Logo
×

Follow Us

প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

১৭০০ মামলার মধ্যে ৫৫টির চার্জশিট, ১৩৬ জনকে দায়মুক্তি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৭

১৭০০ মামলার মধ্যে ৫৫টির চার্জশিট, ১৩৬ জনকে দায়মুক্তি

পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন আইজিপি বাহারুল আলম

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার সংখ্যা ১৭৬০টি মামলার মধ্যে মাত্র ৫৫টি মামলায় চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। এই ৫৫টি মামলার বাইরে বাকি সব মামলার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।

আইনজীবী জানান, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩-এ ধারা অনুযায়ী পুলিশ রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ১৩৬ জনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। আরও ২৩৬ জনের আবেদন পুলিশ বিবেচনা করছে। যাদের পুলিশ নিরীহ ও নির্দোষ মনে করছে।

মঙ্গলবার সকালে পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি এ কথা বলেন।

১৭৬০ মামলার মধ্যে হত্যা মামলা ৭৬৬টি

তিনি বলেন, “বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মোট ১৭৬০টি মামলার মধ্যে ৭৬৬টি হত্যা মামলা। অন্যান্য ধারার মামলার সংখ্যা ৯৭৪। 

চার্জশিট দেওয়া ৫৫ টির মধ্যে ১৮টি হত্যা মামলায় ১৯৪১ জনকে অভিযুক্ত করে পুলিশ চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ৩৭টি মামলায় ২ হাজার ১৮৫ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

আইজিপি বলেন, “চার্জশিট দেওয়া ১৮টি হত্যা মামলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, শেরপুর, ফেনী, চাঁদপুর, নোয়াখালী, পাবনা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকার। এছাড়া অন্যান্য ধারার ৩৭ মামলা বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, নরসিংদী ও বরগুনা জেলায়। 

পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মামলা এসআই বা ইন্সপেক্টররাই তদন্ত করছেন না, সিনিয়র কর্মকর্তারাও সুপারভাইস ও তদন্ত করছেন।”

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিথ্যা মামলা, নিরীহ মানুষকে আসামি করার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আইনত আমাদের যাচাই-বাছাই কোনো সুযোগ নেই। আইন আমাদের সেই অধিকার দেয়নি তবে বর্তমান সরকার সিআরপিসির কিছু সংশোধন চেষ্টা করছেন। যেখানে মামলার আগে যাচাই বাছাই ক্ষমতা দেওয়া যায় কিনা সেটি দেখা হচ্ছে।”

আইজিপি বলেন, “মিথ্যা মামলা অথবা নিরীহ লোককে মামলায় আসামি করা; এটির জন্য প্রতিকারের বিষয়টি এই সরকার অলরেডি ঘোষণা করেছে।” 

আমরা ফেরেশতা না

মামলা বাণিজ্য ও হয়রানির ঘটনা প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, “স্পেসিফিকালি পুলিশের লোক যদি জড়িত থাকে, থাকতে পারে। আমি অস্বীকার করি না। ভালো মন্দ মিলেই তো আমরা সবাই। আমরা সবাই ফেরেশতা না। অবশ্যই আমার নলেজে যদি কোনোভাবে আসে আমরা এটির বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেব।”

পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, “এমনিতে সাধারণ লোকের করা মামলাতেই মানুষ অতিষ্ঠ। সেখানে পুলিশও যদি এই সবে ঢুকে যায় তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?”

আরেক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, “প্রশ্ন একটা আসছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অনেক ইনোসেন্ট লোক আসামি হয়েছে। যেন কোনো নির্দোষ লোক যেন সমস্যায় না পড়ে এটির ব্যাপারে পুলিশ হেড কোয়ার্টার অত্যন্ত সতর্ক।”

তিনি বলেন, “কোনো ওসি যদি অসহায় বোধ করেন তাহলে সিনিয়র অফিসারদের জানান অথবা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স পর্যন্ত জানাক। এই অসহায়তের বিষয়টি আমাদের নলেজে এলে কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নেব। দরকার হলে প্রেশার কমিয়ে অন্য আরেকটি সংস্থায় মামলা দিয়ে দিতে পারি।”

বৈষম্য বিরোধী মামলার ঘটনায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আপনাদের কাছে আছে কিনা এবং এ পর্যন্ত কতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, “আমাদের কাছে সরাসরি এরকম অভিযোগ আসেনি। কিছু থানায় ওসি বদলি করা হয়েছে, এসআইদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ইউনিট তারা তাদের ক্যাপাসিট অনুসারে এটি করছে।”

মামলার বদলে অভিযোগ নেওয়ার এখতিয়ার পুলিশের নেই

পুলিশের কাছে মামলা দিতে গেলে বলে যে একটি অভিযোগ দিয়ে যান। সেই অভিযোগটা থানায় কাগজে রেকর্ডে এন্ট্রি হয় না। সেই কাগজটা একজন ইন্সপেক্টরকে দেওয়া হয়। আপনি ১৫/২০ দিন পর এসে দেখবেন ওই কাগজটি বাস্কেটে যায়। ওই লোক আর খোঁজখবর করে না। এখন এই যে মামলা রেকর্ড না করে অভিযোগ নিচ্ছেন এবং সেই অভিযোগ তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ করছেন এই ক্ষমতাটা বাংলাদেশের প্রচলিত কোন আইনে ওসিকে দেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, “এটি দেওয়া হয়নি। এটি অন্যায়। এরকম হয়ে থাকলে আমরা জানলে ব্যবস্থা নেব।”

তিনি বলেন, “এ রকম বেশ কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় করেছি। এই অভিযোগে যে, উনি অভিযোগ পেয়ে সেটি মামলা না করে প্রাথমিক অনুসন্ধানের জন্য সাব ইন্সপেক্টরকে দিয়ে দিয়েছেন।” 

মিথ্যা মামলা হলে ১৭৩ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার মিলবে

সরকার ফৌজদারি কার্যবিধিতে ১৭৩ ধারার সঙ্গে ১৭৩ (ক) উপধারা যোগ করেছে। এই ধারা অনুযায়ী যারা নিজেকে নির্দোষ, নিরীহ মনে করেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার নির্দোষ হিসেবে রিপোর্ট দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন পাঠাতে পারেন। আদালত সেটি গ্রহণ করে আসামিকে চার্জশিট হওয়ার আগেই মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন। আপনারা দেখেছেন এক বছরে মাত্র আমরা ৫৫ টা দিতে পেরেছি, এখন বাকি সব মামলার চার্জশিট দিতে কত বছর লাগে আল্লাহই জানে।

তিনি বলেন, “নিরীহ নির্দোষদের হয়রানি থেকে বাঁচানোর জন্য সরকার এই বিধানটি করেছে। এখন যে কেউ পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করতে পারেন যে, আমি জড়িত ছিলাম না। সমস্ত বিষয় বিচার-বিবেচনা করে দায় থেকে মুক্তি দিয়ে এসপি তাদের এই কেসগুলো আলাদা করে বিবেচনা করে আদালতে ইন্টারিম রিপোর্ট দিতে পারেন।”

আইজিপি বলেন, আমরা এরইমধ্যে ১৭৩- এ ধারা অনুযায়ী ১৩৬ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতে পেরেছি। আরও ২৩৬ জনের আবেদন বিবেচনা করছি।”

আইজিপি বলেন, “যারা নিরীহ, নির্দোষ তাদের প্রতি আমার আবেদন। সবাই আবেদন করুন। তাদের কেসগুলো ১৭৩  অনুযায়ী বিবেচনা করে আদালতে পাঠিয়ে দেব। যেন তারা এই হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।”

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫