মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ধূমপান করার পর নেশায় জড়িয়ে পড়ে। একজন ধূমপায়ীর সাধারণত একাধিক ধূমপায়ী বন্ধু থাকে। এভাবেই একজনের প্রভাবে অন্য বন্ধুরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। শহর, বাজার, স্কুল-কলেজের আশপাশের মতো ব্যস্ত এলাকায় বা জনসমক্ষে এখন বেপরোয়া ধূমপায়ীরা। প্রকাশ্যে ধূমপানের এই ভয়াবহ প্রভাব যে শুধু ধূমপায়ীর ক্ষতি করে তা নয়। পরোক্ষভাবে তা পাশের জনেরও ক্ষতি করে। পরোক্ষ ধূমপানে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীরা। গণপরিবহন, পার্ক, সরকারি-বেসরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, রেস্তোরাঁ, শপিং মল, পাবলিক টয়লেটসহ বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে হরহামেশায় ধূমপান করতে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সীদের।
অথচ জনসমাগমস্থলে ধূমপান বন্ধে ২০০৫ সালে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু সে আইন মানা হচ্ছে না। ধূমপান বন্ধে ২০০৫ সালে প্রণীত আইন অনুযায়ী প্রকাশ্যে ধূমপানের জরিমানা ধরা হয়েছিল ৫০ টাকা। কিন্তু পরে ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের সংশোধনী এনে জনসমাগমস্থলে ধূমপানের শাস্তির অর্থ ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়। কিন্তু আইন না জানা ও ভাঙায় অভ্যস্ত লোকজনের অবস্থা তাতে বদলায়নি। প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে ২০০৫ সালের আইনের বিধান কার্যকর করার উদ্দেশ্যে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে কোনো পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে প্রবেশ করে পরিদর্শন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বা তার সমমানের বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো আইনের অধীন বা সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ক্ষমতাপ্রাপ্ত যেকোনো বা সব কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু তারা কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
প্রকাশ্যে ধূমপানের জন্য জরিমানার আইন থাকা সত্ত্বেও যত্রতত্র সিগারেটের সুখটান দিতে দেখা যায় অনেককে। পাবলিক প্লেসে ধূমপানের অপরাধ স্বীকারও করে অনেকে। তবে তারা অনেকেই বলে বসে, জরিমানা নেবে কে? পুলিশও তো পাবলিক প্লেসে হরদম সিগারেট ফুঁকছে। শুধু পুলিশ নয়, চিকিৎসকদেরও প্রকাশ্যে ধূমপান করতে দেখা যায়। প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে আইন প্রণয়ন করার পর শুরুর দিকে তা বাস্তবায়ন করতে পুলিশ কিছু অভিযানও পরিচালনা করে। কিন্তু কিছুদিন পর আইন অমান্য করে খোদ পুলিশের বহু সদস্যই প্রকাশ্যে ধূমপান করে চলেছেন। আর এর সুযোগ নেয় জনগণও। এভাবে পুলিশ-জনতার দায়িত্বহীনতায় কেতাবি বিষয়ে পরিণত হয় ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে ১২৫ কোটির বেশি মানুষ তামাক ব্যবহার করে এবং প্রতি বছর সারা বিশ্বে ৮০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায় তামাক ব্যবহার রোগের কারণে। যার মধ্যে ৭০ লাখ মৃত্যু সরাসরি তামাক ব্যবহারের কারণে এবং প্রায় ১৩ লাখ পরোক্ষ ধূমপানের কারণে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় বলা হয়, তামাকের কারণে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন লোক মারা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর বিশ্বে তামাকের কারণে এক কোটি লোক মারা যাবে, যার মধ্যে ৭০ লাখ বাংলাদেশির মতো তৃতীয় বিশ্বের মানুষ। বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায় তামাক ব্যবহারের কারণে। বর্তমানে দেশে ধূমপায়ীর মধ্যে ৬০.৬ শতাংশ পুরুষ এবং ১৭.৭ শতাংশ নারী।
দেশে যারা তামাক গ্রহণ করে না, তাদের মধ্যে তিন কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। যারা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার তাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি আরো বেশি। ধূমপানের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগের শিকার হয়। তাই তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার ও প্রকাশ্যে ধূমপান নিয়ন্ত্রণে আইন কার্যকর করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh