আবু সাঈদ কী ছবি আর আনুষ্ঠানিকতায় আটকে থাকবে

আবিদ চৌধুরী
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৩:০৬

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বয়স এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে কিছুদিন পরই। গণ-অভ্যুত্থানের মতোই আবু সাঈদের বয়স এক বছর বেড়েছে। ২০২৪-এর ১৬ জুলাই আন্দোলনের ময়দানে সাঈদকে যদি মেরে ফেলা না হতো, তবে এ বছর তিনি ২৪-এ পদার্পণ করতেন। মৃত্যু আবু সাঈদকে থামিয়ে দিতে পারেনি। সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে আগুন তিনি জ্বালিয়েছিলেন, তাতে লাখো ছাত্র-জনতা পরিণত হয়েছিল এক-একটি জ্বলন্ত মশালে। সেই উত্তাল সময়ে মশালটির নাম যদি কেউ জানতে চাইতেনÑলাখো জনতার ভিড় থেকে নিশ্চয়ই সমস্বরে আওয়াজ উঠত ‘আবু সাঈদ’!
আবু সাইদের মৃত্যু কোটাবিরোধী আন্দোলনে যেভাবে প্রাণসঞ্চার করেছিল তার সঙ্গে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ‘নূর হোসেন’-এর বেশ মিল পাওয়া যায়। ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তিপাক’ স্লোগানে বুক ও পিঠ ঢাকা নূর হোসেনের বিখ্যাত সেই ছবিটি তার মৃত্যুর পর এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে আরো তীব্র করে তোলে। ছবিটি আজও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতীক হয়ে আছে। তেমনি কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের উদ্যত রাইফেলের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে আবু সাঈদ যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই ছবিটিও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতীকরূপে আবির্ভূত হয়েছে।
নূর হোসেন যে স্বপ্ন ধরতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন, তা কখনোই আলোর মুখ দেখেনি। তার লালিত স্বপ্ন ও সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুদায়িত্ব যে সহযোদ্ধাদের কাঁধে ছিল, তারা আদর্শচ্যুত হয়েছে বহু আগেই। ফলে নূর হোসেন কেবল ছবি আর দিবস পালনের আনুষ্ঠানিকতায় আটকে আছেন বছরের পর বছর। নূর হোসেনের মতোই কী আবু সাঈদ ছবি আর আনুষ্ঠানিকতায় আটকে থাকবেন? বর্ষপূর্তির দোরগোড়ায় প্রশ্নটি অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে হয়তো। হয়তো বা অনেকেই এর মাঝে অনুভব করছেন স্বপ্ন ভঙ্গের যাতনা। বৈষম্যহীন যে সমাজের স্বপ্ন বুকে নিয়ে বারুদ বিছানো রাস্তায় আবু সাঈদ নেমে এসেছিলেন, তা এখনো অধরা। সেই রাস্তায় রাষ্ট্রকাঠামো কতটা এগিয়েছে তাও দৃশ্যমান নয়। যদিও এত অল্প সময়ে উপসংহার টানা যায় না। কিন্তু অতীতের দিকে ফিরে তাকালে খানিকটা আশঙ্কা উঁকি দেয়।
তারুণ্যের জোয়ারে ভেসে আসা মুক্তির কাফেলা কেন বারবার দিক হারায়, সেই তত্ত্বতালাশ বুদ্ধিবৃত্তিক মহল থেকে করা হয়নি কখনোই। যাদের এই গুরুদায়িত্ব কাঁধে এগিয়ে যাওয়ার তাড়না ছিল ভীষণ-রাজনীতির গুপ্ত চোরাবালিতে ক্রমেই হারিয়ে গেছেন তারা। কিন্তু তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ভেসে বিজয়ের জয়গান কণ্ঠে যে কাফেলা ‘বদলে দেওয়া’র বার্তা নিয়ে কাক্সিক্ষত মঞ্জিলের পথ ধরেছিল-নূর হোসেন ও আবু সাঈদরা ছিলেন সেই কাফেলার সম্মুখ সারিতে।