Logo
×

Follow Us

প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

এনবিআর থাকবে ‘আগের মতো’

Icon

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ২১:২৩

এনবিআর থাকবে ‘আগের মতো’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা বিভাগ করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটল সরকার। অধ্যাদেশটি সংশোধনের আশ্বাস দিয়ে জানানো হয়েছে, তার আগ পর্যন্ত আগের মতোই থাকবে সংস্থাটি।

বিলুপ্ত ঘোষিত সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।

এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে মধ্যরাতে যে অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল, সেটি সংশোধনের কথাও জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “অধ্যাদেশ সংশোধন করা যেহেতু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই এটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এনবিআর ও তার কর্মকর্তারা আগের মতোই পরিচালিত হবে।”

রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থবছরের শেষ সময়ে জাতীয় বাজেট কার্যক্রম এবং রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে অফিস সময়ে দপ্তরে উপস্থিত থেকে তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের অনুরোধও করা হয় এতে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চালু রেখে এবং সম্মানিত করদাতাগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান করার জন্য অনুরোধ করা হলো।”

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এনবিআরকে আলাদা করে যে দুটি বিভাগ করার কথা বলা হয়েছে, সেটিই বাস্তবায়ন হবে। এ বিষয়ে কাজ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সংস্থাটি আগের মতো থাকবে। কারণ, এসব কাজ করা সময়সাপেক্ষ।

এনবিআর বিলোপের পর অচলাবস্থা

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল-আইএমএফের ঋণের কিস্তির শর্ত পূরণে সরকার পরিচালনায় অর্থ যোগানদাতা সংস্থাটিকে বিলুপ্ত করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এই সিদ্ধান্তের পর থেকে সংস্থাটির কর্মীরা বাধা হয়ে দাঁড়ান।

প্রথমে কলম বিরতি, পরে অবস্থান কর্মসূচির পর আগামী ২৬ মে থেকে অসহযোগের ডাকও দেওয়া হয়েছিল।

এই কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত এনবিআরের আওতাধীন ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট দপ্তরগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা আসে কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে।

এনবিআরের আন্দোলনে বুধবার সমর্থন জানায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদও। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়।

সরকারি কোষাগারে অর্থের টানের মধ্যে অর্থবছরের শেষে কর্মকর্তাদের এই আন্দোলনের কারণে রাজস্ব আদায় নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত ১৩ মে থেকে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

এমনিতেই সরকার তার লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকার মতো। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাকি দুই মাসে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আদায়ের প্রায় অসম্ভব এক কাজ করতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে ব্যবসায়ীরাও।

তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সমিতি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ-বিসিআইয়ের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, রাজস্ব কর্মকর্তাদের এ আন্দোলনে ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছেন।

ব্যবসায়ীদের সব সময়ই এনবিআরের সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, কর্মকর্তারা কাজ না করলে রপ্তানি বাণিজ্য ঝুঁকিতে থাকবে।

এই আন্দোলনে বিদেশিদের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে বলেও আশঙ্কা করছেন বিজিএমইএ নেতা। বলেছেন, “এটিও দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।”

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কী বলছে

গত মঙ্গলবার এনবিআরের আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। সেই বৈঠকে দুই পক্ষই অনমনীয় মনোভাব দেখায়।

তবে দুদিনের মাথায় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে পৃথকীকরণের প্রশাসনিক কাঠামো কীভাবে প্রণীত হবে, তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও গুরুত্বপূর্ণ সকল অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।

“বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে”, বলা হয় এতে।

এনবিআর রাজস্ব আদায়ে এমনিতেই পিছিয়ে আছে। এই অবস্থায় কর্মকর্তাদের কর্মসূচিতে সরকার ছাড়াও ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ স্পষ্ট। কাস্টমস ও কর ক্যাডারের সদস্যদের পদ-পদবি কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলেও জানানো হয়েছে। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, বরং সংস্কার করা হলে তাদের পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সচিব পদে নিয়োগসহ পদোন্নতির সুযোগ আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।

এনবিআর ঐক্য পরিষদের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ভাষ্য

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে গত মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা এবং রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির ৫ জন সদস্যের সঙ্গে বৈঠকে কী নিয়ে কথা হয়, তাও তুলে ধরা হয়।

মন্ত্রণালয় বলছে, এই সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দুইজন প্রতিনিধি, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

উপদেষ্টারা সবার বক্তব্য ধৈর্য নিয়ে শুনে মতামত জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আলোচনায় উত্থাপিত সব বিষয় অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর সেটি অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা হবে।

সেই আলোচনাকে ‘ফলপ্রসূ’ দাবি করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচির ‘কোনো যৌক্তিক কারণ নেই’ বলেও দাবি করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অধ্যাদেশটি জারি করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কাজ আছে বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এতে লেখা হয়, “দুইটি বিভাগের নতুন করে সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন করত: পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, সচিব কমিটি কর্তৃক

চূড়ান্ত অনুমোদন ইত্যাদি সম্পাদন করতে হবে, যা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ বিষয়।

“তাছাড়া দুইটি নতুন বিভাগের জন্য ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এসব আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হবে। একাজগুলোও সময়সাপেক্ষ কাজ।”

এই কাজগুলো সম্পাদন না করে, কোনোভাবে অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনই বিলুপ্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।”

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫