Logo
×

Follow Us

প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

ডাকসু কি জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৫৯

ডাকসু কি জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে

ভোট দেওয়ার পর আঙ্গুলে অমোচনীয় কালি লাগিয়ে দিচ্ছে নির্বাচন কর্মকর্তা। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হয়ে গেল। ছাত্রশিবির পেয়েছে অভাবনীয় জয়। আর ছাত্রদলের পরাজয় অপ্রত্যাশিত। তবে জাতীয় নির্বাচনে এই নির্বাচন কেমন প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে মত দিয়েছেন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের কয়েকজন। অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সরব থাকলেও ডাকসুর ভোট উত্তাপ ছড়িয়েছে ক্যাম্পাসের বাইরেও।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ

অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক ড. মাহ্বুব উল্লাহ্

অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক ড. মাহ্বুব উল্লাহ্ বলেন, ছাত্রশিবির চমৎকারভাবে, গোছালো ও সুচারুরূপে তাদের রাজনীতিটা হাজির করতে পেরেছে। শিক্ষার্থীদের মাঝেও খুব গভীরভাবে পৌঁছাতে পেরেছে। এটিই তাদের বিজয়ের কারণ। 

প্রতিপক্ষরা পিছিয়ে পড়েছে। কারণ তারা সাধারণ ছাত্রদের থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। এটা বড় কারণ। এখনকার রাজনৈতিক যে অবস্থা সেটিও ডাকসু নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। একটি বিষয় লক্ষণীয়, ছাত্রশিবির বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেছে। এটা থেকে বোঝা যায়, এখানে ব্যক্তিগত ইমেজও কাজ করেছে।

ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলে দেখলাম, পাঁচ হাজারের ঘরে ভোট রয়েছে যাদের, তাদের পাশে সমর্থক আছে। যেসব ছাত্রসংগঠনের ভোট কম, তারা যদি ভবিষ্যতে ভালো করতে চায়, 

তবে তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রুচি পরিবর্তন করতে হবে। সৌন্দর্য স্বাধীনতা এগুলোও বাড়াতে হবে। ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে গিয়ে বেয়াদবি করাটা মোটেও কাম্য নয়। তাদের কালচারে পরিবর্তন আনতে হবে। 

ছাত্রশিবিরের অতীত ঐতিহ্য হচ্ছে সহনশীল না হওয়া এবং অন্যদের ওপরে নিষ্ঠুর আচরণ করা। সেই অবস্থা থেকে তাকে সরে আসতে হবে। সবাইকে সমভাবে গ্রহণ করতে হবে। কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা চলবে না। নারীদের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। 

ছাত্রশিবিরের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের এখনো ভয় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতে তারা সহনশীল ছিল না। অনেক সময় নিষ্ঠুর আচরণ করত। এখন তারা আশ্বস্ত করেছে এ রকম কিছু করবে না। সবার প্রতি সহনশীল থাকবে। এইবার জুলাই অভ্যুত্থানের পর তারা মোটামুটি স্বাধীন আচরণ করেছে। এইটা তাদের ওপর আস্থা আনতে সহায়তা করেছে। যেহেতু তারা এক ধরনের ক্ষমতা পেয়েছে-এ কারণে যদি তাদের মধ্যে দম্ভ দেখা দেয় তবে তা বিপজ্জনক হবে এবং তাদের সমর্থন কমে যাবে।

ছাত্রসংগঠন আমিও করেছি। কোন ছাত্রটা পরীক্ষা দিচ্ছে না, কার প্রস্তুতি কম এগুলো খেয়াল রাখতাম। অন্যান্য বিষয় তো বটেই, বিশেষভাবে খেয়াল রাখতাম লেখাপড়ার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলতে হয়, ছাত্রদলের মধ্যে লেখাপড়ার সংস্কৃতি কতটা আছে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। এটা তো একটা দিক। তারপর আরো বহু ব্যাপার আছে।

জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপির যে অবস্থা, সেই অবস্থানও এই রেজাল্টকে মনে হয় প্রভাবিত করেছে। এখন ভেবে দেখতে হবে; কোন কোন অবস্থানগুলো বিএনপির জনসমর্থন হারানোর ব্যাপারে সহায়তা করেছে। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপি ইজ ভেরি মাচ কর্নার। সেটার জবাব বিএনপি দিতে পারছে না। বিএনপির যে মিডিয়া সেল আছে তারাও দিতে পারছে না। সোশ্যাল মিডিয়া এখন একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। মানুষ কিন্তু দেখে কে কি বলল না বলল, কে কি পোস্ট দিল, কে কি মত প্রকাশ করল। এতে তো কিছুটা প্রভাব সৃষ্টি হয়। আর এর মধ্যে যেসব মিথ্যা তা তো না। এখন জনগণ অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। পাঠকরাও সচেতন। মানুষ এখন নতুন রাজনীতি দেখতে চায়।

ডাকসুর প্রথম ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

পুনরায় নির্বাচনের দাবি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের

সিপিবির সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর প্রথম ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি বলেন, “নির্বাচনে শিবির জিতে আসে নাই তো, অনেক অভিযোগ আছে, গুরুতর অভিযোগ।”

তার দাবি, ছাত্ররা যে ভোট দিয়েছে, ফলাফলে তার প্রতিফলক নেই। 

তিনি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করে পুনরায় ভোট গণনার বা নতুন নির্বাচনের দাবি জানান। সেলিম বলেন, “এই অভিযোগগুলোর সন্ধান করা দরকার এবং এটা সংশোধনের প্রয়োজন হলে আবার রিকাউন্টিং করা হোক মিনিমাম কিংবা রি পোলিং করা হোক।”

সেলিম সতর্ক করে আরও বলেন, “এইটা যদি মানুষের ভিতরে সন্দেহ থাকে যে এইখানে ঠিকমতো নির্বাচন হয়নি, তাহলে এমনিতেই নির্বাচন সম্পর্কে মানুষের অবিশ্বাস, সংশয় সেটা জাতীয় নির্বাচন সামনে আসছে, সেখানে সেটা আরও ঘনীভূত হবে।”

তিনি উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, “নিয়াজ ভাই যে ভিসি, তার সম্পর্কে প্রথম থেকেই একটা অভিযোগ, পুরো প্রশাসনে জামায়াতের লোক দিয়ে ভরে গেছে।”

শিবিরের পরিবর্তনকে তিনি পশ্চাৎমুখী আখ্যা দিয়ে বলেন, “ওরা সংস্কারের নামে, পরিবর্তনের নামে আমাদের দেশকে মধ্যযুগে নিয়ে যেতে চায়।”

ডাকসুর দুইবারের ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘আমি দুইবার ডাকসুর ভিপি হয়েছি। খুব পপুলার ছিলাম ছাত্রদের মধ্যে। কিন্তু আমার পলিটিক্যাল পার্টি হয়নি। আমি তো ক্ষমতায় যাইনি। আমার পার্টি ক্ষমতায় যেতে পারিনি।’

ডাকসু নির্বাচন জাতীয় ভোটে প্রতিফলন করবে না উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না বলেন, ‘ডাকসুতে জিতলেই যে তারা জাতীয় রাজনীতিতে বিরাট কিছু করে ফেলবে, সে রকম নয়। কিন্তু তার পরও মনে করে দেখেন, আমার সেই সংগঠন ছিল না। কিন্তু এবার যারা জিতেছেন তাদের তো সংগঠন আছে। তারা সেটাকে ট্রান্সলেট করতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘যে চিন্তার ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীরা ভোট দিল, এরপর তো রাকসু হবে, জাকসু হবে, চাকসু হবে, কিসের প্রতিফলন দেখবেন, ভাবেন। আমরা কী এ রকম কোনো কাজ করেছি? আপনারা, আমি, আমরা সবাই মিলে বলছি ওরা গুপ্ত রাজনীতি করেছে। খুবই অন্যায়।’

‘১৫-১৬ বছর ধরে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, এই দেশে যে একটা ভালো ভোট হতে পারে, শেষ পর্যন্ত ভোট শেষ হতে পারে-এ রকম ধারণাই মানুষ করতে পারেনি। মানুষই আমাদের কাছে বলছিল, শেখ হাসিনাকে কেউ সরাতে পারবে না। সেই শেখ হাসিনাই চলে গেছে।’

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘গতকালকে যে নির্বাচন হয়েছে যদি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন আর গোলমাল শুরু না হয় তাহলে মানুষ মনে করবে ভালো নির্বাচন তো সম্ভব। সেটা ছাত্ররা দেখাবে। আমি এই জন্যে তাদের (ছাত্রদের) ধন্যবাদ দেই। জানি এই নির্বাচনের ফলাফল অনেকের জন্য রীতিমতো শকিং। অনেকেই এ রকম ধারণাই করতে পারেনি। কেউ কেউ অবশ্য বলছে যে এটার মধ্যে জোচ্চুরি, জালিয়াতি ইত্যাদি আছে। কিন্তু তারপর ফলাফল ঘোষণা হয়েছে।’

মান্না বলেন, ‘আমি কিন্তু কিচ্ছু বুঝতে পারিনি। আমি দুজন মানুষকে পেয়েছি। একজন হচ্ছেন আমার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। উনি গতকাল সন্ধ্যার সময় আমাকে বলেছেন শিবির জিতবে। আমার বিশ্বাসই হতে চায়নি। মেয়েরা ভোট দেবে? ওরা কপালে টিপ নিতে দেয় না, সুন্দরভাবে বেরোতে দেয় না, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে দেয় না, ওদের কেন ভোট দেবে? উনি বলতেন, না ওদেরই ভোট দেবে। তখন আমার মনে হয়েছিল আমি তো চাকসুরও জিএস ছিলাম। আমার পরে চাকসুতে ভিপিতে জিতেছিলেন জসিম। উনি গেছেন ভোটের আগে লেডিজ হলে। সব মেয়েরা ঘিরে ধরেছে। ভাই আপনারা নাকি আমাদের বোরকা পড়তে বাধ্য করবেন? আমাদের মাথায় টিপ দিতে দেবেন না। সন্ধ্যার পরে বেরোতে যেতে দেবেন না। উনি কথা বলেছিলেন অনেকক্ষণ বসে বসে তাদের সঙ্গে। এরপর মেয়েরা নাকি তার কথায় কনভেন্স হয়ে তাকে ভোট দিয়েছিল।’

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, ‘মিলিয়ে দেখেন এই গেস্ট রুম কালচার, বড় ভাইদের সালাম করা, প্রোটোকল দেওয়া, ভর্তি পরীক্ষা না হলেও তার পরও ভর্তি হতে পারবে, পরীক্ষা দিতে না দেওয়া। এসব দেখে অপমানিত ছাত্রসমাজ মনে করেছে এই জীবনের মধ্যে আমরা সাহস দেখাব। চব্বিশে এত বড় সাহস কোথা থেকে এলো? সব রাজনৈতিক দলগুলো একবারও সাহস দেখাতে পারেনি। ঘুরে দাঁড়ায়নি। বিশাল সমাবেশ হবে, সরকার (হাসিনা সরকার) বলেছে করতে দেব না।’

‘এই প্রজন্ম এক বছর পরে মনে করছে, এই দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি আমরা দেখতে চাই না। এই যে মিথ্যাচারের রাজনীতি, এই যে এক বছর যেটা দেখলাম চাঁদাবাজি, দখলদারির রাজনীতি এবং ক্ষমতায় যাবার আগেই ক্ষমতায়িত হয়ে গেছে-এমন হাবভাব করার এই রাজনীতি দেখতে চায় না। অতএব তারা নতুন কিছু করতে চায়। ঘটনাটা এটাই ঘটল।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘আমি তো দেখছি গুপ্ত রাজনীতি করে তারা (শিবির) সংগঠিত থেকেছে। ওরা আওয়ামী লীগের মধ্যে ঢুকেছে, ছাত্রলীগের মধ্যে ঢুকেছে, গালাগালি করছে, মামলা করছে, কিন্তু ওরা মনে করছে এভাবেই বেঁচে থেকে লড়াই করব। কারণ ওইখানে থাকবার পরে ফিরে আবার তার জায়গায় এসেছে এবং নির্বাচন করে জিতেছে। রাজনীতি একেবারে ওই রকম নয়। তালি বাজাতে বাজাতে, বগল বাজাতে বাজাতে ক্ষমতায় চলে যাব তারপর লুটপাট করব। খুব সুন্দর একটা জীবন পেয়ে যাব। এ রকম পাওয়া যায় না। রাজনীতি একটা কঠিন সংগ্রামের বিষয়। রাজনীতি একটা বুদ্ধিবৃত্তির লড়াই। রাজনীতি একটা আন্তরিকতার প্রশ্ন। রাজনীতি একটা অঙ্গীকারের বিষয়। একেবারে হালকাভাবে নেওয়া যায় না। যারা হালকাভাবে নিয়েছিলেন তারা তিনটা থেকে প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন। তারা মনে করেছে, একটা গোলমাল লাগিয়ে দেব, একটা কিছু করব। কিন্তু সেটাও করতে পারেনি।’ মান্না বলেন, ‘আজকে দেখেন, লড়াই করছে সেই দুটি রাজনৈতিক দল, যারা কিছুদিন আগে একসঙ্গে ছিল। একসঙ্গে জোটের মধ্যে ছিল। কিন্তু কী কারণে বেরিয়ে গেল? তার কোনো ব্যাখ্যাও দেয় নাই। কেন আপনাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল? মতের পার্থক্য?’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন কী চাচ্ছি? খুব সাধারণভাবে বললে আমরা একটা ভালো নির্বাচন চাই। সংস্কারটা কেন? যাতে ভালো নির্বাচন হতে পারে, যেটা সবাই গ্রহণ করতে পারে।’

ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন

ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন

ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন মনে করেন, যেসব ছাত্রসংগঠন আগে হল দখল করেছে এবং ছাত্রসমাজকে একই কায়দায় জিম্মি করেছে তাদের নিয়ে সাধারণ ছাত্ররা খুব বিরক্ত। যদিও ছাত্রশিবিরও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখল করেছে। কিন্তু এখনকার ছাত্রদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা নেই বা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের দখলবাজি রাজনীতির অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের ভূমিকা ভিন্ন। এ ছাড়া প্রতিপক্ষরা হয়তো ছাত্রশিবিরের অতীতের বিষয়গুলো সেভাবে তুলেও ধরতে পারেনি। তবে প্রতিপক্ষরাও তো একই নৈরাজ্য করেছে, কাজেই সেটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য হতো। অর্থাৎ অতীতের ছাত্র সংগঠনগুলো যেভাবে হলে হলে আধিপত্য করেছে, তা সাধারণ শিক্ষার্থীর মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

এটা এবারের ডাকসু নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। এমনকি জাতীয় রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর এতদিনের ভূমিকাও এখানে প্রভাব ফেলেছে।

অতীতের অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষার্থীরা তুলনা করে দেখেছে ছাত্রশিবির অপেক্ষাকৃত নতুন। কাজেই যারা কখনোই ডাকসুতে আসেনি তাদের একটা সুযোগ দেওয়া যায়। তারা দেখতে চেয়েছে যে শিবির আসলেই কি দুর্নীতিমুক্ত। এমনকি ছাত্রশিবিরের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যে বিতর্কিত ভূমিকা সেটিও তারা উপেক্ষা করে ভোট দিয়েছে যে একটা সুযোগ দিয়ে দেখি। এ ছাড়া ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ছিল না। 

ডাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে আসা শিক্ষার্থীরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছিল। যেখানে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে না, সেখানে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান বড়ই হয়। আমার ধারণা ছিল যে মিশ্র ফলাফল হবে। কিন্তু আসলে যারা ভোট দিয়েছে, তার সবাই একটা লক্ষ্য ঠিক করেই এসেছে। এ জন্য ব্যবধানটা অনেক বড় হয়ে গেছে।

জাতির স্পর্শকাতর বিষয় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরে ছাত্রশিবির ভেবেছিল যে মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করবে। এ জন্য তারা টিএসসির মতো একটা জনবহুল জায়গায় যুদ্ধপরাধীসহ জামায়াতের সাবেক ও প্রয়াত নেতাদের ছবি দিয়ে একটা প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। কিন্তু আধঘণ্টার মধ্যে ব্যাপক প্রতিবাদ হলো। 

তাদের কিন্তু নৈতিকভাবে সেই প্রতিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস হয়নি। কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়, ছবিগুলো নামিয়ে নিতে। এই বিষয়টি যদি তারা উপলব্ধি করতে পারে তাহলে ভালো। তারা যদি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিংবা মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের নিয়ে অপমানজনক কোনো কার্যকলাপ করে তাহলে কিন্তু পুরো ছাত্রসমাজ তাদের বিরুদ্ধে এক হয়ে যাবে। এতে তাদের পক্ষে ডাকসু চালানো তো দূরের কথা, সংগঠন চালানো দায় হয়ে যাবে। কাজেই জাতির যে গৌরবের জায়গা সেগুলো নিয়ে যেন অমর্যাদা করার সাহস না পায় তারা। তাদের অবশ্যই শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ-এসব বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এগুলো অবমাননা করা বা উপেক্ষা করে ডাকসু চালাতে পারবে কি না, এটা দেখার বিষয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫