Logo
×

Follow Us

প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

মেয়াদোত্তীর্ণ বাস : ঢাকার বায়ুদূষণের উন্নতি হবে কীভাবে?

Icon

নিশাত বিজয়

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৩৭

মেয়াদোত্তীর্ণ বাস : ঢাকার বায়ুদূষণের উন্নতি হবে কীভাবে?

রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের যানজটের পরে বায়ুদূষণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ঢাকার রাস্তায় বায়ুদূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে অন্যতম পুরোনো বাসের কালো ধোঁয়া।

অথচ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) আইন করেও বাসমালিকদের দাবির মুখে বারবার স্থগিত করেছে পুরোনো গাড়ি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকার বায়ুতে মারাত্মক মাত্রায় বিষাক্ত কণা বিদ্যমান। এর বড় একটি উৎস হলো মেয়াদোত্তীর্ণ ও পুরোনো বাস।

ঢাকার রাস্তায় এখনো হাজার হাজার পুরোনো বাস থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় থাকে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও পার্টিকুলেট ম্যাটার (চগ২.৫), যা সরাসরি শ্বাসযন্ত্র ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার মোট বায়ুদূষণের প্রায় ৪০ শতাংশই আসে যানবাহন থেকে।

আইন আছে, প্রয়োগ নেই

ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। এর মধ্যে গণপরিবহনের বড় অংশ এখনো পুরোনো ডিজেলচালিত বাস।

পরিবেশবিদদের মতে, নতুন ইউরো-৪ বা ইউরো-৫ মানের গাড়ি পুরোনো গাড়ির তুলনায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কম দূষণ ছড়ায়। 

অথচ ঢাকায় আধুনিক মানের কিছু বাস যুক্ত হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়িগুলো রাস্তায় রয়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে দূষণ কমছে না।

২০১৮ সালে বিআরটিএ পুরোনো গাড়ি সরানোর জন্য নীতি প্রণয়ন করে। নিয়ম অনুযায়ী, ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস-মিনিবাস ও ২৫ বছরের বেশি পুরোনো ট্রাক-কোচ চলাচল বন্ধ করার কথা। কিন্তু মালিকদের চাপ ও বিভিন্ন অজুহাতে অভিযান বারবার স্থগিত হয়েছে। ফলে পুরোনো গাড়িগুলোই রাস্তায় থেকে গেছে।

এক পরিবেশবিদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এটা খোলাখুলি দোষ স্বীকার যে বাস মালিকদের চাপেই পুরোনো গাড়ি সরানো যাচ্ছে না। অথচ দূষণের সবচেয়ে বড় উৎস এগুলোই।’

বিআরটিএর দাবি অভিযান চলছে, রাস্তায় নেই কোনো প্রভাব

যাত্রীদের অভিযোগ, সরকারের ঘোষিত অভিযান সংবাদে থাকে, কিন্তু তার বাস্তব প্রভাব রাস্তায় দেখা যায় না। পুরোনো বাসগুলো শুধু দূষণই ছড়াচ্ছে না, দুর্ঘটনাও বাড়াচ্ছে।

মোহাম্মদপুরের কর্মজীবী নারী রুমানা সুলতানা বলেন, ‘পুরোনো বাসের কালো ধোঁয়া এতটাই বেশি যে, পেছনে হাঁটলেই নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না। প্রতিদিনই চোখ জ্বালা করে।’

অফিসগামী বেসরকারি চাকরিজীবী রাফি রহমান বলেন, ‘যে বাসগুলো দেখলেই বোঝা যায় ওগুলো স্ক্র্যাপ হওয়া উচিত, সেগুলোই রাস্তায় চলছে। সরকার শুধু অভিযান দেখাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই বদলায়নি।’

বিআরটিএ উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) হেমায়েত উদ্দিন দেশকাল নিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিন অভিযান চলছে একাধিক জায়গায়। যেমন-২২ অক্টোবর (বুধবার) ১৬টি গাড়ি ডাম্পিং করা হয়েছে। প্রতিদিনই এ রকম ডাম্পিং করা হচ্ছে।’

বিআরটিএ চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ দেশকাল নিউজকে বলেন, ‘আমরা বিআরটিএ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে ঢাকা শহরের তিনটি রুটে প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছি। এক এক দিন একেক জায়গায় অভিযান চলছে, আশা করছি এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

গাড়ি মালিকদের দাবি মানলে সরবে না মেয়াদোত্তীর্ণ বাস

অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নিয়ে গাড়ি মালিকদের দাবি মানলে সরবে না মেয়াদোত্তীর্ণ বাস।

বাসমালিকদের দাবি, সরকারের ২০ বছরের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল মানলে সারা দেশের বাসসেবা ব্যাপক হারে ব্যাহত হতে পারে। বাসমালিকদের সক্ষমতা নেই নতুন গাড়ি চালানো।

এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম দেশকাল নিউজকে বলেন, অর্থনৈতিক আয়ষ্কাল পার হলেই যে গাড়ি বায়ুদূষণ করে বিষয়টি ঠিক নয়। যদি কোনো গাড়ি কালো ধোঁয়া ছড়ায়, সেটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে তো আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সেগুলো ডাম্পিংয়ে পাঠাতে পারে এমনকি বাজেয়াপ্তও করতে পারে।

আইনে বলা হয়েছে ২০ বছর অর্থনৈতিক সীমা, আপনারা কি বাড়াতে চান-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই অর্থনৈতিক আয়ষ্কাল ২৫ বা ৩০ বছর যেন করা হয়। আমেরিকা বা ইউরোপের নিয়মানুযায়ী আমাদের সক্ষমতা নেই ২০ বছর পর পর গাড়ি পরিবর্তনের। যদি কোনো সমস্যা হয় মামলা দেবে, সেটা রিপেয়ার করে আবার রাস্তায় চলবে।’

বায়ুদূষণ রোধে কড়া আইনি সংস্কারের পথে সরকার

নগরীর বায়ুদূষণ ও পরিবহন ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে।

তিনি বলেন, ‘ঢাকায় বাসমালিকরা যেন সরকারের চেয়েও শক্তিশালী। এ জন্য তাদের সরকার পোষ মানাতে পারে না বা চায় না। রাজনৈতিক সরকারগুলো সাধারণত অর্থবান ও প্রভাবশালীদের বিপক্ষে যেতে চায় না, কিন্তু এই সরকারও কেন মেয়াদোত্তীর্ণ বাসগুলো সরাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না তা বোধগম্য নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘পুরোনো ও কালো ধোঁয়া ছাড়ে এমন বাসগুলোই ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম বড় উৎস। যদি সরকার সত্যিই পরিবেশ দূষণ রোধে আন্তরিক হতো, তবে এগুলো অনেক আগেই রাস্তাচ্যুত করা যেত। হয়তো সরকার এখনো এটিকে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার মনে করছে না। এ কারণেই নগরবাসীকে বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে হচ্ছে।’

যদিও বিআরটিএ দাবি করেছে, ঢাকা শহরের পরিবেশবান্ধব বাসব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার এরই মধ্যে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ দেশকাল নিউজকে বলেন, ‘সড়ক ও সেতু বিভাগের সচিব মহোদয়কে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি দুই মাসের মধ্যে আইন পর্যালোচনা করে ড্রাফট রিপোর্ট জমা দেবে। রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরই বোঝা যাবে কী পরিবর্তন আসছে। ড্রাফট মানেই আইন পরিবর্তন নয়। ড্রাফট উপস্থাপনের পরই আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত হবে।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫