Logo
×

Follow Us

প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

বিলীন হচ্ছে উপকূলের রক্ষাকবচ

Icon

তাহজীবুল আনাম

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১৩:৩৪

বিলীন হচ্ছে উপকূলের রক্ষাকবচ

ছবি : সংগৃহীত।

জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্রতীরের ঝাউগাছ। ভারি বৃষ্টি, লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ার অব্যাহত থাকায় সমুদ্রতীরে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত ঝাউগাছ।  সম্প্রতি লাবনী বিচ পয়েন্ট থেকে নাজিরারটেক সমুদ্রের মোহনা পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, সাগরের ঢেউ জিওব্যাগ ডিঙিয়ে সরাসরি সমুদ্রতীরের ঝাউগাছে আঘাত হানছে। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে সমুদ্রতীরের অসংখ্য স্থাপনা। 

স্থানীয়রা জানায়, কিছুদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত, পূর্ণিমার জোয়ার ও লঘুচাপের কারণে সমুদ্রে ঢেউয়ের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কূলে আঁচড়ে পড়া ঢেউ সজোরে আঘাত করছে জিও ব্যাগে। এসব জিওব্যাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সমুদ্রের পানি সরাসরি ঝাউগাছে গিয়ে পড়ছে। ফলে মাটি নরম হয়ে নুইয়ে পড়ে ভেঙে যাচ্ছে শত শত ঝাউগাছ। যে কারণে হুমকির মুখে পড়েছে সমুদ্রসৈকত লাগোয়া ছোট-বড় অসংখ্য স্থাপনা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই স্থানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না গেলে এলাকাটি ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। 

কক্সবাজার উপকূলবাসীর রক্ষাকবচ ও অন্যতম সৌন্দর্য বর্ধনকারী হলো এখানকার ঝাউবাগান। কিন্তু প্রতি বছর জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঝাউগাছগুলো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে ঝাউগাছের গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে উপড়ে যাচ্ছে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে গেছে অন্তত শতাধিক এবং উপড়ে গেছে প্রায় ৩০০টি ঝাউগাছ। কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে শীলখালী পর্যন্ত ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত ৪৮৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে ঝাউগাছের চারা রোপণ করা হয়। বর্তমানে সেখানে অর্ধেকের মতো ঝাউগাছ রয়েছে। ৪৮৫ হেক্টরের মধ্যে বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছ রয়েছে।

এ ছাড়া ইনানী, হোয়াক্যং, শীলখালী ও টেকনাফ রেঞ্জের অধীন ঝাউবাগান নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। সৈকত এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনকারী পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ সৈকতের হিমছড়ি থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে ঝাউগাছ। কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ১৯৬১-৬২ সালে ১২ হেক্টর জমিতে বালিয়াড়িতে প্রথমে সৃজন করা হয় ঝাউগাছ। ১৯৭৪ সালে ঝাউবাগানের প্রসার ঘটানো হয়। তখন থেকে ঝাউবাগান সমুদ্র পারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে আসছে।  পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করে আসছে। তবে ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে অর্ধেকের বেশি বাগান বিলীন হয়ে যায়। 

১৯৯১-৯২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার চারা গাছ রোপণ করা হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে ১১৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে রোপণ করা হয় তিন লক্ষাধিক ঝাউচারা। ১৯৯৭-৯৮ সালে ৪০ হেক্টর জমিতে লাগানো হয় লক্ষাধিক চারা, ১৯৯৮-৯৯ সালে ৫ হেক্টর জমিতে সাড়ে ১২ হাজার চারা, ২০০২-০৩ সালে ৮ হেক্টরে ২০ হাজার চারা, ২০০৩-০৪ সালে ৮৭ হেক্টরে দুই লাখ ১৭ হাজার চারা ও ২০১০-১১ সালে পাঁচ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা রোপণ করা হয়। প্রতি হেক্টরে আড়াই হাজার করে প্রায় ৩০০ হেক্টরে সাড়ে সাত লাখ ঝাউগাছ সৃজন করা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জোয়ারে ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙতে থাকে সৈকতের বালিয়াড়ি। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারে ঢেউয়ের তোড়ে গোড়া থেকে বালি সরে যায়। এতে  বিলীন হতে থাকে নয়নাভিরাম এসব ঝাউবাগান।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক বলেন, স্থায়ী বাঁধ না থাকলে আগামী দিনে ঝাউবাগান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। উপড়ে পড়া ঝাউগাছগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে সেখানে নতুন করে চারা গাছ রোপণ করা হবে বলে জানান তিনি। 

পরিবেশকর্মীরা জানিয়েছেন, ঝাউগাছ কখনো উপকূলের রক্ষাকবচ হতে পারে না। আর বালুর বাঁধ দিয়ে সাগর রক্ষার চেষ্টা আগেও সফল হয়নি। তাই পানির প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে এর সমাধান খোঁজা জরুরি। ভাঙনরোধ ও ঝাউগাছ রক্ষা করতে কেয়াগাছের পাশাপাশি বিভিন্ন সামুদ্রিক উদ্ভিদ সাগরের ঢেউয়ে প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তুলবে। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠবে বালুর স্তূপ। মূলত সাগরের স্রোতে বালু এসে উপকূলে জমা হয়ে সৈকত তৈরি হয়। এসব গাছ লাগানোর ফলে বালুর স্তূপ সমুদ্রপারে বেড়িবাঁধ তৈরি করবে। এতে সমুদ্রের আকার বড় হবে, ফিরে আসবে জীববৈচিত্র্য। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭২-৭৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৪৮৫ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছ লাগানো হয়েছে। যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূল রক্ষায় সাগর তীরে আধুনিক পদ্ধতিতে কোনো বাঁধ নির্মাণ করা যেত তাহলে উপকূলবাসী রক্ষার পাশাপাশি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনকারী ঝাউগাছ রক্ষা পেত।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫