর মামলায় অভিযুক্ত সব আসামি হাজির হলেই বিচারের জন্য মামলাটি বদলি করা হয়। আপনি কোনো কারণে হাজির না হলে আপনার জামিন বাতিল হতে পারে। পর্যায়ক্রমে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি হতে পারে। এতে হাজির না হলে আপনার মালামাল ক্রোকের আদেশ হতে পারে এবং আপনার অনুপস্থিতিতেই বিচার হতে পারে। তাই মিথ্যা মামলার শিকার হলেও আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মামলাটি লড়ে যেতে হবে। যদি দলিলপত্র ও সাক্ষ্য-প্রমাণ ঠিক থাকে, তাহলে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই মিলবে। মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ধারা ২১১, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ধারা ২৫০, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ১৭ ধারাসহ বিভিন্ন আইনে মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তির বিধান রয়েছে। তাই মামলা হলে পালিয়ে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh