১ হাজার কন্টেইনার না নিয়েই বন্দর ছাড়ল ৬ বিদেশি জাহাজ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:০৪
-68f4d3cdb9a10.jpg)
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার।
চট্টগ্রাম থেকে ১ হাজার ৬৫টি কন্টেইনার বোঝাই না করেই বন্দর ছেড়েছে বিদেশি ছয় জাহাজ। সময়মতো কন্টেইনারগুলো বন্দরে না পৌঁছানোর কারণেই এই ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম বন্দরে অতিরিক্ত মাশুল বৃদ্ধির কারণে ও ভারী গাড়িগুলোর বন্দরে প্রবেশ ফি ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ২৩০ টাকা করার প্রতিবাদে চলছে কর্মবিরতি।
আর এজন্য সঠিক সময়ে বন্দরে পৌঁছেনি কন্টেইনার। এতে আন্তর্জাতিক ট্রান্সশিপমেন্ট শিডিউল ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মাশুল বৃদ্ধির ঘটনাকে ঘিরে বন্দরকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা, অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমেও। চার ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করে সিঅ্যান্ডএফ মালিক ও শ্রমিকরাও।
রবিবার ও শনিবার বিভিন্ন সময়ে জাহাজগুলো কন্টেইনার না নিয়েই চলে যায় বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন।
সিএন্ডএফ এজেন্টদের কর্মবিরতি ও পরিবহন মালিকদের যান চলাচল বন্ধের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ১ হাজার একক কন্টেইনার রপ্তানি পণ্য বোঝাই না করেই বন্দর ছেড়েছে ৬টি জাহাজ।
শনিবার ও রবিবার সকালের বিভিন্ন সময় এসব জাহাজ জেটি ছেড়ে চলে যায়।
ছেড়ে যাওয়া ছয় জাহাজ হলো- জাহাজগুলো হচ্ছে এক্সপ্রেস লোতসে, এমএসসি কাভায়া-২, সোল রেসিলেন্স, ইন্টারেশিয়া ফরোয়ার্ড, আমালফাই বে এবং এমএসসি সাইজিং। চট্টগ্রাম ৬টি জেটি থেকে জাহাজগুলো বিভিন্ন দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কন্টেইনারগুলো সিঙ্গাপুর, চীন, শ্রীলঙ্কা, স্কটল্যান্ডে যাওয়ার কথা ছিল।
বন্দরে মাশুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে দুই দিন ধরে পণ্য ও কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ রেখেছে ভারি যানবাহনের মালিকেরা। একই সঙ্গে রবিবার সকাল থেকে ৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছে সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম।
এ বিষয়ে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, কন্টেইনারগুলো বন্দরে যথাসময়ে না পৌঁছায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।
পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বন্দরের মাদার ভ্যাসেলের শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কাও তৈরি হবে বলেও মনে করেন তিনি।
৫৭ টাকা থেকে একলাফে ২৩০ টাকা
রপ্তানিযোগ্য বিভিন্ন মালামাল কন্টেইনার করে বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন প্রাইম মুভার, ট্রেইলার, লং ভ্যাহিক্যালের চালকেরা। যেখানে গত সপ্তাহেও বন্দরে প্রবেশের ফি ছিল মাত্র ৫৭ টাকা। সেখানে সপ্তাহের ব্যবধানেই ফি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩০ টাকাতে।
একলাফে কয়েকগুণ ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে ১৪ অক্টোবর থেকেই গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছেন বন্দর কেন্দ্রিক পরিবহন মালিকরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন জানান, ১৪ অক্টোবর রাত থেকেই আমাদের ট্রেইলার চলাচল করছে না। গেইট পাসের ফি বৃদ্ধির ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও স্টেক হোল্ডাররা নিজ নিজ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে।
ভারি পরিবহনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে যান চলাচল বন্ধ রেখেছে আন্তঃজেলা ট্রাক মালিক সমিতি। তারাও প্রবেশ ফি কমানোর দাবিতে বন্দরে ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছেন।
সকাল থেকে কর্মবিরতিতে সিআ্যান্ডএফ
নতুন নিয়মে মাশুলের হার কমানোর দাবিতে সকাল থেকেই কর্মবিরতির কর্মসূচি চালিয়েছেন সিঅ্যান্ডএফ মালিক ও শ্রমিকরা।
রবিবার সকাল ৯টা থেকে চার ঘণ্টার জন্য কর্মবিরতি পালন করেন তারা।
বন্দর বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি
অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক মাশুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে নানান সেমিনার ও সভা করছেন বন্দর কেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না করা হলে বন্দরকে বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী।
শনিবার নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্যকালে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
বন্দর সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত না নেওয়া পর্যন্ত নতুন মাশুল স্থগিত করার আবেদন জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়িরা।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লুতে মাশুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে এক সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের ব্যানারে আয়োজিত এই সভাতেও বন্দরের নতুন মাশুল বন্ধের আহ্বান জানান ব্যবসায়ী নেতারা।
বন্দর স্বাভাবিক, বলছেন বন্দর সচিব
বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং ও অপারেশনাল কার্যক্রম একদম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক।
তিনি জানান, আমরা খবর পেয়েছি রাস্তায় বন্দরগামি বিভিন্ন গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে।
তবে দ্রুতই সকল পক্ষের সাথে বসে এই সমস্যা সমাধানে কথা জানান তিনি।