কমলাপুরে মেট্রোরেল: ‘দ্বিগুণ মূল্যে’ কাজ পেল ভারতীয় কোম্পানি
নিশাত বিজয়
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৫৭
মেট্রোরেল মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার প্রকল্পে বিদ্যুৎযান্ত্রিক ব্যবস্থা স্থাপনে ভারতীয় একটি কোম্পানি প্রাথমিক বরাদ্দের ৭০ শতাংশ বেশি ব্যয়ে কাজ পেয়েছে।
২০২০–২১ অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) এই খাতে ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কিন্তু ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসন অ্যান্ড টুব্রুকে কাজ দেওয়া হয়েছে ৪৬৫ কোটি টাকায়।
মেট্রোরেল বর্ধিতকরণের এই কাজ ইতিমধ্যে নির্ধারিত সময়সীমা মানতে ব্যর্থ হয়েছে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নানা জটিলতায় নতুন সময়সীমা ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
তবে ডিএমটিসিএল এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান দাবি করেছেন, তারা আলোচনার মাধ্যমে খরচ কমাতে পেরেছেন। যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, ভারতীয় কোম্পানি আরও বেশি টাকা দাবি করেছিল; আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে ব্যয় কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
দরপত্রের শুরুতে ঠিকাদারের চাওয়া ছিল প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা। প্রাক্কলনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি অর্থ দাবি করায় অন্তর্বর্তী সরকার এত বেশি দরে কাজ করাতে আগ্রহী ছিল না। কিন্তু ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং প্রকল্পে অর্থায়নকারী সংস্থা জাইকার সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী তাদের ঠিকাদার দিয়েই কাজটি করাতে হচ্ছে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, লারসন অ্যান্ড টুব্রু বেশি টাকা চাওয়ার পর সরকার ৪০০ কোটি টাকায় কাজটি করার প্রস্তাব দেয়। তবে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হার, কাঁচামাল সরবরাহে জটিলতা, পরিবহন খরচ—সব মিলিয়ে নির্ধারিত বরাদ্দে কাজ করতে রাজি হচ্ছিল না তারা। দর–কষাকষির এক পর্যায়ে দুই পক্ষ ৪৬৫ কোটি টাকায় কাজটি করাতে একমত হয়।
সদ্য বিদায়ী প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, “২০২২ সালের ডলারের দর অনুযায়ী ২৭৪ কোটি টাকায় করার কথা ছিল। কিন্তু ডলারমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ৪৬৫ কোটি টাকায় করতে হচ্ছে।”
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ দর–কষাকষিতে মূল্য কমিয়ে আনাকে সাফল্য হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, “আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যা চেয়েছে তার থেকে ৩০–৪০ শতাংশ কম মূল্যে কাজ করাতে রাজি করতে পেরেছি।”
এই ৪৬৫ কোটি টাকায় লাইনের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, স্টেশনের লিফট, এসকেলেটর, ট্রেনের দরজার সঙ্গে মিলিয়ে দরজা খোলার গেট, মনিটর, সিসি ক্যামেরা, সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশনের কাজ করা হবে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে সরকারের খরচ হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। আর মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মাত্র ১ দশমিক ৬ কিলোমিটারের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের তুলনায় এই ছোট অংশেই খরচ প্রায় অর্ধেক।
তবে যাত্রীসুবিধা ও কমলাপুর থেকে যাত্রী পাওয়ার সম্ভাবনাই সরকারকে এই পথে হাঁটতে উৎসাহী করেছে। ডিএমটিসিএল আশা করছে, কমলাপুর মেট্রো স্টেশন চালু হলে বছরে অন্তত আরও ১২৬ কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে।
মতিঝিল থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত অধিকাংশ পিলারের কাজ শেষের পথে। তবে ভায়াডাক্টের কাজ এখনও শেষ হয়নি—দুই–একটি করে বসানো শুরু হয়েছে। প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, এ প্রকল্পের নির্মাণকাজের অগ্রগতি বর্তমানে প্রায় ৫৯ শতাংশের কাছাকাছি।
